মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
ঘটনাটি খলিফাতুল মুসলিমীন হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর। হজরত যায়েদ বিন আরকাম রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর একজন গোলাম ছিলো।
যে শস্য আদান—প্রদানের কাজ করতো। সে এক রাতে হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর জন্য খাবার নিয়ে আসে। (খিদে বেশি থাকায়) তিনি সেখান থেকে একটি লোকমা খেয়ে নেন।
হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর অভ্যাস ছিলো— তিনি প্রতিদিন খাবারের নিয়ে আসলে খাবার কীভাবে কোথায় থেকে এসেছে— যাচাই—বাছাই করতেন। তারপর তিনি সেই খাবার গ্রহণ করতেন।
কিন্তু এই দিন তিনি যাচাই না করেই খাবার খেয়ে নেন) বিষয়টি গোলামের কাছে নতুন হওয়ায় সে হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললো, আপনি তো প্রতিদিন রাতে খাবার নিয়ে আসলে খাবারের তথ্য জানতে চান, আজ রাতে যে সেটি করেননি? উত্তরে তিনি বলেন, বেশি খিদে পাওয়ায় আজ সেটি করতে পারিনি। আচ্ছা! এখন বলো, এই খাবার তুমি কোথায় থেকে নিয়ে এসেছো?
উত্তরে গোলাম বললো, আমি জাহিলিয়াত যুগে একটি কওমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা আমার কাছে তাবিজ চাইলো। জাহিলিয়াত যুগের মন্ত্র দ্বারা আমি তাদেরকে তাবিজ দিই। তারা আমাকে বিনিময়ে কিছু দেওয়ার ওয়াদা করেছিলো।
আজ যখন তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তারা একটি অনুষ্ঠানে ছিলো। তারা আমাকে দেখে ওই তাবিজের বিনিময় হিসাবে অনুষ্ঠানের খাবার দিয়ে দেয়। সেই খাবার আপনি খেয়েছেন।
হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গোলামের এই কথা শুনে আফসোস করে বলতে শুরু করেন, ‘তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে দেওয়ার পায়তারা করেছো’।
এই কথা বলে তিনি উক্ত খাবার পেট থেকে বের করার জন্য মুখের ভিতর হাত প্রবেশ করিয়ে দেন। তিনি বমি করার জন্য অনেক চেষ্টা—তদবির করেন। কিন্তু কোন ভাবেই বমি করতে পারছিলেন না। তাঁর কষ্ট দেখে বলা হলো, পানি খাওয়া ছাড়া বমি করতে পারবেন না। তিনি পানি নিয়ে আসতে বলেন। পানি নিয়ে আসা হলো। তিনি পানি পান করে করে বমি করতেছিলেন। এইভাবেই ধাপে ধাপে বমি করে পেটে চলে যাওয়া উক্ত খাবারকে বের করেন।
তাঁর এমন কষ্ট দেখে অন্যদের দয়া হলো। তারা বলতে লাগলো, আল্লাহ তায়ালা আপনার উপর দয়া করুন। এই সামান্য খাবার গ্রহণ করার জন্য আপনার এতো কষ্ট ওঠাতে হয়েছে। উক্ত কষ্টের জন্য এই খাবারটিই মূলত দায়ি। তাদের কথা শুনে তিনি বলেন, ‘যদি এই খাবার বের না হতো, তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে হলেও উক্ত খাবারকে বের করে ছাড়তাম’।
কারণ, আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে শরীর হারাম দ্বারা গঠিত হয়েছে, তা জাহান্নামের অধিক উপযুক্ত’। সুতরাং আমার শরীরে উক্ত লোকমা দ্বারা কোন কিছু গঠিত হোক— এই ভয় চলে এসেছে। তাই আমি নিজের উপর চাপ প্রয়োগ করে উক্ত খাবার পেট থেকে বের করতে বাধ্য হয়েছি। সূত্র: হিলয়াতুল আওলিয়া: খ.১, পৃ.৩১।
-এটি