শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

সরকারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা: কী ভাবছেন কওমি মাদরাসার নীতি-নির্ধারকরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।কাউসার লাবীব।।
বার্তা সম্পাদক

কওমি মাদরাসা। কয়েকশ বছর ধরে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে চলে আসছে এর শিক্ষাব্যবস্থা। উপমহাদেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা ও কারিকুলামকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বকীয়তার প্রশ্নে বরাবরের মতোই অনড়।

এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখেই ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি প্রদান করে। এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়।

কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তরকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর কমিটি তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সময়-সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।

এদিকে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ নিয়ে শিক্ষা আইনে একটি খসড়া পুনর্গঠন করা হচ্ছে, যাতে কওমি মাদরাসা থাকছে গুরুত্বের সঙ্গে। বলা হচ্ছে, ‘এই আইন সম্পন্ন হলে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে’।
সম্প্রতি এ বিষয়টি নজরে এলে নড়েচড়ে বসেন দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর সর্বোচ্চ অথরিটি আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়ার নীতি নির্ধারকরা। তারা বলছেন, স্বকীয়তার প্রশ্নে তারা সবসময়ই অনড়।

হাইয়াতুল উলিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যে ছয় বোর্ড সরকারি স্বীকৃতি নিয়েছে, তার অন্যতম একটি ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’। বোর্ডটির বর্তমান মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক আওয়ার ইসলামকে বলেন, অল্প কিছুদিন আগেই সংসদে আইন হয়ে আমাদের কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি পাস হয়েছে। পাস হওয়া আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ‘দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে’। তাছাড়া বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত মাদরাসগুলোকেই কওমি মাদরাসা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেফাক মহাসচিব মনে করেন, তাই সরকার যে আইন প্রণয়ন করে কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন নতুন করে মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে আসবে না।

‘যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন চলে আসে তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ অথরিটি ‘হাইয়াতুল উলইয়া’র অধীনে আমরা ছয় বোর্ড যেভাবে বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে বসেছি আবারো বসবো। এবং তখন আমরা আমাদের সংসদে পাস হওয়া আইনটি সামনে রেখে এগোবো’- বলেন মাওলানা মাহফুজুল হক।

এদিকে স্বকীয়তার প্রশ্নে অনড় তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ-এর সভাপতি মুফতি আরশাদ রাহমানী। তিনি বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ নিয়ে শিক্ষা আইনে যে খসড়া পুনর্গঠন করা হচ্ছে তার কোনো কপি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। তাই সেই আইনে ঠিক কী আছে তা আগে থেকেই অনুমান করে বলা কঠিন। তবে এতটুকু বলা যায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য রক্ষায় কওমি মাদরাসা কখনো আপস করবে না।

‘সম্প্রতি কথা উঠেছে কওমি মাদরাসা নিবন্ধনের। অথচ পুরো দেশের কওমি মাদরাসার পরিসংখ্যান উল্লেখ করে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী সংসদে আলোচনা করেছেন। মাদরাসাগুলো নিবন্ধনভূক্ত না হলে তো এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করা যেত না। সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ছয় বোর্ডের অধীনে থাকা মাদরাসাগুলোর সবগুলোই স্ব স্ব বোর্ডের সার্বিক নিয়মকানুন মেনেই নিবন্ধিত। তাছাড়া সরকার যখনই কওমি মাদরাসা সংক্রান্ত কোনো সহযোগিতা চায় তা আমরা নিয়ম অনুযায়ী করে থাকি। তাই নতুন করে কোনো নিবন্ধনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়’- বলেন তানযিম সভাপতি।

একই কথা বলেন জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলী ও আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর। তাদের ভাষায়, কওমি মাদরাসা স্বাধীন ছিল, স্বাধীন থাকবে। সক্রিয়তার প্রশ্নে অনড় থেকেই কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নেওয়া হয়েছে। ‘কওমি মাদরাসার স্বকীয়তায় প্রশ্ন উঠে’ এমন কোনো বিষয় আমরা পূর্বেও মানিনি, এখনো মানছি না এবং ভবিষ্যতেও মানবো না।’

তবে বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ-এর সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন বলছেন, খসড়ার কপি এখনো তো হাতে পাইনি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে আগ্রহী নই। কিন্তু আমার জানা মতে কওমি মাদরাসাকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য কোনো শিক্ষা আইন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ নিয়ে খসড়া পুনর্গঠন করা হচ্ছে না।
মাওলানা রুহুল আমীনের বিশ্বাস, কওমি মাদরাসা কখনোই সরকারের নিয়ন্ত্রণে যাবে না।

এদিকে কওমি মাদরাসার বিষয়টি সামনে আসতেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ‘কওমি মাদরাসায় কী পড়ানো হয় তা মানুষের কাছে অস্পষ্ট’। কিন্তু এ বিষয়টি মানতে নারাজ জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ আলী। তার দাবি, কওমি মাদরাসায় কী পড়ানো হয় তা একেবারেই স্পষ্ট।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন শিক্ষার শুরু হয়েছে এই কওমি মাদরাসার মাধ্যমে। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ এ কথায় একমত যে, আদর্শবান মানুষ তৈরি করে কওমি মাদরাসা। আর এ আদর্শবান মানুষ তারা কুরআন এবং হাদিসের শিক্ষার মাধ্যমেই তৈরি করে। তাই এটি একেবারেই স্পষ্ট বিষয় যে কওমি মাদরাসায় পড়ানো হয় কোরআন এবং হাদিসের বাণী।

তার মতে, আল কোরআন ও হাদিসের পবিত্রতা এবং স্বচ্ছতা সম্পর্কে এদেশের প্রতিটি মানুষেরই কমবেশি ধারণা আছে। তাই ‘কওমি মাদরাসায় কী পড়ানো হয় তা অস্পষ্ট’ এ বিষয়টি সঠিক নয়। অন্যান্য যেকোনো শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস সম্পর্কে মানুষ বেশি অবগত। কেননা এ দেশের মানুষ কোরআন এবং হাদিসকে হৃদয়ে ধারণ করে।

মানবিকতা, মানবাধিকার, সমাজ, রাষ্ট্র, স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম সম্পর্কে কওমি শিক্ষার্থীদের সচেতনতার বিষয়েও মুখ খুলেন মুফতি মুহাম্মদ আলী। তিনি মনে করেন, নিজের দেশকে ভালোবাসা, স্বাধীনতাকে রক্ষা করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। এ শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে কওমি শিক্ষার্থীরা বেড়ে ওঠে। তাই তাদের অন্তরে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা কোনো অংশেই কম নয়।

‘তাছাড়া মানবতা তো সর্বপ্রথম শিখিয়েছেই ইসলাম। কওমি মাদরাসার ছাত্রদেরকে তো শেখানো হয়, একজন মানুষকে বিপদে সহযোগিতা করা সারারাত নফল নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। একজন রোগীকে কেউ যদি সকালবেলা সেবা-শুশ্রূষা করতে যায় তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে।

এমনকি ইসলামে তো বলা হয়েছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কোনো বস্তু সরানোটাও ইমানের একটি অঙ্গ। এসব তো কওমি ওলামায়ে কেরাম শুধু মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নয়, সব জায়গায়ই বলে থাকেন এবং নিজেদের কাজের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটান’- বলেন জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব।

সাধারণ মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় চলা দেশের কওমি মাদরাসাগুলো বার্ষিক অডিট, আয়-ব্যয়ের হিসেব ও আর্থিক যোগানের বিষয়ে কতটা সচেতন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমাদের প্রতিটি বোর্ড থেকে মাদরাসাগুলোর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে যে, সরকারি রেজিস্টারকৃত অডিট কোম্পানির মাধ্যমে যেন অডিট করানো হয়। এবং মাদরাসাগুলো অডিট সম্পন্ন করার পর আমাদের বোর্ডগুলো তা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করেন।

বেফাক মহাসচিব বলেন, সে হিসাবে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি দেশের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে কওমি মাদরাসাগুলোর হিসাব-কিতাবের বিষয়টি বর্তমানে অনেকটাই স্বচ্ছ। আগেও স্বচ্ছ ছিল। তবে এই বিষয়গুলো আগে এভাবে নিয়ম-নীতির আওতাভুক্ত ছিল না। এই হিসাব কিতাবগুলো এখন আনুষ্ঠানিকভাবে করা হচ্ছে।

মাওলানা মাহফুজুল হকের দাবি, আমানতদারি ও দিয়ানতদারীর নামই হলো কওমি মাদরাসা।

সংসদে দেওয়া শিক্ষামন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত হয় এমন কওমি মাদরাসার সংখ্যা বর্তমানে ১৯ হাজারেরও বেশি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কারো কারো দাবি ‘কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বোর্ড এবং সরকারের কোনো পর্যায়ের প্রশাসনের কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তাই এগুলো ধীরে ধীরে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠছে’।

কিন্তু এ বিষয়টির ভিন্ন ব্যাখ্যা করছেন আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীমের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর। তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন, কওমি মাদরাসা হলো ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। এটি যে কেউ ইমানের দাবি থেকে যার যার অবস্থান অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারেন। কেননা এর মাধ্যমে মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে ইমান শেখানো। আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে মানুষকে পরিচিত করে তোলা। মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে তোলার জন্য তাই কারো কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। এতে সমস্যারও কিছু নেই।

তার দাবি, ঢালাওভাবে অনুমতি নিয়ে মাদরাসাগুলো গড়ে না উঠলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেই। কেননা প্রাথমিকভাবে যখন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠে তখন কোন বোর্ডের অধীনে না গেলেও পরবর্তী সময়ে এগুলো কোনো না কোনো বোর্ডের নিয়ম-নীতি মেনেই নিবন্ধিত হয়। বলা যায় নূরানী থেকে নিয়ে একেবারে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত প্রায় সবগুলো মাদরাসাই কোনো না কোনো বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত আছে। কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রিতভাবেই চলছে।

‘তাছাড়া এ প্রশ্ন তো শুধু কওমি মাদরাসা নিয়ে উঠলে হবে না। আমার জানামতে যখন কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠে তখন তো সেগুলো এমপিওভুক্ত থাকে না বা সরকারি নিবন্ধনভুক্ত থাকে না। পরবর্তী সময়ে কিছুদিন চলার পর যখন এগুলো সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন সরকার তাদেরকে নিবন্ধিত করে। একই বিষয় হয় কওমি মাদ্রাসাগুলোর ক্ষেত্রে’- বলেন মাওলানা আব্দুল বছীর।

তার মতে, প্রথম যখন কোনা কওমি মাদরাসা গড়ে উঠে তখনই তাদেরকে কোনো বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কেননা তারা কীভাবে পরিচালিত হবে? কীভাবে চলবে? আদৌ তারা প্রতিষ্ঠানটি টেনে নিয়ে যেতে পারবে কী না? সেটি স্পষ্ট নয়। কিন্তু যখন তারা সার্বিক নিয়ম-নীতি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, তখন তাদেরকে নিয়ম মতোই নিবন্ধিত করা হয়। আর যেসব বোর্ডে তারা নিবন্ধিত হয়, সেই বোর্ডগুলো হাইয়াতুল উলইয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছে ভালোভাবেই পরিচিত।

২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বুধবার ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল, ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলার পর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম উদ্দিন বিলটি নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই আইনে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আছে, এখানে সে ধরনের কিছু নেই। মনে হচ্ছে চাপের মধ্যে বা যেমন খুশি তেমনভাবে এটি করা হয়েছে। এই বিলটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’

এ ছাড়া বিরোধী দলের আরও কয়েকজন সদস্যের বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

পাস হওয়া আইনে বলা হয়, এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

বিলে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল জারি করা এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের আলোকে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি স্থায়ী কমিটি বলে বিবেচিত হবে এবং তা দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে। এই কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বলে বিবেচিত হবে।

‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীনে ছয়টি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থাকবে। সেগুলো হলো: বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙা, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ ও জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ।

‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর কমিটির মাধ্যমে নিবন্ধিত কওমি মাদ্রাসাগুলোতে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসারে দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা পরিচালিত হবে।

এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমানের স্বীকৃতি দেয় সরকার। এরপর এই স্বীকৃতির আইনি বৈধতা দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ১০ সেপ্টেম্বর তা সংসদে তোলা হয়। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি শেষে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ