শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

কোরবানির টাকায় মানবসেবা নয়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মুফতি সাদেকুর রহমান।।

ইসলাম আবেগপ্রবণ কোন ধর্মের নাম নয়। বরং ইসলাম হলো যুগোপযোগী বাস্তবমুখী এক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত প্রতিটি সেক্টরে রয়েছে ইসলামের দিক নির্দেশনা। ইসলাম ছাড়াছাড়ি এবং বাড়াবাড়ি কোনোটাকেই প্রশ্রয় দেয় না। সব ক্ষেত্রেই মধ্যম পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ করে।

কেউ বিপদগ্রস্ত হলে দুর্যোগে আক্রান্ত হলে সাহায্যের প্রয়োজন দেখা দিলে ইসলাম অবশ্যই তাকে সাহায্য করতে তার পাশে দাঁড়াতে বলে। কিন্তু এটা কখনো ইসলাম অনুমতি দেয় না যে একটি বিধান পালন করতে গিয়ে আরেকটি বিধানকে খাটো করা হবে আরেকটি বিধানের প্রতি উদাসীনতা ও অবহেলা প্রকাশ করা হবে।

কোরবানি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একটি অন্যতম বিধান; যার মাধ্যমে বান্দা তার মালিকের কাছে ত্যাগ-তিতিক্ষা, প্রেম ও ভালোবাসার এক চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে। এতে রয়েছে মানব জাতির ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মুসলিম সমাজে এক নতুন চঞ্চলতা ও প্রফুল্লতা সৃষ্টি হয় এবং বিত্তশালীরা কুরবানী করে এর গোস্ত নিজেরাও খায় এবং দুস্থ -গরিব ও অসহায় লোকদেরও দান করে। এভাবে তারা গরিবের মুখে হাসি ফোটায়।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমাদের সামনে পবিত্র ঈদুল আযহা অপেক্ষমান। অবশ্য এবারের ঈদুল আযহা একটু ভিন্ন পরিবেশে উদযাপিত হবে বলে মনে হচ্ছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে সেখানকার মানুষেরা অবর্ণনীয় কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তাই সেই বন্যার্তদের পাশে দাড়ানো আমাদের প্রত্যেক বিত্তবানদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। সুতরাং যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের আর্থিক ও শারীরিক সহায়তা দান করুন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন, যে মুসলমান অপর মুসলমানের একটি পেরেশানি দূর করে দিবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কেয়ামতের দিন তার থেকে বড় পেরেশানী দূর করে দেবেন। যে কোনো অভাবগ্রস্তের কষ্ট লাঘব করবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার কষ্ট লাঘব করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন করবেন। যে অপরের সাহায্য করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। -সহীহ মুসলিম

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। তার সাথে মিথ্যা বলবে না এবং তাকে বিপদে ছেড়ে আসবে না। -সহীহ মুসলিম

হযরত নোমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন ,মুমিনগণ পারস্পরিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি মানব দেহের ন্যায়, যার কোনো অংশ আক্রান্ত হলে পুরো দেহ ই আক্রান্ত হয়। -সহীহ ইবনে হিব্বান

তাই প্রতিটি মুসলিমের নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব হলো এই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো , আর্থিক ও শারীরিক সর্বপ্রকার সহায়তা প্রদান করা।

তবে এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, কুরবানী ও আল্লাহ পাকের একটি বিধান। এই বিধানও যথা সময়ে যথা নিয়মে পালন করতে হবে। মানবদেহের একটি অঙ্গের সমস্যা দূর করতে গিয়ে অপর অঙ্গের ক্ষতি করা যায় না। ঠিক তেমনি বন্যার্ত লোকদের সহায়তা করতে গিয়ে নিজের ওয়াজিব কুরবানী বাদ দেওয়া যাবে না। কেউ যদি নিজের ওয়াজিব কুরবানী না করে এর টাকা গরিব ও বন্যার্ত লোকদের দান করে দেয় তাহলে এটা আল্লাহর বিধান পালন হবে না। বরং তা হবে নিজের আবেগের বাস্তবায়ন। আবেগ বাস্তবায়নের নাম দ্বীন নয়। দ্বীন হল কখন আল্লাহর কি আদেশ বা নিষেধ তা জেনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতলানো পথে পালন করা।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কুরবানী করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করেনি সে যেন আমাদের ঈদগাহ উপস্থিত না হয়। -সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেন। প্রতিবছরই কুরবানি করেন। -সুনানে তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ

আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কুরবানীর দিন আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আর কোন অধিক প্রিয় আমল নেই। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। জমিনে রক্ত পড়ার পূর্বে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোরবানি করো। -সুনানে তিরমিজি, সুনানে ইবনে মাজা

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই কোরবানি কি? জবাবে তিনি বলেন, এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম এর সুন্নাত। তাঁরা বললেন, এতে আমাদের কি উপকারিতা রয়েছে? তিনি বললেন, পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি নেকি রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, দুম্বার প্রতিটি পশমর পরিবর্তে ও কি একটি করে নেকি রয়েছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। দুম্বার ও প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। -সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দিনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর ও যথাসময়ে ও যথানিয়মে কুরবানী করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ