শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ঈদের নামাযে ভুল হলে করণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি এহসানুল হক।।

ঈদের নামাযে সিজদায়ে সাহুর বিধান

নামাযে কোনো ফরয কিংবা রোকন যদি ছুটে যায় তাহলে তা নামাযের ভেতরেই সালাম ফেরানোর পূর্বে দোহরিয়ে নিতে হয়; অন্যথায় নামাজ আদায় হয় না বরং পুনরায় পড়তে হয়। আর যদি নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। তবে জুমআ ও ঈদের নামাযে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দেওয়া জরুরী নয়।

তাই ঈদের জামাত যদি বড় হয় এবং ইমাম সাহেব সিজদায়ে সাহু করলে মুক্তাদীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাওয়া কিংবা মাসাআলা না জানার দরুন ভুল বুঝাবুঝির আশংকা থাকে, তাহলে সিজদায়ে সাহু না করলেও নামায সহীহ হবে৷

আর যদি জামাত ছোট হয় অথবা সিজদায়ে সাহু করলে মুক্তাদিদের বিভ্রান্তিতে পড়ারও কোনো আশংকা না থাকে, বরং সিজদায়ে সাহু না করলে বিভ্রান্তি ও হট্টগোল হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে৷

والسهو فى صلاة العيد والجمعة المكتوبة والتطوع سواء والمختار عند المتأخرين عدمه فى الأوليين لدفع الفتنة.ﻭَﻓِﻲ ﺟُﻤُﻌَﺔِ ﺣَﺎﺷِﻴَﺔِ ﺃَﺑِﻲ اﻟﺴُّﻌُﻮﺩِ ﻋَﻦْ اﻟْﻌَﺰْﻣِﻴَّﺔِ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ اﻟْﻤُﺮَاﺩُ ﻋَﺪَﻡَ ﺟَﻮَاﺯِﻩِ، ﺑَﻞْ اﻷَْﻭْﻟَﻰ ﺗَﺮْﻛُﻪُ ﻟِﺌَﻼَّ ﻳَﻘَﻊَ اﻟﻨَّﺎﺱُ ﻓِﻲ ﻓِﺘْﻨَﺔٍ.

(ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻭَﺑِﻪِ ﺟَﺰَﻡَ ﻓِﻲ اﻟﺪُّﺭَﺭِ) ﻟَﻜِﻨَّﻪُ ﻗَﻴَّﺪَﻩُ ﻣُﺤَﺸِّﻴﻬَﺎ اﻟْﻮَاﻧِﻲ ﺑِﻤَﺎ ﺇﺫَا ﺣَﻀَﺮَ ﺟَﻤْﻊٌ ﻛَﺜِﻴﺮٌ، ﻭَﺇِﻻَّ ﻓَﻼَ ﺩَاﻋِﻲَ ﺇﻟَﻰ اﻟﺘَّﺮْﻙِ (رد المحتار-٢/٥٦٠)
ولا ياتى الإمام بسجود السهو فى الجمعة والعيدين دفعا للفتنة بكثرة الجماعة (حاشية الطحطاوى على مراقى الفللاح.٤٦٥، الفتاوى الهندية-١/١٣٨)

 ঈদের নামাযে ইমাম অতিরিক্ত তাকবীর দিতে ভুলে গেলে

ক.

যদি ইমাম সানা পাঠ করার পর ভুলে তাকবীর না দিয়ে সূরা ফাতিহা শুরু করে এবং সূরা ফাতিহার মাঝখানে বা সূরা মিলানোর পূর্বে স্মরণ হয়, তাহলে পড়া ছেড়ে দিয়ে প্রথমে অতিরিক্ত তাকবীরসমূহ বলে তারপর আবার সূরা ফাতিহা পড়ে সূরা মিলাবে।

এক্ষেত্রে তারতীবের উল্টো করার কারণে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে।

খ.

যদি সূরা মিলানোর পরে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে স্মরণ হয়, তাহলে রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো দিয়ে দিবে। এক্ষেত্রে পুনরায় সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলানোর প্রয়োজন নেই।
এক্ষেত্রেও তারতীবের উল্টো করার কারণে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে।

نسى التكبير فى الأولى حتى قرأ بعض الفاتحة أو كلها ثم تذكر، يكبر ويعيد الفاتحة وإذا كبر بعد ما قرأ الفاتحة والسورة يكبر ولا يعيد القراءة، لأنها تمت وصحت بالكتاب والسنة، (حلبى كبير-572، رد المحتار-3/55)

 

গ.

আর যদি প্রথম রাকাতে হোক বা দ্বিতীয় রাকাতে হোক অতিরিক্ত তাকবীর দেওয়া ছাড়াই রুকুতে চলে যায়, তাহলে রুকুর মধ্যেই হাত উঠানো ছাড়া তাকবীরগুলো বলে নেবে। তাকবীরের জন্য দাঁড়াবে না।

(ﻛَﻤَﺎ ﻟَﻮْ ﺭَﻛَﻊَ اﻹِْﻣَﺎﻡُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﺒِّﺮَ ﻓَﺈِﻥَّ اﻹِْﻣَﺎﻡَ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﻓِﻲ اﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭﻻ ﻳﻌﻮﺩ ﺇﻟﻰ اﻟْﻘِﻴَﺎﻡِ ﻟﻴﻜﺒﺮ)[ رد المحتار مع الدر ٣/٥٨]

 

ঈদের নামাজে মুক্তাদির তাকবীর ছুটে গেলে/ মাসবুক হলে করণীয়

যদি ঈদের নামাযে মুক্তাদির অতিরিক্ত তাকবীর ছুটে যায়, তাহলে এর কয়েকটি সূরত হতে পারে।

ক.
যদি ইমাম অতিরিক্ত তাকবীর বলার পর মুক্তাদী এসে ইমাম সাহেবকে কেরাত পড়া অবস্থায় পায় অথবা রুকুতে যাওয়ার আগে দাঁড়ানো অবস্থায় পায়, তাহলে মুক্তাদি তাকবীরে তাহরীমা বলার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলে ইমাম সাহেবের সাথে শরিক হয়ে যাবে।

ﻭَﺇِﻥْ ﺃَﺩْﺭَﻛَﻪُ ﺑَﻌْﺪَ ﻣَﺎ ﻛَﺒَّﺮَ اﻹِْﻣَﺎﻡُ اﻟﺰَّﻭَاﺋِﺪَ ﻭَﺷَﺮَﻉَ ﻓِﻲ اﻟْﻘِﺮَاءَﺓِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺗَﻜْﺒِﻴﺮَﺓَ اﻻِﻓْﺘِﺘَﺎﺡِ ﻭَﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑاﻟﺰﻭاﺋﺪ.[بدائع الصنائع. ١/٦٢٢]

খ.
আর যদি ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পায় এবং ইমামের সাথে মুক্তাদির রুকু ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে বরং অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলে ইমাম সাহেবকে রুকুতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবীর সমূহ দিয়ে তার পর রুকুতে শরীক হবে।

ﻭَﺇِﻥْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ اﻹِْﻣَﺎﻡَ ﻓِﻲ اﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺨَﻒْ ﻓَﻮْﺕَ اﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻣَﻊَ اﻹِْﻣَﺎﻡِ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﻟِﻻِﻓْﺘِﺘَﺎﺡِ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻭَﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑاﻟﺰﻭاﺋﺪ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺘَﺎﺑِﻊُ اﻹِْﻣَﺎﻡَ ﻓِﻲ اﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ. [بدائع الصنائع. ١/٦٢٢]

গ.

আর যদি রুকু ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে চলে যাবে এবং রুকুতে গিয়ে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো আদায় করে নেবে। এ সময় যদি সাথে রুকুর তাসবীহগুলো আদায় করতে পারে তাহলে একসাথে আদায় করে নেবে নতুবা শুধু অতিরিক্ত তাকবীর আদায় করবে, রুকুর তাসবীহ আদায় করতে হবে না।

ﻭَﺇِﻥْ ﺧَﺎﻑَ ﺇﻥْ ﻛَﺒَّﺮَ ﻳَﺮْﻓَﻊُ اﻹِْﻣَﺎﻡُ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻣِﻦْ اﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻛَﺒَّﺮَ ﻟِﻻِﻓْﺘِﺘَﺎﺡِ ﻭَﻛَﺒَّﺮَ ﻟِﻠﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭَﺭَﻛَﻊَ ﺛُﻢَّ ﺇﺫَا ﺭَﻛَﻊَ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﺗَﻜْﺒِﻴﺮَاﺕِ اﻟْﻌِﻴﺪِ ﻓِﻲ اﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻋِﻨْﺪَ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪٍ. [بدائع الصنائع. ١/٦٢٢]

ঘ.
আর যদি মুক্তাদির পূর্ণ এক রাকাত ছুটে যায়, তাহলে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদি দাঁড়িয়ে প্রথমে সানা, অতঃপর তাআওউয, তাসমিয়া, সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলিয়ে অতিরিক্ত ছুটে যাওয়া তিন তাকবীর দিয়ে তারপর রুকু-সিজদা করে নামায শেষ করবে।

ﻭَﻟَﻮْ ﺳﺒﻖ ﺑﺮﻛﻌﺔ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ ﻟِﺌَﻼَّ ﻳَﺘَﻮَاﻟَﻰ اﻟﺘَّﻜْﺒِﻴﺮُ، (ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺛُﻢَّ ﻳُﻜَﺒِّﺮُ) ﺃَﻱْ ﺇﺫَا ﻗَﺎﻡَ ﺇﻟَﻰ ﻗَﻀَﺎﺋِﻬَﺎ. [رد المحتار مع الدر. ٣/٥٦]

লেখক: মুহাদ্দিস, শেখ জনূরদ্দীন র. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ