শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

তরুণদের মাঝে দিন দিন বাড়ছে সেবামূলক তৎপরতা: কেমন ছিল প্রথম রক্তদানের অনুভূতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

রক্তদান একটি মহৎ কাজ। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এর প্রায় ৯০ ভাগই আসে স্বেচ্ছায় রক্ত দাতাদের কাছ থেকে। বর্তমানে পেশাদার রক্তদাতাদের দৌরাত্ম্য কমে এসেছে বললেই চলে।

দেশে রক্তদানে কাজ করছে বিভিন্ন  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রক্ত দেয়া নিয়ে ভয় ও নানা ধরনের বিভ্রান্তি দূর করতে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনগুলো। এ ক্ষেত্রে বেশিভাগ এগিয়ে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বর্তমানে রক্তদানের বিষয়টি আরো সহজ হয়ে উঠেছে। কারো প্রয়োজন হলে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অনেকে এগিয়ে আসেন রক্ত দিতে।

রক্তদান নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের মাঝে রয়েছে নানা ধরনের গল্প। তবে সবার জীবনে প্রথম রক্তদানের অনুভূতিটা একটু ভিন্ন, কিছুটা স্মৃতির সাথে লেপ্টে থাকার গল্প।

কুমিল্লা দেবিদ্বারের তরুণ আলেম মাওলানা আবু দারদা। নিজের রক্ত দেওয়ার প্রথম স্মৃতি, অনুভূতি তিনি জানিয়েছেন কিছুটা গল্পের আকারে।

‘দাওরা শেষে মাদ্রাসার বিদায়ী ডায়েরিতে নিজের রক্তের গ্রুপ আর মোবাইল নাম্বার যুক্ত করেছিলেন। এরপর ইফতা পড়ার সময় ডায়রিতে দেওয়া নম্বারের সূত্র ধরে রক্ত দেওয়ার অনুরোধ আসে তার কাছে। প্রথমে কিছুটা ভয় কাজ করলেও রক্তদানের মাধ্যমে মহৎ সেবায় নিজের নাম লেখাতে যাচ্ছেন এ বিষয়টি তাকে বেশ উৎসাহিত করেছিল’।

৫০কেজি ওজনের নিচে রক্ত নেওয়া হয় না। তখন এই তরুণ আলেমের শরীরের ওজন ছিল ৪৫ কেজি। তবে নিজের একান্ত ইচ্ছা ও সম্মতিতে নেওয়া হয়েছিল তার রক্ত। শেষের দিকে কিছুটা মাথা ঝিমঝিম ও দুর্বল লাগলেও পরবর্তীতে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল সব। এখন পর্যন্ত মাওলানা আবু দারদার এটাই প্রথম রক্ত দেওয়ার স্মৃতি। এরপরে আর রক্ত দেওয়া হয়নি, তবে আবারও ইচ্ছা আছে রক্ত দেওয়ার।

এহতেশামুল হক নামে আরেক তরুণ আলেম এখন পর্যন্ত ৬ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন। তবে নিকট আত্মীয়কে প্রথম রক্ত দেওয়ার অনুভূতিটা তার কাছেও কিছুটা ভিন্ন।।

তিনি জানিয়েছেন, প্রথম রক্ত দেওয়ার সময় ভয় কাজ করেছিল কিছুটা, তবে ভেতরে প্রশান্তিও ছিল বেশ। রক্ত দেওয়ার মতো মহৎ কাজে নিজের অংশগ্রহণের আনন্দের পাশাপাশি একান্ত আপনজনকে তার জীবনের বিশেষ মুহূর্তে সাহায্য করতে পারার তৃপ্তিটা ছিল অবর্ণনীয়।

এরপর আরো বেশ কয়েকবার স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেছেন এই তরুণ আলেম। প্রতিবার রোগীর আত্মীয়-স্বজনের আচরণে অভিভূত হয়েছেন। অনেকেই তাকে অবাক করে স্পেশাল গিফট পাঠিয়েছেন যা তার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সঙ্গে  অনেকের অসদাচরণের বিষয়টিও আলোচনা হতে দেখা যায় প্রায় সময়। রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মাঝে এ নিয়েও ভয় কাজ করে। এক্ষেত্রে কুমিল্লা সদরের নোয়াপাড়া মোহাম্মদিয়া সুন্নিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আশরাফুল ইসলাম  জানিয়েছেন, জীবনের প্রথম রক্ত দিয়েছিলেন তিনি একজন মুমূর্ষু রোগীকে। এক ধরনের আত্মতৃপ্তি কাজ করেছিল তার ভেতরে। পরবর্তীতে সেই রোগী মারা গিয়েছিলেন বলে খবর পেয়েছিলেন তিনি। এতে বেশ মর্মাহত হয়েছিলেন এই তরুণ আলেম।

‘রক্ত দেওয়া সেই  রোগী নিকটাত্মীয়ের কেউ ছিলেন না তবে রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে তার সাথে এক ধরনের হৃদয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এ কারণে হয়তোবা তার মৃত্যুর খবর আমাকে মর্মাহত করেছিল’ বলছিলেন মাওলানা আশরাফুল ইসলাম।

এরপরে আরো একবার রক্ত দিয়েছেন তিনি। তবে প্রথমবার রক্ত দেওয়ার সময় রোগীর স্বজনদের আচরণ কেমন হবে এ বিষয়টা নিয়ে কিছুটা ভীতি কাজ করে ছিল বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে রক্তদান নিয়ে কাজ করছে বেশ কিছু সংগঠন। ২০০৯ সালে পঞ্চগড় জেলায় শুরু হয়েছিল রক্তবন্ধু নামে একটি সংগঠনের কার্যক্রম। প্রথমে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু হলেও বর্তমানে ৬৪  জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এর কার্যক্রম।  ‘আমরা রক্তবন্ধু, রক্তের সম্পর্ক গড়ি’ শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে রক্তবন্ধু । কোন ব্লাড ব্যাংকে  রক্ত সংগ্রহ করে রাখে না সংগঠনটি। তবে অনলাইন অফলাইনে তাদের ডোনারদের তালিকা রয়েছে।

রক্তবন্ধুর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন তাসনিমুল বারী নবীন। তিনি আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, ‘৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে রক্তবন্ধুর কার্যক্রম। কারো প্রয়োজন  হলে তারা সহজে ডোনারদের থেকে রক্ত নিতে পারছেন। রক্তবন্ধুর ওয়েবসাইটে প্লাটিলেট দাতাদের আলাদা ক্যাটাগরি আছে, এ কারণে রোগীর স্বজনরা ভোগান্তি ছাড়াই সহজে রক্ত সংগ্রহ করতে পারছেন’।

তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে রক্তদানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠছে৷  স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা অনেক বেড়েছ ‘ ৷

[caption id="attachment_245430" align="alignnone" width="400"] রক্তবন্ধুর পরিচালক তাসনিমুল বারী নবীন ।[/caption]

‘রক্তবন্ধু’র প্রতিষ্ঠাতা তাসনিমুল বারী নবীন আরো বলেন, ‘রক্তবন্ধু’ দেশজুড়ে রক্তদাতাদের একটি বৃহত্তর সংগঠন ও প্লাটফর্ম। ‘রক্তবন্ধু’তে রেজিস্ট্রেশন করে যে কেউ এর সদস্য হতে পারেন। এছাড়া প্লেস্টোরে রক্তবন্ধুর একটি অ্যাপসও রয়েছে। তবে এখানে শুধু রক্ত দাতাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। অন্যরা চাইলে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ভিজিট করতে পারেন’।

বাংলাদেশে এই কাজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম ১৯৭৭ সালে শুরু করে মেডিকেল ও ডেন্টাল ছাত্রদের সংগঠন সন্ধানী৷ এখন এটি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান৷ ঢাকায় একটি ৬ তলা ভবনে তারা কাজ করে৷ আর পুরো কাজই হয় স্বেচ্ছাশ্রমে৷ সন্ধানী বছরে গড়ে ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে৷ তারা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই রক্ত সংগ্রহ করে ব্লাড ব্যাংকে রাখে৷ আবার কেউ যদি তাদের রোগীর জন্য সেচ্ছায় রক্তদাতা নিয়ে আসে, সেই রক্ত সংগ্রহ করে রোগীকে পৌঁছে দেয় সন্ধানী৷

এটি / এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ