মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম: রমাদান মাস। কুরআন নাযিলের মাস। রহমত, বরকত, নাজাতের মাস। ইবাদত ও পূণ্যের মাস। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার মাস। বছরঘুরে প্রতিবছর এই মাস আসে; মুমিনের জীবনঘরে এক আলোকবর্তিকা হয়ে। মুমিন মুসলিম নর-নারী এ মাসে সাজে নতুন এক রঙে— স্রষ্টার ইবাদত-বন্দেগি, আনুগত্য ও পূণ্যময়তায় ভরে উঠে তাদের জীবন। আল্লাহওয়ালা-বুজুর্গরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে এ মাসের।
সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষের মাঝেও তৈরি হয় এক অন্যরকম কৌতুহল ও ভালোলাগা। ইবাদত-বন্দেগিতে হয় বেশ মনোযোগি। কারণ এই মাস নেকি অর্জনের মাস। অল্প আমলে বেশি সওয়াব অর্জন করার মাস। যেমনটা হাদিসে এসেছে : হযরত সালমান রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করলো সে যেন রমযানের বাহিরে একটি ফরয আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরয আদায় করলো সে যেন রমযানের বাহিরে সত্তরটি ফরয আদায় করলো। এটা সবরের মাস, আর সবরের বিনিময় হলো জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস, এ মাসে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। ( তারগীব তারহীব :১৪৮৩ )
সিয়াম সাধনা মানুষের পশুবৃত্ত স্বভাবের লাগাম টেনে ধরে— মানব জীবনকে করে তুলে পূতঃপবিত্র। শিক্ষা দেয় সংযমতার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই মাসে তাঁর রহমতের দ্বার খুলে দেন। হাদিসে পাকে এরশাদ হয়েছে : হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রমাদানের প্রথম রাত্রি আসে শয়তান ও অবাধ্য জ্বীন সকলকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়, দোযখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো দরজা খোলা হয় না। এ মাসে একজন আহ্বানকারী এ আহ্বান করে যে, হে মঙ্গলের আকাংখী! অগ্রগামী হও। হে মন্দের প্রত্যাশি! থাম। একটু সংযমতা অবলম্বন করো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এই আহ্বান রমাদান শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক রাতেই হয়। ( জামে' তিরমিজি ১:১৪৭ ইবনে মাজাহ– ১১৮ )
পবিত্র মাহে রমাদানের সিয়াম বা রোযা আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের সবক দেয়। খোদা ভীতি শিক্ষা দেয়। পূণ্যময়ী জীবন গঠন করার দিকনির্দেশনা বাতলিয়ে দেয়। যেমন—গোপনে বা প্রকাশ্যে একজন সিয়াম পালনকারী তাঁর হাতের নাগালে যতেষ্ট পরিমান পানীয় ও খাদ্যদ্রব্য থাকা সত্যেও একমাত্র আল্লাহর ভয়ে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য শতকষ্ট সয়ে সুবহেসাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকে। এ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যায় যে, এটা একমাত্র আল্লাহ প্রেম —খোদাভীতি ও তাকওয়ার নিদর্শন। আর এটাই শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বপর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্থাৎ মুত্তাকী হতে পারো। ( সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৩ )
এই মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। হাদিসে এসেছে—সিয়াম হলো জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল স্বরুপ, যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য যেমন তোমাদের কছে ঢাল রয়েছে। ( ইবনে মাযাহ, হাদিস ১৬৩৯)
ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস ও আখেরাত অর্জনের মাস রমাদান। এই মাসে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। হাজারো জান্নামীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়— তাই এই মাসের প্রতিটি ক্ষণ মুমিনের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত ; অলসতা-অবহেলা না করে প্রতিটি সময় আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধমকি স্বরুপ বলেছেন: যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেল কিন্তু সে তাঁর গুনাহ মাফ করাতে পারলো না। সে বঞ্চিত-বিতাড়িত, হতভাগা—ধ্বংস হোক সে। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে রমযানের যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: শিক্ষার্থী, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।
-কেএল