শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

ঝি ঝি ধরা: কেন ধরে, উদ্বেগের কোন কারণ আছে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম হেল্থ ডেস্ক: হাতে বা পায়ে 'ঝি ঝি ধরা' বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারণত পা বা হাতের ওপর লম্বা সময় চাপ পড়লে সাময়িক যে অসাড় অনুভূতি তৈরি হয় সেটিকেই আমরা ঝি ঝি ধরা বলে থাকি।

এই উপসর্গটির কেতাবি নাম 'টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া', ইংরেজিতে এটিকে 'পিনস অ্যান্ড নিডলস'ও বলা হয়ে থাকে।

শরীরের যে অংশে ঝি ঝি ধরে, সেখানে সাময়িক অসাড়তার পাশাপাশি এমন একটি অনুভূতির তৈরি হয় যেন অসংখ্য সুঁই দিয়ে একসাথে ঐ অংশে খোঁচা দেয়া হচ্ছে। তবে সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই অসাড়তা এবং খোঁচা লাগার মত অস্বস্তিকর অনূভুতি চলে গিয়ে স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরে আসে।

যেভাবে ঝি ঝি ধরতে পারে
সাধারণত মানুষের হাত বা পায়ে ঝি ঝি ধরার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। দীর্ঘক্ষণ বসা বা শোয়ার পর যদি হাত বা পা এমন অবস্থানে বেশ কিছুক্ষণ থাকে যেখানে সেটির ওপর লম্বা সময় ধরে চাপ পড়ে, তখন ঝি ঝি ধরার সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণত আমাদের যে ধরনের ঝি ঝি ধরার অভিজ্ঞতা হয়, তা সাময়িক এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়।

তবে বিভিন্ন কারণে দীর্ঘসময় ঝি ঝি ধরার মত ঘটনাও ঘটে থাকে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বা ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় কোনো একটি অঙ্গে অসাড়তা অনুভব করার ঘটনা ঘটতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এস এম সিয়াম হাসান বলেন, "মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত সমস্যা থেকে 'সার্ভাইকাল স্পন্ডাইোসিস' বা 'লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস' এর ক্ষেত্রে হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরার আশঙ্কা থাকে।"

এছাড়া হাতে বা পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে 'পেরিফেরাল আর্টারাল ডিজিজ' হিসেবে ঝি ঝি ধরতে পারে।

এরকম ক্ষেত্রে শরীরের ঐ অংশে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ায় মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে ঝি ঝি ধরে থাকে।

"ডায়বেটিসের কারণে ডায়বেটিক নিউরোপ্যাথি নামক একটি রোগ হয়, যার কারণে হাত পায়ে ঝি ঝি ধরে", বলেন মি. হাসান।

ঝি ঝি কেন ধরে?
ঝি ঝি ধরার অনুভূতিটা আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা রহস্যজনক মনে হলেও এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কিন্তু খুবই সহজ।

আমাদের দেহের সবখানেই অসংখ্য স্নায়ু রয়েছে যেগুলো মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অংশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞএস এম সিয়াম হাসান বলেন, "বসা বা শোয়ার সময় সেসব স্নায়ুর কোনো একটিতে চাপ পড়লে দেহের ঐ অংশে রক্ত চলাচলকারী শিরার ওপরও চাপ পড়ে। ফলে শরীরের ঐ অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে ঝি ঝি ধরতে পারে।"

স্নায়ুতে চাপ পড়ার ফলে শরীরের ঐ অংশ থেকে যেসব তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছানোর কথা ছিল, তা বাধাগ্রস্থ হয়। একইসাথে স্নায়ুগুলোও হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাওয়া থেকে বিরত থাকে যেহেতু রক্ত সরবরাহকারী শিরার ওপর চাপ পড়ে।

এরকম পরিস্থিতি থেকে যখন চাপ অপসারিত হয়, তখন একসাথে প্রচুর পরিমাণ রক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রবাহিত হয় এবং একসাথে প্রচুর পরিমাণ তথ্য মস্তিষ্কে প্রবাহিত হতে শুরু করে।

এই 'ঝি ঝি ধরা' অনুভূতিটিকে তিন ধাপে বিভক্ত করা যায়:-

প্রথমত, চাপ প্রয়োগ হওয়ার মিনিট খানেক পর তিন থেকে চার মিনিটের জন্য স্থায়ী হওয়া অস্বস্তিকর অনুভূতি, যেটিকে 'কমপ্রেশন টিঙ্গলিং' বলা হয়।

এই অনুভূতিকে অনেকে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যেন, তাদের 'চামড়ার ভেতরের অংশে পিপড়া দৌড়াদৌড়ি করছিল।'

দ্বিতীয় ধাপটি সাধারণত শুরু হয় দশ মিনিট পর। এই ধাপে হাতে বা পায়ে অসাড়তা বোধ হয় এবং যতক্ষণ স্নায়ুর ওপর চাপ থাকে ততক্ষণ এই অনুভূতি থাকে।

তৃতীয় ও শেষ ধাপটি শুরু হয় চাপ অপসারণ করার পর। এই অংশটিকেই ইংরেজিতে 'পিনস অ্যান্ড নিডলস' বলা হয়।

প্রথম দুই ধাপের তুলনায় এই ধাপটি অপেক্ষাকৃত বেশি যন্ত্রণাদায়ক, তবে সাধারণত এই ধাপে যন্ত্রণা বা ব্যাথার চেয়ে ভিন্ন ধরণের উত্তেজনা বোধ করে বলেই জানিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ।

কিছুটা ব্যথা বা যন্ত্রণার অনুভূতি থাকলেও তার পুরোটাই শারীরিক।

এই অনুভূতি কিছুক্ষণের মধ্যেই স্তিমিত হয়ে গেলেও ঠিক কোন জায়গায় এই অনুভূতির সূচনা হয়েছিল বা কোথায় শেষ হয়, সেটি নির্দিষ্টভাবে বলতে পারে না মানুষ।

ঝি ঝি ধরলে সাময়িকভাবে অসাড় হয়ে যাওয়া অঙ্গটি টানটান করে রাখলে সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যে দ্রুত ঐ অঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।

দীর্ঘকালীন প্যারেস্থেসিয়া
আমরা যেটিকে ঝি ঝি ধরা বলে থাকি সেটি সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই একই ধরণের অনুভূতি লম্বা সময় স্থায়ী হতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে এমনটি ঘটতে পারে, তা হলো -

ক. কেমোথেরাপির মত চিকিৎসার ক্ষেত্রে
খ. এইচআইভি'র ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ বা বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে
গ. সীসা বা রেডিয়েশনের মত বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শে এলে
ঘ. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব হলে
ঙ. স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে - বিশেষ করে কোনো অসুস্থতা বা আঘাতের পর
চ. অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে
ছ. বিশেষ ক্ষেত্রে চেতনানাশক ব্যবহারের পর
জ. কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
ঝ. দীর্ঘসময় ঝি ঝি ধরার মত উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

এস এম সিয়াম হাসানের মতে, ঝি ঝি ধরার মত উপসর্গ যদি দীর্ঘসময় ধরে হতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

এছাড়া কোনো অঙ্গে নিয়মিত ঝি ঝি ধরার ঘটনা ঘটলে বা বারবার ঝি ঝি ধরার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সূত্র- বিবিসি বাংলা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ