শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জিকির: দূর করে মানসিক দুর্ভাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী এনায়েত কবীর

পাপে হৃদয় কলুষিত হয়। কলবে ধরে জং। নষ্ট করে মানসিক প্রশান্তি। বাড়ায় হতাশা, বিষণ্নতা ও গ্লানির বোঝা। মনে সৃষ্টি হয় হাজারো দুর্ভাবনা।

হযরত আবূ হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। নবীজি ইরশাদ করেন, বান্দা যখন পাপ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এভাবে তার পুরো অন্তর কালো দাগে ঢেকে যায়। তিরমিজি: ৩৩৩৪।

কলব থেকে পাপের এই কালিমা দূর করে জিকির। কলবকে করে পরিষ্কার এবং তাজা। দূর হয় মানসিক বিষন্নতা ও পেরেশানি। আল্লাহ তা'আলা বলেন, জেনে রাখ জিকিরের মাধ্যমে মন শীতল এবং প্রশান্ত হয়। সূরা রা’দ : ২৮।

দুনিয়াতে প্রতাপশালী এবং উপর মহলের সুদৃষ্টি পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক রকম চেষ্টা তদবির করে। দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, ওয়াল রাইটিংসহ আরো কত কি!

অথচ তেমন কোন কষ্ট ছাড়াই জিকিরের মাধ্যমে মহা প্রতাপশালী এবং সর্বশক্তিমানের নৈকট্য অর্জন করা যায়। নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বান্দা যখন আমার জিকির করে তখন আমি তার সাথে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তার আলোচনা করি।সহীহ বুখারী ২/৭৪০৫, সহীহ মুসলিম, ২৬৭৫।

এছাড়া কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদের স্মরণ করব। সূরা বাকারা: ১৫২।

কেয়ামতের ভয়াবহতার কথা কে না জানে? কঠিন সেই দিনে আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবেন। ভয়াল সেই দিনে যিকিরকারী ব্যক্তিরা আরশের শীতল ছায়াতলে ঠাঁই পাবে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। তাদের একজন হলো, যে একান্তে আল্লাহর জিকির করেছে এবং চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে। বুখারী, হাদীস : ৬৪৭৯

একদিন নবীজির কাছে একজন সাহাবী এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলামের বিধান তো অনেক। আমাকে এমন একটি বিষয় বলে দিন যার উপর আমি সর্বদা আমল করতে পারি। নবীজি বললেন, তোমার জিহবাকে আল্লাহর জিকিরে তরতাজা রাখ। জামে তিরমিযী- ৩৩৭৫, ইবনে মাজাহ- ৩৭৯৩।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার যিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকি। অর্থাৎ আল্লাহর রহমত তার সাথে থাকে। মুসনাদে আহমাদ ১০৯৬৮, ইবনে মাজাহ- ৩৭৯২।

জিকিরের মজলিস অন্যসব মজলিস থেকে শ্রেষ্ঠ। জিকিরের মজলিসে আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং ফেরেশতারা বেষ্টনীর মধ্যে তারা থাকেন।

নবীজির ইরশাদ করেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহর জিকির করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন,আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং তাদের উপর সাকিনা নাযিল হয়, আর আল্লাহ তাআলা তার নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন। সহীহ মুসলিম ৭০০; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫৩০।

কোন জিকির আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? আমরা বেশি বেশি কোন জিকির করব? নবীজি ইরশাদ করেন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ আকবার এই চারটি জিকির আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। সহীহ বুখারী-৬৩০২।

অতি উপকারী জিনিসের সঠিক মূল্যায়ন এবং সদ্ব্যবহার না করলে এর ক্ষতিও অনেক ভয়াবহ এবং ব্যাপক হয়ে থাকে। তাই অতীব ফজিলতপূর্ণ জিকিরের আমল থেকে বিমুখতার পরিণতিও খুব কঠিন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে আমি তার জন্য শয়তান নিয়োজিত করে দেই। অতঃপর সেই হয় তার সঙ্গী এবং শয়তান মানুষকে সৎ পথে বাধা দান করে অথচ মানুষ মনে করে যে সে সৎ পথে রয়েছে। সূরা যুখরুফ-৩৬।

কোরআনের অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে, যে আল্লাহর জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জীবিকা সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠানো হবে। সূরা তহা-১২৫ শেষ হতে চলছে ইবাদতের বসন্তকাল।

ইবাদত বসন্তের শেষ লগ্নে আসুন কোরআন তেলাওয়াত, ফরজ নফলসহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর জিকিরে মনোযোগী হই। আমাদের মনকে করি সজীব ও প্রশান্ত। জীবনে আনি প্রফুল্লতা ও সুখ। দূর করি সব মানসিক দুর্ভাবনা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ