শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

আল্লাহওয়ালাদের নেক নজরের বরকতে যেনাকারী যখন আল্লাহওয়ালা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। হজরত মুজাফফর হুসাইন রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার ঘটনা৷ যিনি দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার মুদাররিস ছিলেন৷ ছিলেন উঁচু মাপের আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ৷

তিনি একবার জালালাবাদ বা শামেলী অতিক্রম করে কোথাও যাচ্ছিলেন৷ সেখানে অনাবাদ একটি মসজিদ নজরে আসে৷ তিনি উক্ত মসজিদে নামাজ পড়ার জন্যে ওজুর পানি নিয়ে আসতে বলেন৷ ওজু করেন৷

মসজিদ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে নামাজ পড়েন৷ নামাজ শেষ করে সেখানের একজনকে জিজ্ঞাস করলেন, এখানে কি কেউ নামজী নেই? লোকটি বললো, এইতো সামনে খান সাহেবের বাড়ি৷ তার মদ ও নারীবাজি করার নেশা৷ যদি সে নামাজ পড়তো, তাহলে তার দেখাদেখি আরো অনেকেই নামাজ পড়তো৷

তিনি খান সাহেবের বাড়িতে যান৷ তখন খান সাহেবের কাছে পতিতারা বসা ছিলো৷ সেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলো৷ তিনি খান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ভাই! খান সাহেব! যদি আপনি নামাজ পড়তেন, তাহলে আপনার দেখাদেখি আরো কিছু মানুষ নামাজ পড়া শুরু করতো৷ এতেকরে মসজিদটিও আবাদ হয়ে যেতো৷ হজরতের কথা শুনে খান সাহেব বললো, ঠিক আছে৷ আমি নামাজ পড়বো৷ তবে শর্ত হলো, আমি ওজু করতে পারবো না আর এইসব কাজ ছাড়তে পারবো না৷ হজরত বললেন, ঠিক আছে৷ আপনি ওজু ছাড়াই নামাজ পড়বেন আর এইসব কাজও চালু রাখবেন৷ কোন সমস্যা নেই৷ খান সাহেব হজরতের সাথে নামাজ পড়ার ওয়াদাবদ্ধ হলো৷

হজরত সেখান থেকে একটু দূরে এসে নামাজ পড়লেন৷ এবং সেজদার মধ্যে অনেক বেশি রোনাজারি করলেন৷ সাথীদের একজন হজরতের কাছে জানতে চাইলো, হজরত!

আজ আপনার থেকে দুটি ভিন্ন জিনিস দেখেছি যেগুলো ইতোপূর্বে দেখেনি৷ একটি হলো, আপনি মদ খাওয়া ও যিনা করার অনুমতি প্রদান অন্যটি হলো সেজদায় কান্নাকাটি৷ উত্তরে হজরত বললেন, সেজদায় আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করেছি৷ বলেছি, আয় আল্লাহ তায়ালা! আমি তো খান সাহেবকে তোমার সামনে দাঁড় করে দিয়েছি কিন্তু অন্তর আপনার হাতে৷ আপনি তার অন্তরকে পরিবর্তন করে দিন৷

ওই দিন খান সাহেবের অবস্থা ছিলো, যখন পতিতারা চলে যায়, তখন জোহরের নামাজের সময় হয়ে যায়৷ তখন হজরতের সাথে দেওয়া ওয়াদা খান সাহেবের মনে এসে যায়৷ তিনি ভাবলেন, আজ প্রথম দিন৷ সুতরাং গোসল করেই নামাজটি আদায় করি৷ আগামীকাল থেকে অজু ছাড়া পড়বো৷ তাই খান সাহেব গোসল করে পবিত্র কাপড় পরে নামাজ আদায় করলো৷ নামাজের পর বাগানে চলে যায়৷ বাগানে গোসলের ওজু দ্বারাই আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করলো৷

মাগরিব পর বাড়িতে আসেন৷ পতিতারা প্রতিদিনের রুটিন মাফিক নির্দিষ্ট সময়েই এসে হাজির ছিলো৷ তিনি খাবার খেতে ঘরে যান৷ হঠাৎ বিবির দিকে দৃষ্টি পড়ে যায়৷ তিনি বিবির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন৷ তাঁদের বিয়ের সাত বছরের মধ্যে তিনি কখনো স্ত্রীর কাছে যাননি৷ স্ত্রীর চেহারা দেখেননি৷ আজই দীর্ঘ বছর পর হঠাৎ স্ত্রীর চেহারা দেখেছেন৷ দেখেই তিনি স্ত্রীর প্রতি আসক্ত ও ভেঙে পড়েন৷ সাথে সাথে ঘর থেকে বাইরে এসে খাদেমকে বলেন, এইসব পতিতাদেরকে বিদায় করে দাও৷

আর বলে দাও, ওরা যেনো আগামীকাল থেকে এখানে কেউ না আসে৷ আর বৈঠকখানার সবকিছু ঘরের ভিতরে নিয়ে আসো৷ আজ থেকে এখানে কোন গুনাহের কাজ চলবে না৷ বলা হয়, এই খান সাহেব পরবর্তীতে এমন আল্লাওয়ালা বুজুর্গ হয়েছিলেন যে, একাধারে পঁচিশ বছর তাঁর তাহাজ্জুদের নামাজ কাজা হয়নি৷ সুবহানাল্লাহি তায়ালা৷

সূত্র: আরওয়াহে সালাসা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ