শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায র. এর উপদেশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাসান মুরাদ।।

হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায র. ১৮৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিসএবং বিশ্বস্ত রাবি তথা হাদীস বর্ণনাকারী। জন্মেছেন খুরাসানে। বেড়ে উঠেছেন কুফাতে। শেষ জীবনে মক্কাতে অবস্থান করেন এবং সেখানেই ইবাদত বন্দেগীতে কাটান। হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায র. ছিলেন শ্রুতি মধুর তেলাওয়াতের অধিকারী।

তিনি অধিক পরিমানে সালাত,সিয়াম পালন করতেন। বর্ণিত আছে, শুরু জীবনে তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত। ডাকাতিই ছিল তার পেশা। অনিন্দ্য রুপসী এক নারীকে সে খুব ভালোবাসত।

একরাতে সে প্রেয়সীর সাথে দেখা করতে তিনি উদগ্রীব হলেন। প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে বাড়ির প্রাচীর টপকাতে ছিলেন। এমন সময় এক মায়াবী কন্ঠে কোরআনের তেলাওয়াত শুনতে পেলেন।

বিশেষ ভাবে সুরা হাদীদের ১৬ নং আয়াত তার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। আয়াতের অর্থ: ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য কি আল্লাহর স্মরণ তাদের অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার সময় এসে পৌঁছেনি’ তেলাওয়াতের শব্দ কানে পৌঁছতেই তিনি বিমহিত হয়ে গেলেন। বলে উঠলেন,হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যই। তারপর তিনি তওবা করলেন।অতীত জীবনের প্রতি ভীষন অনুতপ্ত হলেন। ডাকাতি ও অপকর্ম ছেড়ে অনাবাদ,বিরান স্থানে চলে গেলেন।

এক রাতের কথা। বিরান সে মরু পথ বেয়ে এক কাফেলা আসতে ছিল। হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায র. বলেন, আমি কাফেলা থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম, কে যেন বলছে “তোমরা সাবধান হও সামনে ফুযাইল ডাকাতের আস্তানা”। তখন আমি বাইরে বের হলাম। কাফেলার লোকদের অভয় দিয়ে নিজের তাওবার কথা বললাম। তখন তারা নিশ্চিন্ত হলো। এভাবেই হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়ায র. বরেণ্য বুযুর্গে পরিণত হলেন। মানুষ তার মাধ্যমে হেদায়েত পেতে লাগল এবং তার বাণী ও কর্মের অনুসরণ করতে লাগলেন।

উপদেশ: বিশেষ ভাবে তিনি বলতেন:- ১.মানুষের জন্য আমল করা শিরক। মানুষের উদ্দেশ্যে আমল করা রিয়া। আল্লাহ তোমাকে এ দুই অবস্থা থেকে রক্ষা করলে সেটাই ইখলাস।

২.আমি কখনো আল্লাহর নাফরমানী করলে তার প্রতিক্রিয়া আমার গাধা,খাদিম,স্ত্রী এমনকি ঘরের ইদুরের আচরণে প্রত্যক্ষ করি।

৩.নিশ্চিত দোয়া কবুল হবে এমন কোন সুযোগ যদি আমাকে দেওয়া হয়, তবে আমি ইমাম তথা রাষ্ট্র প্রধানের জন্য সে দোয়া প্রয়োগ করতাম। কারণ তার মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীর কল্যাণ সাধিত হয়। রাষ্ট্র প্রধান ভালো হয়ে গেলে দেশ ও দেশবাসী নিরাপত্তা লাভ করে। ৪.হযরত ফুযাইল র.নিজেকে খুবই ছোট মনে করতেন। একদিনের ঘটনা, খলিফা হারুনুর রশিদ তাকে বললেন,আপনি অনেক বড় ত্যাগী!

হযরত ফুযাইল র. বললেন, খলীফা আপনিই আমার থেকে বড় ত্যাগী! কারণ আমার ত্যাগ নগন্য দুনিয়ার ব্যাপারে, যা মশার পাখা হতেও তুচ্ছ। আর আপনার ত্যাগ অমূল্য আখিরাতের ব্যাপারে। নিশ্চয় একটি মুক্তার মায়া ত্যাগকারী উটের একটি লাদের মায়াত্যাগকারীর চেয়ে অধিক ত্যাগী পুরুষ।

৫.সমগ্র দুনিয়া যদি এমন হত যে, তার জন্য আমাকে কোন হিসাব দিতে হবে না। তবুও আমি তা থেকে এমনভাবে আতœরক্ষা করে চলতাম, যেরুপ তোমরা মৃত দেহের পাশ দিয়ে পথ চলার সময় ময়লা কাপড়ে লেগে যাওয়ার ভয়ে সতর্কতা অবলম্বন কর।

৬. সুরা মুলকের ২নং আয়াত সম্পর্কে তিনি বলেন“ আল্লাহ তোমাদের পরিক্ষা করতে চান কে উত্তম আমলকরী এর অর্থ হলো আল্লাহ জানতে চান কে অধিক ইখলাস সম্পন্ন এবং কে অধিক সুষ্ঠু কর্ম সম্পাদনকারী। সুতরাং আমল অবশ্যই ঐকান্তিকরুপে আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং নবী সা. এর অনুসরণে যথার্থ হতে হবে।
তথ্যসূত্য: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/৩৪৪,৩৪৫ পৃ.

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক,দারুস সুন্নাহ মাদরাসা,ভেড়ামারা,কুষ্টিয়া।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ