আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবসহ ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মাধ্যমের জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসি এ নীতিমালার খসড়া তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে উচ্চ আদালত সংস্থাটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম ও ওটিটি মাধ্যমের বিষয়ে একটি প্রবিধানের খসড়া তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে।
খসড়ায় নীতিমালার প্রস্তাবিত নাম হচ্ছে, ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস’ (‘ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন রেগুলেশন-২০২১’)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর জন্য খসড়ায় যেমন অনেক নিয়মের কথা প্রস্তাব করা হয়েছে, একই সঙ্গে এসব প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্যও রাখা হয়েছে অনেক নিয়ম। যেমন- দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো মন্তব্য বা খবর প্রচার বা পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করে মন্তব্য বা কটুক্তি করা যাবে না। কোনো ধর্মের অনুসারীদের আহত করে বা আঘাত দেয়- এমন কোনো মন্তব্য বা বিষয় প্রচার করা যাবে না।
উল্লিখিত বিষয়গুলোকে ‘কমন’ বা সাধারণ ইস্যু হিসেবে খসড়ায় দেখানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এসব পোস্ট বা প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়গুলোতে ফেসবুক, ইউটিউব কর্তৃপক্ষসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনের প্ল্যাটফর্মগুলোকেও সজাগ থাকতে হবে।
এ ছাড়া নেটফ্লিক্স, হইচই, অ্যামাজন প্রাইমসহ বিনোদনের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে অশ্লীল ও অনৈতিক কোনো কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না বলেও নতুন নীতিমালার খসড়ায় বলা হচ্ছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে- এ ধরনের মন্তব্য, খবর বা কন্টেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা বিনোদন প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এটি না মানলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বিটিআরসি’র নীতিমালার খসড়ায় অন্যের পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট বিষয়কেও অপরাধ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
কেউ অন্য কারও নাম বা পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে তৎপরতা চালালে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে সমাজে হেয় করবে—এমন কোনো পোস্ট বা মন্তব্যও করা যাবে না। পোস্ট, কন্টেট বা মন্তব্য ব্লক করার প্রস্তাবও রয়েছে।
আর, যে বিষয়গুলো নিয়ে কোনো পোস্ট দেওয়া যাবে না বা কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না, সেগুলো অনলাইনে কোনো মাধ্যমে প্রচার করা হলে বিটিআরসি তা ব্লক করে দিতে পারবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে- নিষিদ্ধ কনটেন্ট ব্যবহারকারী মুছে ফেললেও, তদন্তের জন্য ১৮০ দিন সংরক্ষণ করতে হবে।
এ ছাড়া খসড়ায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে তিন জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। তাঁরা বাংলাদেশে থাকবেন। ওয়েবসাইটে এবং ফোনের অ্যাপে অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তার নাম এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ গ্রহণ করবেন। এবং ২০ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে।
এ ছাড়া আদালত ও বিটিআরসি নির্দেশ দিলে নির্দিষ্ট কনটেন্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন ‘কমপ্লায়েন্স অফিসার’ (প্রতিপালন কর্মকর্তা) নিয়োগ দিতে হবে। এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয়ের জন্য একজন প্রতিনিধি থাকতে হবে।
এ ছাড়া নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে- কেউ বিধি লঙ্ঘনকারী কোনো বার্তা আদান-প্রদান করলে আদালত ও বিটিআরসির নির্দেশ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বার্তা যিনি প্রথমে দিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তি যদি দেশের বাইরে অবস্থান করেন, তাহলে দেশে যিনি অবস্থান করবেন, তিনি ‘প্রথম’ বলে অভিযুক্ত হবেন।
বিটিআরসি নীতিমালার খসড়া সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দিয়ে জনগণের মতামত চেয়েছে। শুক্রবারের (১৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে মতামত দিতে হবে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সাংবাদিক প্রতিনিধি, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিটিআরসি মতামত নেবে এ মাসেই।
-কেএল