আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো এক এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে সারাদেশে বন্যা উপদ্রুত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এ ছাড়া আসামের পানি নামতেও সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম এসব কথা জানান। এদিকে বাংলাদেশের আলেমরা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে বনার্তদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান করছেন। আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশণের চেয়ারম্যান শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে বাইরের মানুষের চেয়ে বন্যা দুর্গত অঞ্চলের লোকদের পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করা বেশি জরুরি। বাড়ি বা আসবাবপত্রের মায়া না করে সুযোগ থাকলে আপনার আশপাশের কাঁচাঘরের বাসিন্দাদেরকে নিজের দালানে তুলে নিন। ঘরে থাকা খাবার কষ্টে থাকা প্রতিবেশীদের সঙ্গে শেয়ার করুন। স্বার্থপরতার সীমানা ভেদ করে মানবতার কল্যাণে বেরিয়ে আসার সুবর্ণ সময় এটি। এ ধরনের ছোটখাট আমল কোনো ঈমানদারের জান্নাত নিশ্চিত করে দিতে পারে।
যারা এই কঠিন সময়কে সুযোগ মনে করে ৮০০ টাকার নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার দাবি করছে, তারা মানুষরূপী অমানুষ।আপনার জীবন সংকটাপন্ন মনে হলে তাদেরকে ন্যয্যমূল্যে সার্ভিস দিতে বল প্রয়োগ করতে পারেন। বা জোরপূর্বক নৌকা নিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারেন। অবশ্য জীবন বিপন্নের আংশকা না থাকলে এমনটি করা যাবে না।
বেঁচে থাকলে টাকা উপার্জনের সুযোগ বহু আসবে। কিন্তু জান্নাত এতো কাছে সব সময় আসে না। সুতরাং মানুষের কল্যাণে সর্বোচ্চ ত্যাগের স্বাক্ষর রাখুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা যারা মানুষের কল্যানে নিজেকে বেশি নিবেদিত রাখে। (তাবরানী ছাগীর)
যাঁরা দূরে আছেন, তাঁদেরও উচিত সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। বিশেষভাবে আশে-পাশের এলাকাগুলো থেকে নৌকা নিয়ে উদ্ধার কর্মে লিপ্ত হতে পারেন। এই মুহূর্তে এটার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। শুকনা খাবারসহ একান্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়েও হাজির হওয়া যেতে পারে। মহান আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ লিখেন, এই মুহুর্তে সিলেটের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাড়ানো আমাদের জীবনের সর্বোচ্চ মানবিক দায়িত্ব, ঈমানীতো বটেই। দৃশ্যগুলি দেখে আমি খেই হারিয়ে ফেলেছি। প্লিজ আপনারা পরামর্শ দিন আমাদের এই মুহুর্তে কি করা উচিত? কীভাবে কি করতে পারি আমরা? আসুন দোষারোপ আর বিভেদ ভুলে যে যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসি আমরা এই জাতীয় বিপর্যয়ে।
লেখক গবেষক মাওলানা এনামুল হক মাসউদ বলেন, সিলেটের বন্যার চলমান সময়টাতে এই হাদীসটি মনে রাখুন- যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব কোন বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভুত করবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাই এর সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন। (সহীহ মুসলিমঃ ৬৬০৮)
মাওলানা আতাউল করিম মাকসুদ লিখেন বন্যা দূর্গতদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত অনেক হুজুর নিজেরাও অসহায়, পানিবন্দি৷ চোখলজ্জায় তারা বলতেও পারছেন না, সইতেও পারছেন না৷ তাদের নিজেদের পরিবার নিয়ে ভাবাব ফুরসত পাচ্ছেন না, উম্মাহকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায়৷
তালাশ করে করে এমন কিছু মুহতারাম উলামায়ে কেরামের খেদমত করেছি কিছুটা আলহামদুলিল্লাহ৷ আপনারাও এবিষয়টা খেয়াল রাখবেন৷
এমনিতেও যারা দূর্দান্ত কাজ করছেন, তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য সামান্য কিছু পুরষ্কারও দেয়া যায়৷ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
লেখক কলামিস্ট গবেষক মাওলানা রশীদ জামিল লিখেছেন, বৃহত্তর সিলেটের মানুষগুলো এতটা অসহায় আগে কখনও হয়নি। বাড়িঘর, আসবাবপত্র, পশুপাখির কথা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে খাবারের কথাও। পায়ের নিচে একটুকরো শুকনো মাটিই এখন তাঁদের শেষ চাওয়া। ‘শেষ চাওয়া’ বলতে হচ্ছে কারণ, আল্লাহপাক খাস রহমত দ্বারা রক্ষা না করলে সারি সারি লাশ হয়ে স্রোতের সাথে ভেসে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছে না তাঁরা।
-এটি