শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

ভালোবাসা হোক আল্লাহর জন্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নাঈম উদ্দীন জামী:।। ভালোবাসা’ হলো অন্তরের অনুভূতি, আত্মার তৃপ্তি, মনের প্রশান্তি। মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রতি প্রেম ভালোবাসা থাকাটা স্বাভাবিক। মানবীয় গুনাবলি বিকাশের মূলেও রয়েছে বিশ্বাস, প্রেম ও ভালোবাসা। এই ভালোবাসার কারনেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে পারে।

কিন্তু এ ভালোবাসা যদি অশ্লীল হয়, দুনিয়ার কোনো স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্য থাকে তখন জীবন হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়, শূলের চেয়েও বিষাক্ত। অথচ এই ভালোবাসা যদি হয় নিঃস্বার্থ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তবেই আমরা পেতে পারি এক সুন্দর জীবন, হতে পারি সৌভাগ্যবান, রবের প্রিয় বান্দা এবং কেয়ামতের দিন হতে পারি নবীগণের মুগ্ধতার পাত্র। যেমন, নবী সা. বলেছেন— ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি আছে যারা নবী নয় এবং শহীদও নয়।

অথচ কেয়ামতের দিন নবীগণ এবং শহীদগণ তাদের দেখে আশ্চর্য হবেন এবং মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাবেন। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা হবে? নবীজি (সা.) বললেন, তারা এমন কিছু ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে।

আত্মীয়তার সূত্র ধরে নয় কিংবা টাকা-পয়সার সম্পর্কের কারণেও নয়। আল্লাহর কসম! তাদের চেহারা হবে পবিত্র নূরে উদ্ভাসিত, আর তারা থাকবে প্রভুর নূরের আচ্ছাদনে। মহাপ্রলয়ের দিন তারা শঙ্কিত হবে না, যখন সবাই থাকবে ভীতসন্ত্রস্ত। আর তারা হবে না দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।’ (আবু দাউদ: ২৪২৭)

এছাড়াও ছাড়া আল্লাহর জন্য অপরকে ভালোবাসে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করবেন যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যকে ভালোবেসেছিল, তারা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দান করব।’ (মুসলিম : ২৫৬৬)।

সুবহানাল্লাহ! যেদিন সূর্য মাথার এক বিঘা কিংবা একহাত উপরে অবস্থান করবে, মানুষ বিক্ষিপ্ত হয়ে চারদিকে ঘুরবে সেদিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দানের ওয়াদা করছেন। বান্দার জন্য এর চেয়ে বড় খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হমুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না। (বুখারী ৩৯১)।

ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও উত্তম চরিত্রমাধুর্য দ্বারা আমাদের নবীজী (সা.) জয় করে নিয়েছেন কাফের, মুশরিকসহ শত কোটি মানুষের হৃদয়। একজন ঈমানদারও তার আখলাক, ভালোবাসা ও আচার-আচরণের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করে নেয়। তিনি সবার সাথে সদ্ব্যবহার করেন। সবাইকে সমান ভাবে ভালোবাসেন। কারন, তার এ সদ্ব্যবহার ও ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দুনিয়ার কোনো পদমর্যাদা, সম্পদ ও মানুষের প্রশংসা লাভের জন্য নয়। তিনি ধনী-গরিব, ফকির-মিসকিন, রাজা-প্রজা সবার সাথেই সুন্দর আচরণ করেন।

আপনার কাছে থেকে এরা সবাই সমভাবে সদাচারণ পায় কিনা তা আমি বলতে পারবো না।, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করতে যতটা স্বাচ্ছন্দবোধ করেন, একজন রাস্তা ঝাড়ুদার বা রিকশাওয়ালার সাথে মুসাফাহা করতে হয়তো ততটা স্বাচ্ছন্দবোধ করেন কিনা, তা আমার জানা নেই।

কিন্তু আমাদের রাসূল সাঃ এর কাছে এরা সবাই ছিলো সমান। সবাই তাঁর কাছ থেকে সদাচারণ পেয়েছে। বলা যায় না, আপনি যাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন, যার উপর অহংকার করছেন সে ঐ ব্যক্তি থেকে হাজার গুন উত্তম হতে পারে যাকে আপনি সম্মান করেন, যার সাথে সময় কাঁটাতে ভালোবাসেন। রাসূল (সাঃ) কে নেক কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো।

জবাবে তিনি বলেছিলেন, নেককাজ হচ্ছে সদ্ব্যবহার করা। নবীজি (সাঃ) কে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে নেয় কোন বস্তু? জবাবে তিনি বলেন—
‘আল্লাহর ভয় ও উত্তম আখলাক’ (তিরমিজি: ২০০৪)

মানুষের ভালোবাসাও যদি হয় আল্লাহর জন্য তখন স্বয়ং আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, ‘এক ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য ঘর থেকে রওনা হলো।

পথিমধ্যে আল্লাহ এক ফেরেশতাকে মানুষের বেশে পাঠালেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে উত্তর দিল, এই গ্রামে আমার এক ভাই থাকেন। তাকে দেখতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রতি কি তার কোনো অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য যাচ্ছ? সে বলল, না।

আমি যাচ্ছি এই জন্য যে, আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। ফেরেশতা বললেন, তাহলে শোন, আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত হিসেবে এসেছি এ কথা জানানোর জন্য যে, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাস!’ (মুসলিম : ২৫৬৭)

কিন্তু সাবধান এই ভালোবাসা যেনো অপাত্রে না হয়। মনে রাখবেন, মুসলমানদের কাছে ভালোবাসার কোন দিবস নেই, প্রতিটি দিন প্রতিটি মূহুর্ত তাদের কাছে প্রেমময়-ভালোবাসাময়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে যা করা হয় তা হলো নির্লজ্জ বেহায়াপনা। ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে যুবক-যুবতিদের মাঝে জৈবিক চাহিদা পূরণ ও শারিরীক সম্পর্কের পথ সহজ করে দিচ্ছে। যার কারনে স্বতীত্ব হারাচ্ছে যুবক যুবতীরা।

মনে রাখতে হবে, বিবাহের আগে তরুণ-তরুণীর পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা, মেলামেশা, প্রেম-ভালোবাসা আদান প্রদান ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণভাবে হারাম।

সুতরাং এসব অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে না বলুন! ভালোবাসা হোক একমাত্র আল্লাহর জন্য! জয় হোক পবিত্র ভালোবাসার!

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ