শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম: বাস্তাবতা কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী হাসান তৈয়ব।। ‘আজ বুধবার (১৭ নভেম্বর) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম । সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছেে। গাউসুল আজম বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর ওফাত দিবস বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম নামে পরিচিত।’

আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এর সবই ভুয়া। ইসলামে ফাতেহায়ে ইয়াজ-দহম বলে কিছু নেই। নামটি খেয়াল করুন তাহলেই বুঝবেন। গাউসুল আজম এবং বড়পীর শব্দদুটিও বানোয়াট।

ক. আমরা সবাই জানি, ইসলামে কারও জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালনের বিধান নেই। ওফাত দিবস পালনকারীরা এত ভক্তির সঙ্গে বড় পীরের মৃত্যু দিবস পালন করেন, অথচ বড় পীরের আসল পীর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওফাত দিবস পালন করেন না কেন?

খ. গাউস আজম শব্দটি আররি। এর অর্থ হল, সাহায্যকারী, আবেদন পূরণকারী। আজম শব্দটিও আরবি। এর অর্থ হল, বড় বা মহান। সে হিসেবে, গাউসুল আজম অর্থ হল, বড় সাহায্যকারী। [লিসানুল আরব ২/১৭৪]

উল্লেখিত অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে বড় সাহায্যকারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোনো মাখলুক বড় সাহায্যকারী হতে পারে না। কোনো মাখলুককে কেউ যদি বড় সাহায্যকারী মনে করে তাহলে তা সুস্পষ্ট কুফরি হবে। সুতরাং কোনো মাখলুকের জন্য উক্ত উপাধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। (ড. খলিলুর রহমান মাদানী)

গ. বড়পীর হযরাতুল আল্লাম শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) কে বড়পীর হয়। সন্দেহ নেই তাঁর তাকওয়া, যুহদ ও ইলম কিয়ামত পর্যন্ত আগত মুসলিমের জন্য অনুকরণীয়। তাঁর অনেক মর্যাদা আছে, কিন্তু বড়পীর শব্দ দিয়ে মর্যাদা বাড়ানোর চেষ্টা আসলে তাঁকেই অসম্মানিত করার নামান্তর। কারণ বলা হয় তাঁর পীরালি সিলসিলার গোড়া আলী বিন আবি তালিব (রা.)। আসাদুল্লাহ তথা আল্লাহর সিংহ ও ইসলামের চতুর্থ খলিফার মতো সাহাবি থাকতে উম্মতের একজন আলেম কিভাবে বড় পীর হন। হলে তো তিনিই হতেন বড়পীর।

মুহিউস-সুন্নাহ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) যদি দেখতেন তাঁর নামে ইসলামে একটি দিবস উদযাপন হচ্ছে, তাঁকে কেন্দ্র করে শিরক-বিদাতের প্রচলন ঘটছে তাহলে তাঁর আগে কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারত না।

শায়খকে রহ. শুধু বড়পীর, গাউছুল আজম বলে না, দস্তগীরও বলে। আরও অনেক কিছু বলে আমাদের অসতর্ক ও আবেগী বেদাতি ভাইয়েরা। দস্তগীর মানে হস্তধারণকারী, যিনি বিপদে হাত ধরেন তথা উদ্ধার করেন!

অথচ শায়খ (রহ.) নিজে তাঁর গ্রন্থে কবিতায় কী দারুণভাবে বলেছেন يـــــا من يشكو الخلق مصائبه ، ايش ينفعك شكواك إلى الخلق؟!! ‘হে ওই ব্যক্তি, যে বিপদের অভিযোগ করে সৃষ্টির কাছে, সৃষ্টির কাছে অভিযোগ তোমার কী কাজে আসবে?’

তিনি আরও লিখেছেন ويلك أما تستحيي أن تطلب من غير الله وهو أقرب إليك من غيره ‘তুমি বরবাদ হও, আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে চাইতে কি তোমার লজ্জা করে না, অথচ তিনি অন্য সবার চেয়ে তোমার কাছে?’

মৃত্যুশয্যায় নিজ পুত্র শরফুদ্দীন ঈসাকে অমূল্য অসিয়ত করেছিলেন, তার মধ্যে কয়েকটি বাক্য ছিল এমন
لا تخف أحداً ولا ترجه ، وأوكل الحوائج كلها إلى الله ، واطلبها منه ، ولا تثق بأحدٍ سوى الله عز وجل ، ولا تعتمد إلا عليه سبحانه ، التوحيد ، وجماع الكل التوحيد
‘কাউকে তুমি ভয় করবে না, কারও কাছে কিছু প্রত্যাশাও করবে না। সব প্রয়োজন কেবল আল্লাহর কাছেই ন্যস্ত করবে, তাঁর কাছেই সেটা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা ছাড়া কারও ওপর ভরসা করবে না। একমাত্র তাঁর ওপরই ভরসা করবে। তাওহিদ। সব কিছু সারাংশ কিন্তু তাওহিদই।’

لفتح الرباني والفيض الرحماني ص117-118،159،373 দেখুন শায়খের বিখ্যাত গ্রন্থ আল-ফাতহুর রব্বানি ওয়াল ফায়যুর রহমানি, 117-118, 159 ও 373 পৃষ্ঠা (আরবি)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ