সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিরতিকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ফুটবলারদের ওমরা পালন ধর্ষণের বিচারে শরয়ি আইন থাকলে, কোন শিশু আর ধর্ষিত হতো না: উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় ঈদে নতুন নোট বিতরণ স্থগিত ধর্ষণ এবং নারীর পরিচয় নিয়ে অবমাননায় ১৫১ আলেমের বিবৃতি ১০ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম ত্রাণ বন্ধের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল তারাবিতে ফাইভ জি স্পিডে তেলাওয়াত করবেন না: আজহারী ‘আলেমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা জিহাদ নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

কোয়ান্টাম ফিজিক্সের আলোকে নাসাবি ও রিদায়ি বিধান এক হওয়ার তাৎপর্য!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।নাসিম ইমরান।।

কোয়ান্টাম ফিজিক্স (Quantum physics) তত্ত্ব অনুসারে : "শুধুমাত্র দুইটি উপায় ব্যতীত জগতের কোন কিছুই কোনভাবেই চরম স্পর্শ করা সম্ভব নয়"।

স্পর্শ বলতে বোঝায় "দেহ ত্বক দ্বারা অনুভব করার গুণ বা ত্বগিন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুণ"। সহজ কথায় কিছু ধরা, ছোঁয়া বা ত্বক দিয়ে স্পর্শ করা। ত্বকের উপর যদি কোনো আবরণ থাকে তারপরেও তাকে সাধারণত "স্পর্শ করা" বলা হয়। যেমন মোজাপরিহিত হাত দিয়ে কলম স্পর্শ করাকে "হাত দিয়ে কলম স্পর্শ করা" বলা হয়। তবে আবরণ ছাড়া স্পর্শ এবং আবরণ সহ স্পর্শের মাঝে রয়েছে কিছু পার্থক্য। আবরণ ছাড়া স্পর্শ কে আবরণ সহ স্পর্শের চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়, বা বেশি স্পর্শ বলা হয়।

স্পর্শের সর্বোচ্চ মাত্রা হলো চরম স্পর্শ। সমস্ত ব্যক্তি, বস্তু গঠিত পরমাণু দিয়ে। পরমাণু গঠিত প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন দিয়ে। আমাদের প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন যদি অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রনের সাথে মিলে যায়/সংযোগ হয়, তাহলে তাকে চরম স্পর্শ বলা হয়।

এখন আমরা বোঝার চেষ্টা করবো যদি কোন আবরণ ছাড়াই আমরা কোন বস্তু স্পর্শ করি, তাহলে তা চরম স্পর্শ হয় কি-না।

ফিজিক্স এর ভাষায় প্রতিটি পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত। আবার যেসব সূক্ষ কণিকা দিয়ে পরমাণু গঠিত, তাদেরকে মৌলিক কণিকা বলে। মৌলিক কণিকাগুলো হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এ তিনটি কণিকা বিভিন্ন সংখ্যায় একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু গঠন করে। ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন এবং আধানহীন নিউট্রন একত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে আর এদেরকে ঘিরে ঋণাত্মক আধানের ইলেকট্রন ঘুরে।

অর্থাৎ প্রোটন, নিউট্রন একত্রিত হয়ে গঠিত নিউক্লিয়াস থাকে মাঝে আর তার চারিদিকে ইলেকট্রন ঘোরে। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস অপর পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সাথে স্পর্শ হতে পারে না। শুধু দুই পরমাণুর ইলেকট্রনের তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র একটি অপরটিকে বিকর্ষণ করে। মূলত দুই পরমাণুর মাঝে কিছুটা ফাকা থেকেই যায়।

আমরা যদি কোনো কিছু স্পর্শ করি তাহলে আমাদের পরমাণুর ইলেকট্রনের তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র ওই বস্তুর পরমাণুর ইলেকট্রনের তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র একটি অপরটিকে বিকর্ষণ করে। আর আমরা অনুভব করি যে আমরা বস্তুটি স্পর্শ করেছি। মূলত আমাদের পরমাণু আর ওই বস্তুর পরমাণুর মাঝে কিছুটা ফাকা থেকেই যায়। এবং ছোঁয়ার মাধ্যমে কোনভাবেই চরম স্পর্শ হয় না।

চরম স্পর্শ মূলত দুই মাধ্যম ব্যতীত সম্ভব নয়।

প্রথম মাধ্যম ক্রোমোজোম :
কোষের নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ নিউক্লিয় জালিকা থেকে উৎপন্ন নিউক্লিওপ্রোটিন দিয়ে গঠিত সপ্রজননশীল যে সূত্রাকার অংশ জীবের বংশগতি ও বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি প্রকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তা-ই ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোম ডিএনএ বা জীন অণু ধারণ করে এবং ডিএনএ-এর মাধ্যমে প্রোটিন সংশ্লেষ করে।

মাতৃগর্ভে একটি Ovum বা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় একটি Sperm বা শুক্রাণু। উভয়ের মধ্যে রয়েছে ডিএনএ। উভয় ডিএনএ মিলে তৈরী হয় একটি নতুন ডিএনএ। জন্ম নেয় একটি নতুন কোষ। নতুন কোষটি এরপর নিজেই নিজেকে করে বিভাজিত। এক থেকে দুইয়ে, দুই থেকে চারে, চার থেকে আটে, আট থেকে ষোলোয় কোষের সংখ্যা বাড়ে আর জন্ম নেয় নতুন অঙ্গ। হাত, পা, নাক, কান, চোখ, মুখ ... ভ্রুণ লাভ করে মানব আকার!

মানব শরীরে ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৩ জোড়া বা ৪৬ টি। সন্তানের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম, অর্ধেক আসে পিতার Sperm বা শুক্রাণু থেকে আর অর্ধেক আসে মাতার Ovum বা ডিম্বাণু থেকে। সন্তানের ক্রোমোজোম একসময় পিতা-মাতার ক্রোমোজোমের সাথে তাদের শরীরের অংশ ছিল। সন্তানের ক্রোমোজোমের মাধ্যমে তার পিতা-মাতার সাথে চরম স্পর্শ হয়। পিতা-মাতার তার সন্তানের সাথে চরম স্পর্শ হয়। (এ প্রক্রিয়ায়
স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মাঝে হাক্বীক্বী জুযিয়াত বায়যিয়াতের সম্পর্ক স্থাপন হয়। গর্ভধারণের পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে জুযিয়াত বায়যিয়াতের সম্পর্ক স্থাপন হয় মূলত মাজাযের ভিত্তিতে।)

ক্রোমোজোমের কাজ হলো মাতাপিতা হতে জিন সন্তানসন্ততিতে বহন করে নিয়ে যাওয়া। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার গঠন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ক্রোমোজোম কর্তৃক বাহিত হয়ে বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি (Physical basis of heredity) বলে আখ্যায়িত করা হয়৷

পিতা-মাতা যদি একই বংশের হয় তাহলে সন্তান ত্রুটিযুক্ত হবার ৫০% সম্ভাবনা থাকে।
আর যদি পিতা-মাতা নিকটাত্মীয় (মাহরাম) হয় তাহলে সন্তান ত্রুটিযুক্ত হবার ৭৫% সম্ভাবনা থাকে। (প্রফেসর মো. আজিজুর রহমান লস্কর, স্রষ্টা বিজ্ঞান ও ধর্ম)

মহান রাব্বুল আলামিনের বিধানে নিকটাত্মীয়ে (মাহরাম) বিবাহবন্ধন অবৈধ করার মাধ্যমে সন্তান ত্রুটিযুক্ত হবার সম্ভাবনা দুর করা হয়েছে। সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহর বিধান কতইনা বিজ্ঞানময়।

দ্বিতীয় মাধ্যম পানাহার :
আহারের পর খাদ্যবস্তু চলেযায় পরিপাকতন্ত্রে। পরিপাকতন্ত্রে পরিপাকের দ্বারা খাদ্যবস্তু ভেঙ্গে ক্ষুদ্র অণুযুক্ত জলে দ্রবণীয় খাদ্য বস্তুতে পরিনত হয় এবং তরল আকারে রক্তের মধ্যে শোষিত হতে পারে। পরিপাক একটি ভাঙ্গন মূলক পদ্ধতি যা প্রায়ই খাদ্যের ভাগাভাগির উপর ভিত্তি করে দুটি প্রক্রিয়াতে বিভক্ত হয়: যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক পরিপাক। যান্ত্রিক পরিপাক হল বৃহত্ত খাদ্য কণাকে ছোট আকারে খাদ্যের কণায় পরিণত করা যা পরবর্তীতে পাচক উৎসেচক দ্বারা অ্যাক্সেস করতে পারে। রাসায়নিক পরিপাক হল উৎসেচকের দ্বারা খাদ্যবস্তুকে ছোট অণুতে পরিণত করা যা দেহে শোষিত হয়।

এ পর্যায়ে খাদ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সালফার, ক্লোরিণ, লিথিয়াম, ভ্যানাডিয়াম, ক্রমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রণ, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, জিঙ্ক, টাংষ্টেন, মলিব্ডেনাম, সিলিকন, সেলেনিয়াম, ফ্লোরিণ, আয়োডিন, আর্সেনিক, ব্রোমিন, টিন ইত্যাদি মৌলিক উপাদান গুলো আলাদা আলাদা হয়ে মানবদেহের এ সমস্ত উপাদানের সাথে মিশে যায়। আর বর্জ্য পদার্থ মলত্যাগের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।

এভাবেই খাদ্যবস্তুর কিছু অংশ মানব শরীরের অংশ হয়ে যায় বা পানাহারের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুর সাথে চরম স্পর্শ হয়।

স্তনের দুধ ব্যতীত মানব শরীরের কোন অংশ খাদ্য উপযোগী নয়। দুধ তৈরি হয় নারীর শরীর থেকে যা নারীর শরীরের অংশ। আর এ দুধ পান করার মাধ্যমে তা পানকারীর শরীরের অংশে পরিণত হয়।

দুধ পানের মাধ্যমে দুধ মাতার সাথে দুধ সন্তানের অংশের সম্পর্ক হয় বা চরম স্পর্শ হয়, যেমনটি ক্রোমোজোমের মাধ্যমে নিজ মাতা-পিতার সাথে হয়ে থাকে।

সন্তানের নিজ মাতা-পিতার সাথে রক্তের সম্পর্ক (নাসাবি সম্পর্ক), আর দুধ মাতার সাথে দুধের সম্পর্ক (রিদায়ি সম্পর্ক) কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর দৃষ্টিকোণ থেকে অংশ বা চরম স্পর্শের ভিত্তিতে একই।

চৌদ্দশত বছরের আগে মহাজ্ঞানী রাব্বুল আলামিন কর্তৃক নির্ধারিত ইসলামী বিধানেও রক্তের সম্পর্ক (নাসাবি সম্পর্ক), এবং দুধের সম্পর্কের (রিদায়ি সম্পর্ক) বিধান একই। রক্তের সম্পর্কে যাদেরকে বিবাহ করা অবৈধ দুধের সম্পর্কেও তাদেরকে বিবাহ করা অবৈধ।

وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِنَ الرَّضَاعَةِ
তোমাদের দুধমাকে, দুধবোনকে তোমাদের জন্য বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে।
(সুরা নিসা : ২৩)

ﻳﺤﺮﻡ ﻣﻦ اﻟﺮﺿﺎﻉ ﻣﺎ ﻳﺤﺮﻡ ﻣﻦ اﻟﻨﺴﺐ
বংশ কারণে যা হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণেও তা হারাম হয়।
(সহীহ বুখারী : ২৬৪৫)

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর বিধান কতই না সূক্ষ্ম, বিজ্ঞানময়।
বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিশ্বাসকেই দৃঢ় করে। পক্ষান্তরে অবিশ্বাসীদের অন্তর ও কানসমূহের উপর মোহর, চোখসমূহের উপর রয়েছে পর্দা এবং তাদের জন্য রয়েছে চরম শাস্তি।

তথ্যসূত্র :
১. কুরআনুল কারীম।
২. সহীহ বুখারী।
৩. স্রষ্টা, বিজ্ঞান ও ধর্ম, প্রফেসর মো. আজিজুর রহমান লস্কর, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, ২০১৯।
৪. ডি অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (DNA): মুসা আল হাফিজ, Choloman24, ২৭ জুলাই ২০২১ ।
৫. মাটির গুণে মানুষের স্বাস্থ্য, আর্টিকেল: প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান।
৬. উইকিপিডিয়া
৭. The Knowledge

লেখক - শিক্ষার্থী গবেষণা বিভাগ, মাহাদুল ফিকরি ওয়দদিরাসাতিল ইসলামিয়া ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ