শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক।।

ইসলামের ইতিহাসে ১৭ রমজান ‘বদর দিবস’ নামে বিবেচিত। ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ সেদিন হিজরি দ্বিতীয় সনে মোতাবেক ১৩ মার্চ ৬২৪ সালে মদিনার অদূরে ৮০মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক স্থানে কাফেরদের সঙ্গে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মাহে রমজানে সংঘটিত এ যুদ্ধ ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ নামে আখ্যায়িত।

আল্লাহর পথের দাওয়াত দেওয়ার কারণে মহানবি হযরত মুহাম্মদ সা. কে মক্কার কাফেররা নির্যাতন করতে লাগলো। দিন দিন সেই নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকলো। অবশেষে মহানবী সা. ইসলামের শত্রুদের চাপের মুখে এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে নিকটাত্নীয় এবং সাহাবীদের নিয়ে ৬২২ সালে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন।

এই হিজরত থেকেই হিজরি বছর গণনা শুরু হয়। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর সে জন্য ইসলামের প্রসার প্রয়াসকে অংকুরেই সমূলে ধ্বংস করার জন্য মক্কার কাফের অধিপতিরা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এবং মদিনাতেও মুসলমানদের জীবন নানাভাবে অতিষ্ঠ করে তোলে।

তাদের এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় মদিনায় থাকা তাদের দোসররা তথা স্থানীয় ইহুদি ও নিকটবর্তী কিছু খ্রিষ্টান। হিজরি দ্বিতীয় সনে আবু সুফিয়ানের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মক্কার কুরাইশ বংশের বড় বড় লিডার ও যোদ্ধা যেমন আবু জেহেল , উৎবা, শায়বাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বদর প্রান্তরে এ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়।

ইসলামের প্রথম ও প্রসিদ্ধ এই যুদ্ধের বিবরণ ও বিশেষত্ব সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। বিখ্যাত তাফসিরতত্ত্ববিদ হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, বদরের যুদ্ধের পূর্বে মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হলেও অন্তত ৭০টি আয়াতে মুসলমানদের যুদ্ধ না করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী সা. সবাইকে ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দেন।

কিন্তু বদরের যুদ্ধের পূর্বেই পবিত্র কুরবআনে এই প্রথম কাফেরদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে আয়াত নাজিল হয়-“আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদের হাটিয়ে দিবেন। আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।

যুদ্ধে অনুমতি দেওয়া হলো তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে। কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম”। (সূরাঃ হজ্জ, আয়াত-৩৮,৩৯) হিজরি দ্বিতীয় সনে মুসলমানদের উপর আল্লাহ তায়ালা রোজা ফরজ করেন, সে বছরই বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানগণ প্রথমবারের মতো রমজান মাসে রোজা পালন করছিলেন।

ইসলামের প্রতিষ্ঠালগ্নে, যখন শত্রুরা ছিল প্রবল ও পরাক্রমশালী; তখন অল্প সংখ্যক মুসলমানরা ছিল স্বাভাবিকভাবেই হীনবল। কাফের কুরাইশদের ছিল প্রায় ১০০০ সৈন্য, ১০০টি ঘোড়া এবং ১৭০টি উট।

পক্ষান্তরে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন আর ৭০টি উট ও মাত্র ২টি ঘোড়া। সে সময় আল্লাহর সাহায্য পাওয়া ছিল অপরিহার্য। মুসলমানদের মানোবল বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে অভয়বানী আসায় সংখ্যাগত দৈন্যতা ও প্রকৃত প্রস্তুতি ছাড়াই সামর্থ্যে তিনগুণ শক্তিশালী শত্রুপক্ষের মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছিল।

রাসূলুল্লাহ সা. বদরের রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে লিপ্ত ছিলেন। এতমবস্থায় তাঁর চোখে তন্দ্রা এসেছিল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে হাসতে হাসতে জেগে ওঠে বললেন, হে আবু বকর! সুসংবাদ শুন, জিবরাঈল আ. টিলার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। একথা বলে তিনি পাঠ করলেন, “শীঘ্রই শত্রুপক্ষ পরাজিত হয়ে যাবে এবং পশ্চাদপসরণ করে পালিয়ে যাবে। (সূরাঃ ক্বামার, আয়াত-৪৫)

রমজান মাসে বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা শৈর্য্য, বীর্য, ত্যাগ ও তিতিক্ষার পরিচয় দিয়ে বিজয় অর্জন করেছিলেন। তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী প্রথমে দুই পক্ষের তিনজন করে সম্মুখযুদ্ধে অবর্তীণ হয়। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে তীর নিক্ষেপ ও তলোয়ার নিয়ে ঘুমসান যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ১৪জন বীর সাহাবী শাহাদতবরণ করেন।

বর্তমানে বদর প্রান্তরে একটি বিরাট ফলকে এই ১৪ জন শহীদ সাহাবীর নাম রয়েছে। অপর পক্ষে কাফেরদের ৭০জন বন্দী হয় আর ৭০জন যুদ্ধে মারা যায়। আহত হয় আরও অনেকে। বদরের যুদ্ধে শত্রুরা তাদের চোখের দেখায় মুসলমানদের দুইগুণ বেশি দেখেছিল। ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই দুটো দলের মোবাবেলার মধ্যে তোমাদরে জন্য নিদর্শন রয়েছে।

একটি দল আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করছিল। আর অপর দল ছিল কাফেরদের, এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুণ দেখছিল। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন।

এরই মধ্যে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নরদের জন্য শিক্ষা রয়েছে”। (সূরাঃ ইমরান, আয়াত-১৩) বিপদ-আপদে, ষড়যন্ত্রে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার মতো গৌরবের কিছু নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিক্ষা নেওয়ার তাওফীক দিক যে, ইসলামের মূল্যবোধ ও অস্তিত্ত্বের প্রশ্নে কোন বাতিলের সঙ্গে আপোষ নয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ