শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


দানশীলতা একটি মহৎ গুণ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল আমীন আজহার।।

যেসব নৈতিক ও চারিত্রিক সৎকর্মের ওপর কোরআনে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে বদান্যতা ও দানশীলতা অন্যতম।
আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ বিত্ত-বৈভব শক্তি-সামর্থ্য ও নেয়ামত-আশীর্বাদ আল্লাহর বান্দাদের জন্যে ব্যয় করা এবং এসবের মাধ্যমে তাদের উপকার করাকেই বদান্যতা এবং দানশীলতা বলা হয়।

অভাবগ্রস্তের জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করা, নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি এবং জ্ঞান ও যোগ্যতার দ্বারা তাদের সেবা করা, নিজে কষ্ট সহ্য করে তাদের উপকার করা এবং নিজের উপায়-উপকরণ নিয়ে মুখাপেক্ষী মানুষের প্রতি এগিয়ে যাওয়া এ সবকিছুই দান ও বদান্যতার শাখা-প্রশাখা বিশেষ।

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা দানশীলতাকে মৌলিক সৎকর্ম সাব্যস্ত করে বিভিন্ন শিরোনামে এর প্রতি তাকীদ দিয়েছেন। বলেছেন - ‘আর আমি তাদের যা কিছু দান করেছি তা থেকে তারা (আমার রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্যও) ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত নং ৩)।
অর্থাৎ কোরআনী হেদায়াতে কল্যাণপ্রাপ্ত দলের মৌলিক যেসব গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে তার একটি হল দান ও বদান্যতা।

তাফসীরবিদগণ লিখেছেন- 'অর্থ-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভব ছাড়াও আল্লাহ প্রদত্ত যে শক্তি-সামর্থ্য শ্রম ও যোগ্যতা আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণার্থে ব্যয় করা হবে সব কিছুই দানের অন্তর্ভুক্ত।

দানশীলতার প্রতি উৎসাহ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে ঈমানদারগণ! আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি তা থেকে (আমার রাহে আমার বান্দাদের জন্যও) ব্যয় কর (কেয়ামতের) সেদিন আসার পূর্বে- যাতে না থাকবে কোনো বেচা-কেনা, না কোনো বন্ধুর বন্ধুত্ব আর না কারো কোন সুপারিশ কাজে লাগবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত নং ২৫৪)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে দানের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। সাহাবায়ে কেরামও দানশীলতার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে অভাব-দুঃখীদের জন্য নিজেদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করতেন।

উরওয়া ইবনে জুবায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহু আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে বলেন- 'তাঁর কাছে যা আসত সব কিছুই তিনি দান করে দিতেন। নিজের জন্য কিছুই জমা রাখতেন না।' (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৫০৫)

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত- একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো এক স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন 'আমাদের মধ্য থেকে কে সবার আগে (ইন্তেকালের পর) আপনার সঙ্গে মিলিত হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুত্তরে বললেন- 'তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে লম্বা। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৪২০)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন- ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল!

আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি যা আগে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ জমির ব্যাপারে কী আদেশ দেন?' রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূলস্বত্ব ওয়াকফে রেখে উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পারো।’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৩৭)

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে কেবল দানশীলতার প্রতি উৎসাহই দেননি। সাথে সাথে এর উপকারিতা এবং ফজিলতের কথাও বলে দিয়েছেন-
বলেছেন- ‘আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রী তোমরা ব্যয় করবে তার লাভ ও সওয়াব তোমাদের কাছেই পৌঁছাবে। বস্তুত তোমাদের ব্যয় আল্লাহর ওয়াস্তেই হওয়া উচিত। আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রীই তোমরা আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে তোমরা তার পরিপূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হবে; তোমাদের কোনো হকই বিনষ্ট করা হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত নং ২৭২)।

তিনি আরো বলেছেন- ‘যেসব দানশীল পুরুষ ও নারী আল্লাহর পথে দান করে এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করে তাদের জন্য কেয়ামতের দিন তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হবে। আর তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।' (সূরা আল হাদিদ, আয়াত নং ১৮)

কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন- ‘যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে রাতে এবং দিনে গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে। আর না তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে, না তারা চিন্তিত হবে।’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত নং ২৭৪)।

আরো বলেছেন- যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়, যার প্রত্যেকটিতে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল। সর্বজ্ঞ।'( সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ২৬১)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো কষ্ট দূর করে দেবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কষ্টসমূহ থেকে একটি কষ্ট লাঘব করে দেবেন। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।'(মুসলিম ও তিরমিজি)

দানশীলতা মুসলিম উম্মাহর ভেতর সাম্য এবং একতার ভিত রচনা করে। দান-খয়রাতের মাধ্যমে ইমানে পরিপূর্ণতা আসে। সম্পদ পবিত্র এবং পরিচ্ছন্ন হয়। দানশীলতা মানুষকে কৃপণতা থেকে বের করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চরিত্রের অধিকারী বানিয়ে দেয়। দান-খয়রাত আত্মিক উৎকর্ষ সাধনে নিয়ামক শক্তি। এর মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। সর্বোপরি দানশীলতা মানুষকে পাপমুক্ত করে জান্নাতের পথে রাহনুমায়ী করে।

পৃথিবীতে তারাই সফল মানুষ যারা অন্তরের কার্পণ্য দূর করে মানুষের জন্য ব্যয় করে, যা একদিন তারই কল্যাণে আসবে।আর আল্লাহ এ জন্যই তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন, যা তার প্রত্যাশার চেয়েও অনেক অনেক বেশি।

সম্পদ তখনই মানুষের জন্য নেয়ামত হয় যখন সে এই সম্পদ দ্বীন ও দুনিয়ার কাজে মানবকল্যাণে ব্যয় করতে পারে। যে পথে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

লেখক: কবি লেখক ও অনুবাদক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ