শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল

সেরা ফলাফল পেতে তাকমিল পরীক্ষার্থীরা যেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মাওলানা জহীরুল ইসলাম হুসাইনী।।

ভাল ফলাফল করতে হলে সারাবছর সময় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হয়। অপরিকল্পিত অনেক পরিশ্রমে সফলতা অর্জিত হয় না।

বিশেষভাবে পরীক্ষাপূর্ব প্রস্তুতির সময় সুচিন্তিতভাবে একটি রুটিন তৈরি করে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী সময় কাজে লাগাতে হবে। রুটিনটি পড়ার সময় ও পঠিতব্য বিষয়গুলোর পরিমানের মাঝে সামাঞ্জস্য বজায় রেখে তৈরি করতে হবে।

যাতে করে কোনো একটি কিতাব বা বিষয় পড়তে পড়তেই সময় শেষ না হয়ে যায়। দরস চলাকালীন সময় ও দরসের ফাঁকে ফাঁকে বহু সময় পাওয়া যায়। সে সময়ও কোনো একটি কিতাবের প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগাতে হবে।

কমপক্ষে ভালো ফলাফল প্রত্যাশী একজন সচেতন ছাত্রের ক্ষেত্রে তা অবশ্যই কাম্য। ভাল ফলাফল প্রত্যাশীদের জন্য কিছু পরামর্শ ধরা হলো।

১. কিতাবের একতৃতীয়াংশ লাগাতার অধ্যয়ন করা

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অবশ্যই সবার্ধিক অধ্যয়ন করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক অধ্যয়নের মাধ্যমেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। বড় ধরনের সফলতার জন্য অধিকতর মেহনত ও অধ্যয়ন করা অপরিহার্য। তবে অধ্যয়নের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে অধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন, প্রত্যেক কিতাবের শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ ধারাবাহিকভাবে অধ্যয়ন করা। কমপক্ষে প্রতিটি কিতাবের একতৃতীয়াংশ লাগাতার অধ্যয়ন করা। তাতে একদিকে পূর্ণ কিতাব বুঝতে সহায়ক হবে, অপরদিকে যেহেতু শুরুর একতৃতীয়াংশ থেকেই প্রায় ২/৩টি প্রশ্ন এসে যায়, সেহেতু প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতেও কোন অসুবিধা হয় না।

২. কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা

তেমনি যে কোন কিতাব অধ্যয়নের পূর্বে ওই কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে পূর্বের প্রশ্নপ্রত্রগুলো দেখা যেতে পারে, অথবা অভিজ্ঞ কারো সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে অধিক মনোযোগ দিয়ে তা অধ্যয়ন করতে হবে। বিশুদ্ধভাবে হাদীসের ইবারত পাঠ করা। অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দেখা। জটিল কোন শব্দ থাকলে তার অর্থ ও বিশ্লেষণ জেনে নেওয়া। প্রস্তুতির সময় বিগত সময়ের প্রশ্নপত্র সামনে রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায় এবং পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ হয়। পূর্ববর্তী প্রশ্নসমূহের উত্তর লিখে অনুশীলন করা সম্ভব হলে তা অনেক উপকারী। সম্ভব না হলে কমপক্ষে সমস্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়া আবশ্যক।

৩. বিভিন্ন কিতাবের সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণ করা

দাওরায়ে হাদীস সমাপনীবর্ষে কেবলমাত্র একটি শাস্ত্র (হাদীসশাস্ত্র) পড়ানো হয়। বিষয় এক হওয়ার সুবাধে প্রায় কিতাবে অনেক বিষয়ের সামঞ্জস্যতা রয়েছে। একই বিষয় একাধিক কিতাবে এসেছে। এ জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাকরারপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিতাবের সূচি সামনে রেখেই তালিকা করা যায়।

যেমন, কিতাবুত তাহারাতের মাসআলা প্রায় সব কিতাবেই রয়েছে। কিতাবুল বুয়ুয়ের মাসআলা মুসলিম (প্রথম), বুখারী (প্রথম)-এর মাঝে উল্লেখযোগ্য বিষয়। তেমনি কিতাবুস সালাত, কিতাবুয যাকাতও একাধিক কিতাবে রয়েছে। যেসব বিষয় একাধিক কিতাবে রয়েছে তার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইখতিলাফি মাসআলা। তাই ইখতিলাফি মাসআলার সমাধান জেনে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক পরিক্ষার্থীর করণীয় হলো, প্রতিটি মাসআলাকে পয়েন্টভিত্তিক জমা করা এবং প্রধান চার ইমামের মতামত ও প্রত্যেকের দলীল ভালোভাবে মুখস্ত করা। আর হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে অন্যান্য দলীলের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা কী? তা জেনে নেওয়া এবং তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ বুঝে নেওয়া।

ইখতিলাফি মাসআলাগুলোর সমাধান জানতে প্রথমে আরবি শরহগুলোকেই গুরুত্ব দেওয়া। যেমন আওজাযুল মাসালিক ফি শরহি মুয়াত্ত মালেক এবং আল্লামা ইউসুফ বিননুরী (রহ.)-এর মাআরিফুস সুনান। আল্লামা শাব্বীর আহমদ ওসমানী (রহ.)-এর ফতহুল মুলহিম এবং আল্লামা তকী ওসমানী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর তাকমালাতু ফতহিল মুলহিম এবং আল্লামা খলীল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.)-এর বাযলুল মাজহুদ ফী শরহি আবি দাউদ অধ্যয়ন করা। যদি আরবি শরহ দেখা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত উর্দু শরাহ দেখে হলেও সমাধান বের করতে হবে। যেমন আল্লামা তকী ওসমানী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত দরসে তিরমিযী, মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) রচিত তুহফাতুল আলমায়ী ও তুহফাতুল কারী, আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত তাসহীলুত তিরমিযী, আল্লামা রফীক আহমদ (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত ইফাদাতুল মুসলিম ও ঈযাহুল মিশকাত, আল্লামা আবুল হুসাইন (রহ.) রচিত তানযীমুল আশতাত আল্লামা ওসমান গনী সাহেব রচিত নসরুল বারী ইত্যাদি মুতাআলা করা। কেউ বাংলায় উত্তর দিলে বাংলা শরহগুলো পড়া। উল্লিখিত অনেক ব্যাখ্যাগ্রন্থ এখন বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। সেগুলো সংগ্রহ করে অধ্যয়ন করা এবং সেখান থেকে বাংলা উপস্থাপনা ও লেখার সাজানো-গুছানোর পদ্ধতি আয়ত্ব করা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, দেখে দেখে অধ্যয়ন করার পর চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মনে মনে অধ্যয়ন করা। অথবা হাঁটা-চলার সময় বিশেষ বিশেষ মাসআলা ও এ সম্পর্কীয় ইখতিলাফ ও দলীল স্মরণ করা। যদি স্মরণ না হয়, তা হলে পুনরায় কিতাব দেখা। তাতে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে অন্তরে বসে যাবে। আর যদি সম্ভব হয়, তা হলে আকওয়াল ও দালায়েল নোট করা। যেন পরীক্ষার দিন অতি সহজেই আরেকবার নজর দেওয়া যায়।

৪. কিতাবের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা

প্রিয় বন্ধুরা! চতুর্থ যে বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা হলো হাদীসের প্রতিটি কিতাবেই কিছু স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। এগুলো পৃথকভাবে সমাধান করা। হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষার বিন্যাস অনুসারে প্রত্যেকটি কিতাবের স্বতন্ত্র বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ।

লেখক- সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হানীফিয়া বাঘিবাড়ী, মনোহরদী,নরসিংদী।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ