শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

১১ কারণে আলেমদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যোবায়ের ইবনে ইউসুফ।।

নবীজি সা. বলেছেন, ইবাদতের ফজিলতের চেয়ে ইলমের ফজিলত অধিক বেশি। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ১/১৭১।) এই ইলম যারা বহন করেন তাদেরকে আলেম বলে। অন্যদের থেকে আলেমদের মর্যাদাও অধিক বেশি। জেনে নেয়া যাক, ঠিক কী কী কারণে তাদের মর্যাদা এতো বেশি: -

এক. জ্ঞানী এবং মূর্খ সমান নয়। ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক মহামূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ যার আছে, সে আলেম। যার নেই, সে জাহেল। আলেম এবং জাহেল সমান নয়। যা আমরা জেনেছি কুরআন মাজিদ থেকে।

এরশাদ হয়েছে, 'বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান? বোধসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।' (যুমার: ০৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অথবা আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?' (রা‘দ: ১৬)।

দুই. নবীদের উত্তরাধিকারী। ওহী প্রেরণ করার মাধ্যমে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়ত বা জ্ঞানের নাম ওহী। নবী-রাসূলগণের সেই ইলমে ওহীর উত্তরাধিকারী হলেন আলেমগণ।

নবীজি (সা.) বলেছেন, 'আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান নি। বরং তারা রেখে গিয়েছেন কেবল ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে বিশাল অংশ গ্রহণ করেছে।' (আবু দাউদ: ৩৬৪১)।

তিন. সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। আলেমদেরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এবং আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিবেন। (সূরা মুজাদালা: ১১)।

নবীজি সা. বলেছেন, 'যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, এবং আলেমদের বা জ্ঞানীদের মর্যাদা-অধিকার বুঝে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' (মুসনাদে আহমদ: ৫/৩২৩)।

চার. আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি। আলেমগণ ইলমে ওহীর বাহক। এই ইলম বা জ্ঞান যে কেউ অর্জন করতে পারে না। আল্লাহ যার কল্যাণ চান এবং যাকে মনোনীত করেন, কেবল সে-ই তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান বা বুঝ দান করেন। (মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৭)।

কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্তুত, জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না' (বাকারা: ২৬৯)।

পাঁচ. সমগ্র সৃষ্টি দোয়া করে। আলেমদের জন্য সমগ্র সৃষ্টিকুল দোয়া করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য সমগ্র সৃষ্টি; এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করে। (ইবনে মাজাহ: ১৯৭)

ছয়. আলেমের মর্যাদা আবেদের চেয়ে বেশি। আলেমের মর্যাদা ইবাদতকারীর চাইতে অধিক বেশি। নবীজি (সা.) আলেম কে পূর্ণিমার চাঁদের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আলেমগণের মর্যাদা আবেদগণের উপর তেমন, যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকাসমূহের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮২)। অন্য হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর তেমন, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর’। (তিরমিজি: ২৬৮৬)।

সাত. ইলম বিতরণের সওয়াব। ইলম বিতরণকারী, তার উপর আমলকারীর সমপরিমাণ নেকী লাভ করবেন। এই কারণে আমলকারীর থেকে কোনো সওয়াবও কমানো হবে না।

নবীজি (সা.) বলেছেন, যদি কেউ কোনো ইলম শিক্ষা দেয়, তবে সেই শিক্ষা অনুসারে যত মানুষ আমল করবে, সকলের সমপরিমাণ সওয়াব ঐ ব্যক্তি লাভ করবে, কিন্তু এতে তাদের সওয়াবের কোনো ঘাটতি হবে না।' (ইবনে মাজাহ: ১/৮৮)। অন্য এক হাদীসে নবীজি (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম শিক্ষা দিবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করবে। তবে আমলকারীর ছওয়াব থেকে সামান্যতমও কমানো হবে না' (ইবনে মাজাহ: ২৪০)

আট. সর্বোত্তম ব্যক্তি
আলেমরা মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কেননা তারা দ্বীনি ইলম শেখেন এবং অন্য কে শিক্ষা দেন। এই জন্যই নবীজি বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে কুরআন মাজীদ শিখে এবং শিক্ষা দেয়।' (তিরমিজি: ২৯০৭)

নয়. সমাধান জেনে নেওয়ার নির্দেশ
আলেমদের মর্যাদা আল্লাহতালা সমুন্নত করেছেন। কোনো বিষয় না জানলে, আলেমদের নিকট জেনে নিতে বলেছেন। এরশাদ হয়েছে, 'অতএব আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করো; যদি তোমাদের জানা না থাকে।' (নাহাল: ৪৩)

দশ. আল্লাহর প্রশংসার পাত্র। আলেমদের প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা করেছেন। কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে, মূলত আলেমগণই তাঁকে ভয় করে' (ফাতির: ২৮)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (আলে ইমরা: ১৮)

অন্য আয়াতে এসেছে, পক্ষান্তরে যারা জ্ঞান ও বিদ্যায় অভিজ্ঞ, তারা বলে, আমরা তার প্রতি ইমান এনেছি, সবই আমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে। সত্য কথা এই যে, কোনো জিনিস হতে প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাই গ্রহণ করে (আলে ইমরান: ৭)।

এগার. মৃত্যুর পরেও চালু থাকবে সওয়াব। আলেমের ইলম দ্বারা যতো মানুষ উপকৃত হবে, তিনি সে অনুযায়ী সওয়াব পেতে থাকবেন। এমনকি মৃত্যুর পরেও তার সওয়াব বন্ধ হবে না।

নবীজি সা. বলেছেন, যখন কোনো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের সওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসলিম: ৩/১২৫৫)।

মুহাদ্দিস: আল জামিয়াতু সাকিনাতুল উলুম মহিলা মাদ্রাসা। শিবচর, মাদারিপুর। খতিব: ফুকুরহাটি মধ্যপাড়া জামে মসজিদ। ভাঙ্গা, ফরিদপুর।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ