শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

অহংকারের কারণ, পরিণতি ও উত্তরণের উপায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এম.জসীম খাঁ

عن عبدالله بن مسعود( رض): لا يَدخُلُ الجنَّةَ رَجُلٌ في قَلبِه مِثقالُ ذَرَّةٍ مِن كِبرٍ. হাদিস: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তির অন্তরে শস্যের দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস- ৪৩১০

রাবীর পরিচয়: হিজরতের ৩৭ বছর আগে পবিত্র নগরী মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

তিনি বদর, ওহুদ, খন্দক, বায়আতে রেদওয়ানসহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কুরআনুল কারিমের একনিষ্ঠ সেবক ও গবেষক। জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। কুফায় দীর্ঘদিন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ বুখারি শরিফ এ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হাদীসে ইবনে মাসউদ নিজেই বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলতেন এবং তাঁর তেলাওয়াত শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হতেন। রাসুল সা. সাহাবাদেরকে তাঁর কাছ থেকে কুরআন শেখার নির্দেশ দিতেন।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে অন্যতম। রইসুল মুফাসসিরিন ও ফকিহুল উম্মাহ খ্যাত কুরআনের সাধক, বাহক ও প্রচারক হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।

অহংকার মানব স্বভাবের একটি নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত কাজ। অহংকার দমন করে নফসকে সৎকর্মে লাগানোর মধ্যেই মানুষের কৃতিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন : وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ

অর্থ: অহংকার‌ বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
(সূরা লোকমান, আয়াত ১৮)

অহংকারের কতিপয় নিদর্শনঃ
১) অন্যকে নিজের তুলনায় ছোট মনে করা ২) অন্যের কাছে নিজের বড়ত্ব যাহির করা। ৩) অধীনস্তদের সাথে দুর্ব্যবহার করা।
৪) অন্যের আনুগত্য ও সেবা করাকে নিজের জন্য অপমানজনক মনে করা। ৫) দাম্ভিকতার সাথে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা।
৬) নিজের ভুলের উপরে জেদ করে অটল থাকা।

৭) মানুষের সাথে নম্রতা পরিহার করে সর্বদা কঠোর আচরণ করা। ৮) নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করা। ৯) জ্ঞান অর্জন না করা।
১০) অন্যের উপদেশ গ্রহণ না করা ১১) অন্যের নিন্দা ও কুৎসা রটনা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে না পারা।
১২- শক্তি ও বুদ্ধির জোড়ে অন্যের হোক নষ্ট করা সহ ইত্যাদি।

অহংকার করার কারন সমূহ:
১) জ্ঞানের স্বল্পতা ২) পারিবারিক শিক্ষার অভাব ৩) পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার ৪) হিংসুটে মানসিকতা
৫) ধন- সম্পদ আধিক্য ৬) লোক দেখানো আমল ও ইবাদত ইত্যাদি

অহংকারের পরিনতি:
দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হলো লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে এর পরিণতি হলো ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ জাহান্নামীদের পুঁজ-রক্ত পান করা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ততটুকু হ্রাস পাবে। যদি কারো অন্তরে অহংকার স্থিতি লাভ করে তবে তার জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। বোধশক্তি লোপ পায়। সে অন্যের চাইতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে।

প্রত্যাশিত সম্মান না পেলে সে মনোকষ্টে মরতে বসে। তার চেহারায় ও আচরণে, যবানে ও কর্মে অহংকারের দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। ফলে মানুষ তার থেকে ছিটকে পড়ে।

অহংকার দূরীকরণের উপায় সমূহ:
১) নিজের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব নিয়ে ভাবা ২) মৃত্যুর কথা সর্বদা স্মরণ করা ৩) পরকালে জবাবদিহিতার ভয়ে ভীত থাকা
৪) আমার প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহ্‌ দেখেন এই ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা ৫) গরীব ও ইয়াতীমের সহযোগিতা করা
৬) অসুস্থকে সেবা প্রদান অথবা সেবা প্রদানে সহযোগিতা করা

৭) দম্ভভরে পৃথিবীতে পদচারনা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা ৮) গোপন ও রিয়ামুক্ত আমলে নিজেকে অভ্যস্ত করা
৯) আল্লাহর ভঁয়ে গোপনে ক্রন্দন করা, ১০) অন্যের সাথে নম্র আচরণ করা ১১) অন্যের ভুল ক্ষমা করে দেওয়া
১২) অহংকার বশত অন্যের সাথে অসদাচরণ করে ফেললে তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া

১৩) ভুলক্রমে অহংকার প্রকাশ পেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ১৪) অহংকার থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
১৫) অগ্রগামী হয়ে অন্যের আগেই সালাম দেয়া ১৬) অহংকারীর পোষাক ও চাল চলন পরিহার করা। ১৭- আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা করা।

তাই আমাদেরকে যাবতীয় মিথ্যা অহংকার ছেড়ে আল্লাহ প্রেরিত মহাসত্যের দিকে ফিরে আসা এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে প্রত্যেক মানুষের জন্য কর্তব্য। বান্দার কোন অহংকার থাকলে তা হবে কেবল সত্যের অহংকার। অন্য কিছুর নয়। আল্লাহ আমাদেরকে মিথ্যা অহমিকা ও তার কুফল হতে রক্ষা করুন- আমীন!

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ