বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ ।। ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১২ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই ‘শাহবাগ কেড়ে নিয়েছিল এদেশের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার’ বাংলাদেশী রেমিটেন্সযোদ্ধাদের সম্মানে কাতার সরকারের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত দেড় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে তারাবি নিয়ে ১০ হাফেজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ফয়যে বর্ণভী সাবাহী মক্তব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ; পাসের হার ৯৯.৪৯% জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করা সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে উপদেষ্টা মাহফুজের ‘মব’ নিয়ে পোস্ট, যা বলল ঢাবি ছাত্রশিবির ইফতা, আদবসহ বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি নিচ্ছে উত্তরার মাদরাসাতুল আযহার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে সিগারেট খেতে না করা সেই রিংকুকে গ্রেফতার

টাকা দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মুফতি নুরুল হুদা।।

সাদাকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের একটি অন্যতম আমল। ঈদের দিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের দিনের আগেও আদায় করার জায়িয। একটি হাদীসে এই ইবাদতের দুটি হিকমত ও তাৎপর্য স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-১৬০৯।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায় খেজুর, কিসমিস, জব, পনির ও গম- এই পাঁচ প্রকারের  খাদ্যদ্রব্য ও এদের মূল্য দিয়ে।

খেজুর, কিসমিস, জব ও পনিরের পরিমাণ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। গম ও আটার পরিমাণ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম।

আবু সা’ঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা' পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা' পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সাদ্‌কাতুল ফিত্‌র আদায় করতাম। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৬।

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রমযানের শেষ দিকে বসরার মিম্বারের উপর খুতবা দানকালে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন এক সা খেজুর বা যব কিংবা আধা সা গম; গোলাম-স্বাধীন, নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-১৬২২।

হাদিসে বর্ণিত পাঁচটি খাদ্যদ্রব্য ও এর যে কোন একটির মূল্যের মাধ্যমে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার অবকাশ রয়েছে। সাহাবা, তাবেঈ ও সালাফের আমল দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত।

বিশিষ্ট তাবেঈ আতা রহ. বর্ণনা করেন, উমর রা. সাদাকার ক্ষেত্রে দিরহাম ইত্যাদি গ্রহণ করতেন।মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস-১০৫৩৯।

যুহাইর বলেন, আমি আবু ইসহাককে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি সাহাবায়ে কেরামকে পেয়েছি, তারা রমজানের সাদাকাতে খাদ্যের মূল্য পরিমাণ দিরহাম আদায় করেছেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং, ১০৪৭২।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ি হাসান বসরি রহ. ফাতওয়া প্রদান করেছেন যে, সদকায়ে ফিতর দিরহাম দ্বারা প্রদান করতে কোন সমস্যা নেই। । মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ১০৪৭১।

কুররা রহ. বলেন, আমাদের নিকট উমর বিন আব্দুল আজীজ রহ. এর চিঠি এসেছে যে, সদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষ থেকে অর্ধসা’ খাবার অথবা অর্ধেক দিরহামের মূল্য গ্রহণ করা হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ১০৪৭০।

যাকাত ও সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে গরিবের কল্যাণের দিকটিই মুখ্য। সরাসরি খাদ্যদ্রব্য প্রদানের তুলনায় এর মূল্য দিয়ে ফেতরা আদায় করা হলে গরিবের বেশি ফায়দা হয়। তাই ইমাম আবু হানিফাসহ বহু ইসলামিক স্কলারগণ মতামত দিয়েছেন- খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সাদাকা আদায়ের তুলনায় মূল্য দিয়ে আদায় করা উত্তম।

আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, মূল্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম বুখারি ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সাথে একমত পোষণ করেছেন। ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২।

তাছাড়া নবিযুগে যে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা হত এ খাদ্যদ্রব্যগুলো সেকালে পণ্যের মূল্য হিসেবেও ব্যবহৃত হত। সে দিক বিচারে হাদিসে বর্ণিত খদ্যদ্রব্যগুলো আসলে "মূল্য" ছিলো। নবীযুগে স্বল্পমূল্যের কোন মুদ্রা ছিলো না। দামি বস্তুর মূল্য পরিশোধ করা হত দিরহাম দিনার দিয়ে। সাধারণ বস্তুর মূল্য পরিশোধ করা হত একসা' অথবা অর্ধসা' খাদ্যদ্রব্য দিয়ে। তাই হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্যের মতই তার মূল্য দিয়েও সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে।

আদ্দুররুল মুখতার-৩/৩১৯; আলবাহরুর রায়িক-২/২৫৪; বাদাউয়ে সানায়ে-২/৭২; ফাতাওয়া কাসেমিয়া- ১১/৬২০।

লেখক: মুহাদ্দিস, দারুল উলুম দত্তপাড়া, নরসিংদী।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ