শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


গাশতের আদবের সময় বলা প্রচলিত কয়েকটি হাদীস কি প্রমাণিত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মো. সিয়ামুল ইসলাম নামে একজন জানতে চেয়েছেন, প্লিজ হজরত নিচের ৪ টা হাদিস গাস্তের আদবে বা তাবলীগ এর ফজিলতে বলা যাবে কি?

১। আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বিকেল ঘুরাফেরা করা দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে এর চেয়ে উত্তম।

২। আল্লাহর রাস্তায় প্রতি কদমে ৭ শত নেকি ৭ শত গুনাহ মাফ ও ৭ শত জান্নাতের দরজা বুলন্দ করা হয়।

৩। আল্লাহর রাস্তায় অল্প সময় দাঁড়িয়ে থাকা পবিত্র শবে কদরে দাড়িয়ে থেকে ইবাদত করার চেয়ে উত্তম নেকি দান করেন।

৪। সাথীরা টঙ্গী মাঠের পাহারার জন্য তাশকিল করতে গিয়ে বলে থাকেন,ঐ চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না যেই চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদছে আর আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়ে জাগছে।

উত্তর-

بسم الله الرحمن الرحيم

১ম প্রশ্নের উত্তর

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার ভিতর যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬৪৮, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬১৯৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৯৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭৩৯৮, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩২৭, আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৬৬৭, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৫৮৩৫, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৭৩৫৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৬০২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৫৪৮, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৪৬৬, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-২২৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৮২০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৯৫৪৩]

হাদীসটি সহীহ। সুতরাং এ ফযীলত নিঃসন্দেহে বলা যাবে।

২নং এর উত্তর

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ যখন উসামা বিন জায়েদ রাঃ কে জিহাদের জন্য শামে প্রেরণ করছিলেন। তখন:

وَهُوَ مَاشٍ وَأُسَامَةُ رَاكِبٌ، فَقَالَ لَهُ أُسَامَةُ: يَا خَلِيفَةَ رَسُولِ اللَّهِ، لَتَرْكَبَنَّ أَوْ لَأَنْزِلَنَّ! فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا نَزَلْتَ وَلَا أَرْكَبُ، وَمَا عَلَيَّ أَنْ أُغَبِّرَ قَدَمَيَّ سَاعَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ! فَإِنَّ لِلْغَازِي بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوهَا سَبْعَمِائَةِ حَسَنَةٍ تُكْتَبُ لَهُ، وَسَبْعَمِائَةِ دَرَجَةٍ تُرْفَعُ لَهُ، وَسَبْعَمِائَةِ سَيِّئَةٍ تُمْحَى عَنْهُ

আবূ বকর রাঃ পায়ে হেটে যাচ্ছিলেন। আর হযরত উসামা রাঃ ছিলেন সাওয়ারীর উপরে। তখন উসামা রাঃ আবূ বকর রাঃ কে বললেন: “হে আল্লাহর রাসূলের খলীফা! আপনি সাওয়ারীতে উঠবেন নাকি আমি নামবো? আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি নামবে না এবং আমিও উঠবো না। এতে কি সমস্যা যে, আল্লাহর রাস্তায় আমার পায়ে কিছু ধুলাবালি লাগুক। কেননা, আল্লাহর রাস্তায় গমণকারীর প্রতিটি পদক্ষেপে সাতশত করে নেকী লেখা হয়। সাতশতটি মর্যাদা বুলন্দ হয় এবং সাতশতটি গোনাহ মাফ হয়। [আলকামেল ফিত তারীখ-২/১৯৫, তারীখে তাবারী-৩/২২৬]

সুতরাং এ ফযীলতটিও আল্লাহর রাস্তার ফযীলত হিসেবে বলাতে কোন সমস্যা নেই।

৩নং এর উত্তর

أَبَا هُرَيْرَةَ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: “مَوْقِفُ سَاعَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ عِنْدَ الْحَجَرِ الْأَسْوَدِ”

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল সাঃ বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেছেন- আল্লাহর রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা শবে কদরে হাজরে আসওয়াদের সামনে ইবাদত করা হইতে উত্তম। [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬০৩, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৯৮১, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৫৬০, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং- ২৪৩৪৮]

হাদীসটি সহীহ। সুতরাং এ ফযীলতও নির্দ্ধিধায় বলা যাবে।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ.

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে।” [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৬৩৯, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭৭৫]

হাদীসটি হাসান পর্যায়ের হাদীস। সুতরাং আল্লাহর রাস্তার প্রহরার ফযীলত বিষয়ে এ হাদীস বলাতে কোন সমস্যা নেই।

যদিও এর মূল উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদের ময়দানে প্রহরার সাথে বেশি উপযুক্ত। কিন্তু যেহেতু ফী সাবীলিল্লাহ শব্দটি আম। সেই হিসেবে দাওয়াত ও তাবলীগের সাথেও এর হাদীসটির ফযীলত বলার সুযোগ রয়েছে।

সুতরাং এ এ ফযীলত বলাতে কোন সমস্যা নেই। সূত্র- আহলে হক মিডিয়া।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ