মাওলানা আবদুল মাজীদ মামুন রাহমানী।।
প্রতিটি মানুষ শান্তি চায়। দেখতে চায় নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে। আধুনিক এ-বিশ্বে মানুষ যা কিছু করছে, সবই শান্তি লাভের জন্য। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধন ইত্যাদি সবই করা হচ্ছে মানুষের পরিতৃপ্ত ও শান্তিপূর্ণ জীবন লাভের জন্য।
পৃথিবীর এত আয়োজন, ধরণীর এত সাজসজ্জা আর ভুবনের এই জাকজমকতা সত্বেও প্রহর ব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখা যায়; বুকের মাঝে লোকায়িত একটি বোবাকান্না, না পাওয়া আর হেরে যাওয়ার এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস। তাই মনের মধ্যে প্রশ্ন উদিত হয় শান্তি আসলে কোন পথে?
যুগ যুগ ধরে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন শাস্ত্র পন্ডিত, দার্শনিক ও বিশেষজ্ঞরা বা দার্শনিকরা বলছে শান্তি এ পথে তো Intellectuals বা বুদ্ধিজীবীরা বলছে, না শান্তি ঐ পথে। আবার Sociologist বা সমাজবিজ্ঞানীরা বলছে শান্তির পথ এটি তো Psychologists বা মনোবিজ্ঞানীরা বলছে না শান্তির পথ ঐটি।
যাইহোক আধুনিকতার এই যুগে অধিকাংশ মানুষই যেহেতু বিজ্ঞান ভক্ত, তাই Psychologists বা মনোবিজ্ঞানীরা শান্তি লাভের জন্য কি কি টিপস দেয় তা বিশেষ বিবেচ্য বিষয়।
তারা দীর্ঘ গবেষণার পর সাতটি টিপস বের করেছে। যেগুলোর ব্যাপারে ইসলাম আরো সাড়ে চোদ্দশত বৎসর পূর্বে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।যে টিপস গুলো ফলো করলে মানুষ শান্তির মুখ দেখবে ইনশাআল্লাহ।
নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা অন্যের সম্পদ বা সুন্দরী স্ত্রীর দিকে না তাকানো। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেছেন "আমি তাদের (কাফেরদের) বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ- বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি তার প্রতি কখনো স্বীয় চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করবেন না। সূরা আল হিজর, আঃ নং-৮৮
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ধনের আধিক্য হলেই ধনী হয় না। অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী। বুখারী,হাঃ নং ৬৪৪৬; মুসলিম,হাঃ নং- ২৩১০; মুসনাদে আহমদ হাঃ নং-৭২৭৪; ইবনে মাজাহ হাঃ নং-৪১৩৭।
২.কথা কম বলা ও চুপ থাকার চেষ্টা করা। কুরআনে পাকে এরশাদ হচ্ছে মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে, যে লেখার জন্য সদা প্রস্তুত। সূরা ক্বাফ, আঃ নং- ১৮। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে চুপ থাকলো সে মুক্তি পেল। তিরমিজি, হাঃ নং-২৫০৩
৩.একাকীত্বে না থাকা,সমাজের সবার সাথে মিলে থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন তুমারা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর। পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। সূরা আলে ইমরান, আঃ নং-১০৩
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর হাত(সাহায্য) জামাতের (ঐক্যবদ্ধতার) উপর।তিরমিযি,হাঃ নং-২১৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান,হাঃ নং-৪৫৭৭; বায়হাকি (শুআবুল ঈমান),হাঃ নং-৭৫১২;ত্ববরানী(আউসাত),হাঃ নং-৭২৪৯।
তাছাড়া যে সাহাবী বিবাহ-সাদী না করে একাকীত্বে থাকা ও বৈরাগী জীবন-যাপন করার ইচ্ছা করেছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেন ''বিবাহ করা আমার সুন্নত। যে এর প্রতি বিরাগ পোষণ করবে সে আমার দলভুক্ত নয়।'' বুখারী,হাঃনং-৫০৬৩; নাসাঈ,হাঃ নং-৩২১৭
৪. অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেন তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে (অনর্থক কথাবার্তায়) কোন কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ রয়েছে ঐ ব্যক্তির কথায়, যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকর্ম ও মানুষের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্থাপনের। সূরা নিসা, আঃ নং- ১১৪
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে মানুষের ইসলামিক গুণের অন্যতম হলো অনর্থক বিষয় পরিহার করা তিরমিজি, হাঃ নং-২৩২১; ইবনে মাজাহ, হাঃ নং-৩৯৭৬; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাঃ নং-২২৯
৫. Frustration বা হতাশায় না ভোগা, নিরাশ না হওয়া।
আল্লাহ তা'আলা বলেন হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো; তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। সূরা যুমার আঃ নং-৫৩
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন ''যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয় ? সূরা আল হিজর, আঃ নং-৫৬
হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে ''আল্লাহ তাআলার কাছে কি অপরিসীম অনুগ্রহ রয়েছে, অবিশ্বাসীরা যদি তা জানত; তবে কেউ তাঁর জান্নাত থেকে নিরাশ হতো না। বুখারী, হাঃ নং-৬৪৬৯; মুসলিম, হাঃ নং-৬৮৭২; তিরমিযি, হাঃ নং-৩৫৪২।
অন্য এক হাদীসে এসেছে আল্লাহ তাআলা যখন সৃষ্টিকূলকে সৃষ্টি করেছেন, তখন নিজ হাতে নিজের ব্যাপারে লিখেছেন; আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী থাকবে।'' বুখারী, হাঃ নং-৭৪০৪; মুসলিম, হাঃ নং-৭১৪৫; তিরমিজি হাঃ নং-৩৫৪৩; ইবনে মাজাহ হাঃ নং- ৪২৯৫
৬. সব সময় হাসিখুশি থাকা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জায্য়ি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন " রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি। তিরমিযি, হাঃ নং-৩৬৪১; শামায়েলে তিরমিজি হাঃ নং-২২৭
অন্য এক হাদীসে ইরশাদ করেন তোমাদের কেউ যেন ন্যায় সংগত ও কল্যাণকর কাজের কোন বিষয়কেই তুচ্ছ জ্ঞান না করে। সে ভাল করার মত কিছু না পেলে অন্তত তাঁর ভাইয়ের সাথে যেন হাসিমুখে মিলিত হয়। তিরমিযি, হাঃ নং-১৮৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং-২১৫৫৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাঃ নং-৫২৩; বাইহাকী (শুয়াবুল ঈমান ),হাঃ নং-৩৪৬০।
৭. ইতিবাচক কথা বলা নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে। বুখারী, হাঃ নং-৬১৩৫; মুসলিম, হাঃ নং-১৮১; মুসনাদে আহমদ, হাঃ নং-৭৬১৫।
লেখক: ফাজেল জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া ঢাকা।
-এটি