শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

স্যোশাল মিডিয়ার অবাধ ব্যবহার: আলেমদের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুহাম্মাদ আবু সালেহ।।

প্রযুক্তির জয়জয়কারের এই সময়ে প্রযুক্তি থেকে একেবারে পিছিয়ে থাকার কাজটা বেশ কঠিন। ফেইসবুক, ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, স্কাইপ, টুইটার, টিকটক, ইমু, স্ন্যাপচ্যাটসহ বিভিন্ন ধরণের সোসাল মিডিয়া বর্তমানে জনপ্রিয়। প্রচলিত সোসাল মিডিয়াগুলোকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা- বলা যায় এখন প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। দৈনন্দিন জীবনের নানাবিদ কারণে এবং প্রয়োজনে সোসাল মিডিয়া এখন অনেককেই ব্যবহার করতে হয়।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মিডিয়ার সাথে থেকেই আমাদের চলতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ই সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্নজনের বিভিন্ন অবস্থা অবলোকন করে ব্যথিত না হয়ে পারা যায় না।

বিশেষ করে অন্য আর দশজন জেনারেল শিক্ষিত সাধারণ মুসলিমের ছোটখাট অসঙ্গতিকে সাধারণ বিষয় মনে করে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও হাফেজে কুরআন এবং আলেম উলামার এইক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সতর্কতা একান্তভাবেই কাম্য। ফেইসবুক, ইউটিউব কিংবা এই জাতীয় অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপ্রয়োজনে নিজের স্টাইলিশ ছবি বা ভিডিও ইত্যাদি পোস্ট দেয়ার সাথে একজন হাফেজে কুরআন কিংবা আলেমের কী সম্পর্ক থাকতে পারে? এই জিনিষ ইদানিং প্রায়শই চোখে পড়ে। প্রায়ই বলি কেন? এগুলো এখন বলা চলে অহরহই দেখতে হয়।

বিশেষ করে, ফেইসবুক খুললে বিরক্ত না হয়ে পারা যায় না। 'দাঁড়ানো মোটর সাইকেলের সাথে ঠেঁস দিয়ে দাঁড়িয়ে' স্টাইলিশ একটা ছবি, আর তার নিচে ক্যাপশনে লেখা, 'মাত্র জুমুআর নামাজ পড়িয়ে বের হলাম'।

বাহ! এই ছবি আর ক্যাপশনের অর্থ কি? কী বুঝানো হচ্ছে এই পোস্ট এর মাধ্যমে? কী প্রকাশ করার চেষ্টা করা হচ্ছে এই ছবির মাধ্যমে? নিজের বড়ত্ব? গৌরব? অহংকার? আত্মমর্যাদা? এই দ্যাখো, আমি ইমাম হয়ে গেছি, খতিব সাহেব হয়েছি - এসব প্রকাশ করার প্রচেষ্টা নয় কি এগুলো?

আজ সাধারণ মানুষও এসব দৃশ্য দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। হতাশায় নিমজ্জিত হন। আফসোসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। যুগ ও জাতির অধঃপতনের কারণ কিংবা লক্ষন বলে ধরে নিতে বাধ্য হন। আলেম উলামাদের প্রতি তাদের লালিত শ্রদ্ধা, অন্তরের গহীনে পুষে রাখা ভালোবাসা ধীরে ধীরে উবে যাওয়ার পেছনে এসবের কি কোনোই দায় নেই? প্রিয় বন্ধু, বিষয়গুলো ভাববার সময় বোধ হয় এখনই।

প্রিয় হাফেজে কুরআন, প্রিয় আলেম, প্রিয় শিক্ষার্থী তালেবে ইলম বন্ধু, দিনকে দিন আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মননশীলতা লোপ পাচ্ছে।

আমাদের শালীনতা, শৃঙ্খলাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শ্রদ্ধা, সম্মান এবং সম্প্রীতির জায়গাগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। পারস্পারিক সম্পর্কেও চীড় ধরছে ক্রমান্বয়ে। অনেক অসঙ্গতি, অনেক বিচ্যুতি, অনেক ভ্রান্তি এসে দখল করে নিচ্ছে আমাদের সুকুমারবৃত্তির স্থানগুলো। শিষ্টাচারের সত্যিকারের অভাব প্রকটাকার ধারণ করছে নিত্য এবং নিয়মিত। কিন্ত কেন? কেন এমন হচ্ছে?

মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে দেখে ক্রমশঃ ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়ছি কেন আমরা? নিতান্ত বিেবেকের দংশনেই আজ কলম ধরতে বাধ্য হচ্ছি না বলা কিছু কথা ব্যক্ত করার জন্য।

আপনার কল্যানকামী ও শুভাকাঙ্খী হিসেবেই কথাগুলো বলতে চাচ্ছি, আশা করি, ক্ষুব্ধ হবেন না, এড়িয়ে যাবেন না, ভুল বুঝবেন না- জুমুআর নামাজ পড়িয়ে থাকলে নিশ্চয়ই উত্তম একটি কাজ করেছেন, কিন্তু সেটা বলে বেড়ানোর কি আছে? ইমামতি করে গর্ব করার কি থাকতে পারে? খতিবের মত মহান একটি দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য আপনি লাভ করেছেন, এটা তো আপনার খোশ কিসমত, এর জন্য তো মহান রব্বে কারিমের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা প্রয়োজন।

এর জন্য তো নিজেকে আরও শানিত করা প্রয়োজন। আরও পরিশীলিত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা দরকার। এই কাজের জন্য স্টাইল করে নায়কদের মত বুক টান করে ছবি তুলে পোস্ট করতে হবে কেন? ফেইসবুক ইউটিউবের মত পাবলিক মিডিয়ায় নিজের ছবি বা ভিডিও দিতে হবে কেন? এটা কি খুবই দৃষ্টিকটু নয়?

শুধু দৃষ্টিকটুই বা বলি কি করে, ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিভঙ্গিরও বরখেলাপ নয় কি এইসব কালচার? বিশেষ করে একজন হাফেজে কুরআন কিংবা আলেমের জন্য, দ্বীনের ধারকবাহকের জন্য, যারা নিজেদেরকে ইসলামের দায়িত্বশীল ভাবতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই ধরণের কাজ করা কতটুকু শোভনীয় হতে পারে?

নিতান্ত প্রয়োজনে ইসলামী শরিয়ত ছবি ব্যবহারকে জায়েজ করেছে এটা ঠিক, কিন্তু চেহারা দেখানোর উদ্দেশ্যে, নিজের পাবলিসিটি ও প্রচারের জন্য, নিজের বড়ত্ব জাহির করার জন্য, কারণে-অকারণে ছবি পোস্ট করার এই প্রবণতা হাফেজ বা আলেম তো দূরের ব্যাপার, সাধারণ ধার্মিক কোনো মুসলিমেরও কোনক্রমেই থাকা উচিত কি?

আমরা কেন একটু সতর্ক হয়ে চলার চেষ্টা করছি না? আমাদের কেন এই গাফলতের অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়া? কেন শরিয়তের প্রতি এমন উদাসীনতা? কেন? কেন?? কেন, প্রিয় বন্ধু???

প্রিয় বন্ধু, আপনাকে তো মনে রাখতে হবে, আপনি অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত। আপনাকে দেখে অনেকেরই সুযোগ থাকা উচিত কিছু না কিছু শেখার। আপনাকে ভাবতে হবে যে, নিজের অজান্তেও আপনি আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে অনেকের জন্য একজন শিক্ষক। সমাজের জন্য, জাতির জন্য, প্রজন্মের জন্য আপনাকে প্রতিটি পা ফেলতে চিন্তা করতে হবে যে, আমি যা করছি তা ইসলামে অনুমোদিত কি না।

আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে, আমি যে কাজগুলো করছি তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার পছন্দের কি না। আপনাকে প্রতিটি কাজের জন্য যুগ এবং জাতির অনুকরণীয় অনুসরণীয় আদর্শ মনে করতে হবে নিজেকে।

আচার-আচরণে আপনি এমন ভাব ও ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না, যা প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনাচার এবং সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। যে আচরণ বিরুদ্ধবাদীদের সাথে নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো করেননি, তা আপনিও করতে পারেন না, বিষয়টি সর্বদাই আপনাকে মনে রেখেই জীবন পরিচালনা করতে হবে।

সুতরাং, অনলাইন কিংবা অফলাইন যা-ই বলেন না কেন, সর্বাবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে নববী আদর্শকে নিজের আচরিত প্রতিটি কর্মকান্ডে ফুটিয়ে তুলতে হবে। বিশেষতঃ মিডিয়ার সর্বব্যাপী সয়লাবের এই সময়ে সোসাল মিডিয়ায় এলেই ইসলামের পক্ষের লোক যেমন পাওয়া যায়, বিরুদ্ধবাদী বন্ধুদের দেখাও অহরহই মেলে এখানে।

তাদের বক্তব্য-বিবৃতি কিংবা মতামত ইসলামের বিপক্ষে যেতেই পারে। আর এগুলো দেখলেই সেসব স্থানে যাচ্ছেতাই প্রতিক্রিয়া ছুঁড়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের জ্ঞানের, সহনশীলতার এবং ধৈর্য্যের দৈন্যতা প্রদর্শন করা আপনার কোনক্রমেই উচিত নয়। ধৈর্য্যধারণ করে সম্ভব হলে উত্তম কথায় তাদের প্রশ্নের জবাব দিন, অন্যথায় অপারগতায় নিরবতার পথ অবলম্বন করুন।

অনর্থক ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত হওয়া কিংবা গালিগালাজ করে অথবা অশ্লীল ও অশ্রাব্য বাক্য ব্যবহার করে তাদের কথায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকুন।

প্রিয় বন্ধু, মনে রাখবেন, আপনার উদ্দেশ্য যতই ভালো হয়ে থাকুক না কেন, ইসলামের পক্ষে আপনি কথা বললেও আপনার শালীনতাবোধ, আপনার সৌন্দর্য্যপ্রিয়তা, আপনার ভদ্রতা এবং সর্বোপরি মানবিকতাকে পরিহার করে ইসলামকে রক্ষার দায়িত্ব আপনাকে কিন্তু কেউ প্রদান করেনি। ইসলাম ধর্মের যিনি স্রষ্টা সেই মহান আল্লাহ তাআ'লার নিকটও নিঃসন্দেহে এই ধরণের পন্থা গ্রহনীয় কিংবা পছন্দনীয় নয়।

সুতরাং, কেউ যদি অশ্লীল ভাষা প্রয়োগে ইসলাম ধর্ম, মুসলিম জাতি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা, রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কুরআনুল কারিম, হাদিসসহ আপনার জাতিসত্ত্বা কিংবা ঈমান আকিদা বিষয়ক বিষয়াদি নিয়ে অন্যায়ের আশ্রয় নিয়ে কটুক্তি কিংবা অশ্লীল বাক্য প্রয়োগে অভদ্রজনোচিত আচরণ প্রদর্শন করেও থাকেন; সেসবের উত্তরেও আপনি অশ্লীলতার আশ্রয় নিতে পারেন না, ইসলাম আপনাকে এই অনুমতি দেয়নি, প্রিয় বন্ধু।

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাস্তব জীবনে এমনটা কখনো করেননি। তিনি মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে কোনও দিনই দিতেন না। আর আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য্য এখানটাতেই। এই সৌন্দর্য্য থেকে আমরা আজ নিজেদেরকে বঞ্চিত করছি, দূরে সরিয়ে রাখছি বলেই ইসলামের দৈন্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন।

ধরুন, আপনি মুসলিম বলে কোনো লোক অশ্লীল ভাষা প্রয়োগে আপনাকে গালি দিয়েছে, অথবা এমন আপত্তিকর কথা বলেছে, যা ইসলাম ধর্মকে অবমাননার শামিল, এই কাজটি করে সে নিঃসন্দেহে একটি অপরাধ করেছে। এখন কথা হচ্ছে, সেই ব্যক্তি তো একটি গর্হিত অপরাধ করেছে কিন্তু আপনি যদি তার কথার মত করেই তাকে জবাব দিতে ইচ্ছে পোষন করেন, তাহলে তো আপনাকেও একই ধরণের শব্দ চয়ন করেই তাকে গালিগালাজের প্রত্যুত্তর প্রদান করতে হবে, তাকে বা তার ধর্মকেও গালি দিতে হবে, তো, আপনি যদি এমনটা করেই বসেন, আপনিও তো তার মত করে একই অপরাধে সমান অপরাধী বানিয়ে নিলেন নিজেকে।

নিজেকে আপনিও তো তার পর্যায়ে নামিয়ে নিলেন, তাই নয় কি? সুতরাং, এই ধরণের কাজ করার কোনো সুযোগ আপনার আদৌ আছে কি, প্রিয় বন্ধু? একটু কি ভেবে দেখা উচিত নয়?

দারস তাদরিসের সাথে যুক্ত প্রিয় মুদাররিসবৃন্দকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথেই বলতে চাই, আপনারা মহান একটি খিদমতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করছেন।

পার্থিব চাওয়া পাওয়ার অনেক কিছু থেকে নিজেদেরকে অতিব সতর্কতার সাথে নিরাপদ দূরত্বে রাখতেও কুন্ঠা বোধ করছেন না। এই প্রচেষ্টা যে অব্যাহত রাখছেন, এতটুকু আশা অন্ততঃ করতেই পারি। প্রিয় শ্রদ্ধেয়! মনে রাখতে হবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বিশেষ অনুগ্রহের কারণেই এই খিদমতে যুক্ত থাকার সুযোগ লাভ করা সম্ভব হয়েছে- দয়া করে এই অনুভূতিটুকু সর্বাবস্থায় অন্তরে জাগ্রত রাখুন। মহান প্রতিপালক রব্বে কারিম আপনাদের এই খিদমতে বারাকাহ দান করুন।

দ্বীনি এসব খিদমাতকে কবুল করে দুনিয়া এবং আখেরাতে আপনাদের চেহারা উজ্জ্বল করুন। আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনাদের সন্তানতুল্য অতি আদরের শিক্ষার্থীদের কিতাবি ইলমের প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি তাদের প্রাকটিসিং লাইফের বিষয়টিও মাথায় রাখার যত্নবান হোন। এর জন্য বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর পরিবর্তিত সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বাস্তবভিত্তিক কিছু বিষয়কে দয়া করে এড়িয়ে না গিয়ে সেগুলোতেও যতটুকু না হলেই নয়, অন্তত:পক্ষে একটু আধটু টাচ দেয়ার চেষ্টা করুন। সদয় হয়ে অন্ততপক্ষে একটু আধটু ইঙ্গিত দিয়ে হলেও তাদেরকে যুগের সাথে পেরে ওঠার মত যোগ্যতা নিয়ে বড় হবার সুযোগ প্রদান করে তাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টিদানে সচেষ্ট হোন।

প্রিয় শ্রদ্ধেয়, প্রসঙ্গতঃ যে কথাগুলো না বললেই নয়, আপনাদের সান্নিধ্যে থাকাবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিশ্চয়ই মোবাইল ফোন, কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না, অথবা, বলা অযৌক্তিক হবে না যে, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম ফলো করার কারণেই এই সুবিধা তাদেরকে প্রদান করার সুযোগ আদৌ থাকেই না।

আমরাও এই নিয়মের সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করি। বরং, এরকম নিয়ম সকল প্রতিষ্ঠানেরই থাকা উচিত বলেও মনে করি। কারণ, কঁচিকাচাদের হাতে এন্ড্রয়েড ফোন আর ল্যাপটপ তুলে দেয়ার পরিণাম নি:সন্দেহে সুখকর কিছু যে হবে না, তাতে বোধ করি কেউই দ্বিমত পোষন করবেন না। এর অনেক প্রমান ইন্টারনেট, এন্ড্রয়েড ফোন ইত্যাদি আসার পরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। সুতরাং, সন্দেহ নেই যে, বিষয়টির স্বীকারোক্তি মুখে অনেকে না করলেও, বাচ্চাকাচ্চা থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কল্যান চিন্তায়ই প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে তাদেরকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার চেষ্টা যে প্রায় সর্বত্রই করা হয়ে থাকে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

তবে এ কথা সত্য যে, বিশেষ করে আবাসিক মাদরাসাগুলোতে এই নিয়ম কঠোরভাবে ফলো করা হয়। এর ফলে তাদের ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু বাস্তবতা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্বাস করুন, এই নিয়ন্ত্রণ তো আপনাদের অধীনে তারা যতটা সময় অবস্থান করে থাকে শুধুমাত্র ততক্ষণের জন্যই। তারপরে? তার পরের সময়গুলোতে? তার পরের সময়গুলোতে, মাদরাসা থেকে ফারেগের পরে, কর্মজীবনে প্রবেশ করে তাদের তো মোবাইল ব্যবহার করতেই হয়। ফেইসবুকে একটা আইডি ওপেন করতে হয়। ইউটিউবে একটা একাউন্ট খুলে নেন কেউ কেউ।

কথা হচ্ছে, শিক্ষাজীবনের কোনও পর্যায়ে মোবাইলের ব্যবহার, ফেইসবুক ইউটিউবের ব্যবহার নিয়ে কোনো দিন কোনো কিছু না শোনা এবং না জানা একটি ভালো ছাত্রও তখন হঠাৎ করে ফেইসবুকে নিজের নামে একটি আইডি খোলার পরে কোন কিছু না বুঝার কারণে যে কোনো ভুল করে বসতেই পারেন। নিজের অজান্তে তার দ্বারা হয়ে যেতে পারে এমনও কোনো কাজ যার ফলে তাকে পড়তে হতে পারে লজ্জাষ্কর পরিস্থিতির মুখে।

যে কাজের কারণে অপমানবোধ আর অপদস্ততা তাকে জড়িয়ে ধরতে পারে আষ্টেপৃষ্ঠে। শুধু তাই নয়, অনলাইন বিষয়ক সামান্যতম জ্ঞান না থাকায় দায়িত্বজ্ঞানহীন লাইক, কমেন্টস আর পোস্ট প্রদানের ফলে তাকে পড়তে হতে পারে আইনগত বিপদাপদের ঘেরাটোপেও। সুতরাং, তাকে যেহেতু নিজের সন্তানের মত ভালোবাসেন, নিজের সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে তাকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন বছরের পর বছর ধরে। অতএব, তাকে এসব বিষয়েও নূন্যতম পরিমান জ্ঞানার্জনের সুযোগ দেয়া উচিত কি না, দয়া করে একবার যদি একটু ভেবে দেখতেন!

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ