শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ভারতের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ জয়পুরহাটে ১৫৫ মণ সরকারি চাল সহ আটক দুই তাপপ্রবাহ নিয়ে নতুন সংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর

মুজিযা, জাদু ও কারামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আনিছুর রহমান।।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রায় সকল নবী-রাসুলকে এমন কিছু অলৌকিক বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন, যা সাধারণ কোনো উম্মতকে দেননি, এবং কখনো দিবেনওনা।

ঐসকল বৈশিষ্ট্যকে আরবী ভাষায় বলা হয় “মুজিযা„ অর্থাৎ অপরাগকারী, এমন কর্ম যা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা ও কার্য শক্তিকে অক্ষম করে দেয়।

যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস বিষারদ আল্লামা ইবনুল হাযার আসকালানী রহ. লিখেছেনঃ মুজিযা হলো রাসুলগণ কর্তৃক সম্পাদিত সে সকল অলৌকিক বা অসাধারণ কার্যাবলী, যার প্রতিযোগিতা করতে সমসাময়িক যুগের মানুষ ব্যর্থ হয়েছে। (ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড)

এমনিভবে বিখ্যাত অভিধান গ্রন্থ “আল-মুজামুল ওয়াসীত”এ মুজিযার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছেঃ মুজিযা এমন অসাধারণ কাজ, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রেরিত নবী-রসূলগণের দ্বারা সংঘটিত করে থাকেন। উদ্দেশ্য নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করা।

মুজিযা এটা শুধুমাত্র নবী-রাসুলগনেরই বিশেষ গুন এবং নবুয়াতের দলীল স্বরূপ। প্রত্যেক নবীকে আল্লাহ তাআ'লা তাঁর সময়কার যুগোপযোগী করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মুজিযা দিয়েছেন।

যেমন – হজরত মুসা আ.এর হাতে লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, হজরত দাউদ আ.এর হাতে লোহা মোমের মত গলে যাওয়া, হজরত সুলাইমান আ.এর বাতাসে চলতে পারা ও সকল প্রকার জীবজন্তুর ভাষা বুঝতে পারা, হজরত ঈসা আ.কর্তৃক জন্মান্ধ ব্যক্তিকে হাত বুলিয়ে ভালো করে ফেলা, হজরত সালেহ আ.কর্তৃক প্রস্তরের মধ্যে থেকে উষ্ট্রী বের হওয়া।

আমাদের নবিজী মুহাম্মদ সা.কর্তৃক চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া, অঙ্গুলীসমূহ থেকে পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া,নামাজের মধ্যে শয়তনকে ধরে ফেলা, একটি বকরী ও সামান্য জবের রুটি দিয়ে হাজার সাহাবিদেরকে তৃপ্তিভরে খাওয়ানো,খেজুরের ঢাল তরবারীতে পরিণত হওয়া,সামনে থেকে পিছনেও সমানভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারা।

একরাতেই সাত আসমান অতিক্রম করে সিদরাতুলমুনতাহা, জান্নাত, জাহান্নাম, লৌহ কলাম সবকিছু ভ্রমণ করে চলে আসা ইত্যাদি যেগুলো আদৌ কোনো সাধারণ মানুষ থেকে প্রকাশিত হবেনা।মুজিযা প্রকাশের জন্য কোনো উপকরণের প্রয়োজন হয়না।এবং নবী-রাসুলগণের মুজিযায় বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশবিশেষ।

পক্ষান্তরে জাদুঃ জাদুকরের জাদুও এমন দেখতে অলৌকিক ও মানুষকে সাধারণত অক্ষম করে দেয়।

কিন্তু জাদু বিদ্যা,সাধারণত ধোঁকাবাজী ও ভেলকিবাজি হয়ে থাকে।আর তা কাফির-মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য এবং জাদু বিদ্যা শিক্ষা করা, কাউকে শিক্ষা দেয়া জাদুকে বিশ্বাস করা সরাসরি কবীরা গুনা ও ঈমান বিধ্বংসী কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত।

রাসূল সা. বলেন তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু হতে বেঁচে থাকো। সাহাবাগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলি কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ ১.আল্লাহর সাথে শরীক করা,২.যাদু করা ৩.হক পন্থা ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা,৪. সুদ খাওয়া,৫. ইয়াতীমের মাল খাওয়া,৬. যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা ও ৭. স্বতী-স্বাধ্বী, সরলা মুমিন নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া।’(সহিহ মুসলিম)

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-বাকারায় হারুত-মারুত নামক দুই ফিরিশতার ব্যাপারে বলেছেন “তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিতো না যে, আমরা নিছক একটি পরীক্ষা মাত্র; কাজেই তুমি কুফুরী করো না। তা সত্ত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখতো, যদ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যায়।

অথচ তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্বারা কারো অনিষ্ট করতে পারতো না। এতদসত্ত্বেও তারা তা-ই শিখত যা তাদের ক্ষতি করতো এবং কোনো উপকারে আসতো না। তারা ভালোভাবে জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে (অর্থাৎ জাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখিরাতে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত! (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২)

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, জাদু বিদ্যা কুফুরী এবং জাদুকররা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। আয়াতটি দ্বারা আরও প্রমাণিত যে, জাদু ভাল-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত জাগতিক নিয়ম ও নির্দেশেই মূলত তা প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কেননা আল্লাহ তা‘আলাই ভালো ও মন্দ সৃষ্টি করেন।

এ সমস্ত মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিগণ যারা মুশরিকদের থেকে এ ধরনের জ্ঞান অর্জন করেছে এবং এর মাধ্যমে দুর্বল-চিত্তের লোকদের উপর বিভ্রান্তির প্রহেলিকা সৃষ্টি করেছে- তাদের দ্বারা সাধিত ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল আকার ধারণ করেছে। অথচ স্মরণ রাখা দরকার আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। তিনিই তো আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম তত্ত্বাবধায়ক।

তবে জাদু বিদ্যা প্রকাশের জন্য উপকরণের দারস্থ হতে হয় এবং মুজিযা উপকরণ নির্ভর নয়। কারামতঃ কারামত অর্থও অলৌকিক ঘটনা, তবে সাধারণত কারামত প্রকাশিত হয়ে থাকে আল্লাহর প্রিয় ওলী-আউলিয়াদের থেকে।

কিন্তু কারামত প্রকাশ কখন কিভাবে হয়ে যায় ওলী-আউলিয়ারা নিজেও বলতে পারেননা, পূর্ব জানা থাকেনা তাই কারামত এটা মানুষের অজান্তে একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটে থাকে।

এমনকি প্রায় সকল মানুষ থেকেই কমবেশ কারামত পাওয়া যায়, যেমন কোনো মানুষের হঠাৎ মন চায় যে,মিষ্টি খাবে! আর তখনি দেখে তার জন্য কেউ মিষ্টি নিয়ে হাজির। মাঝেমধ্যে এমন হয় যে, মায়ের কথা মনে পড়ে! আর তখনি হুট করে নিজের ফোনে মায়ের কল ভেসে উঠে ইত্যাদি এসব কারামতের অন্তর্ভুক্ত।

কারামত এটাও কোনো উপকরণ নির্ভর নয়, এবং কারামত প্রকাশ হওয়া কোনো মানুষের ওলী হওয়ার দলীল নয়।তবে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হলো সত্যিকারের ওলী-আউলিয়াদের কারামত হক্ব বা সত্য।

আল্লাহ তাআ'লা আমাদের সঠিকটা জেনে বুঝে আক্বীদাকে পরিচ্ছন্ন রাখার তৌফিক দান করুন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইমাম ও খতীব।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ