শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না: জাতীয় পরামর্শ সভা যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় গৃহীত হলো ৭ প্রস্তাব বারিধারায় হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ সভা শুরু ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বের কর্মকর্তারা এখনও অটল রয়ে গেছে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি: ডিসি ওয়ারী খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আল্লামা মাহমুদুল হাসানের আহ্বানে সর্বস্তরের আলেমদের নিয়ে পরামর্শ সভা শুরু মসজিদে শোরগোল নিয়ে রাসূল সা. যেভাবে সতর্ক করেছিলেন ভারতের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ জয়পুরহাটে ১৫৫ মণ সরকারি চাল সহ আটক দুই

একজন মানুষ পৃথিবীতে তিনটি সম্পর্কের মুখোমুখি হয়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মূল: আশরাফ আলী থানবী
অনুবাদ: রাকিবুল হাসান

ক. আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক। খ. কাফেরের সঙ্গে সম্পর্ক। গ. একজন মুমিনের সঙ্গে সম্পর্ক। প্রথম দুটি সম্পর্ক সামাল দেয়া সহজ; কারণ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কেবল বাড়াতে হয়, কাফেরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়।

কিন্তু তৃতীয় নং সম্পর্কের সমাধান জটিল। কারণ একজন মুমিনের দুটো গুণ; এক আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং তার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক। দ্বিতীয় সে গাইরুল্লাহ। প্রথম গুণের দাবি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, যেহেতু আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক।

অন্যদিকে সে গাইরুল্লাহ হবার কারণে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা, যেহেতু সে গাইরুল্লাহ। সম্পর্ক রাখা এবং না রাখা দুটো একসঙ্গে হয়ে গেলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। কিন্তু এই জটিল সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহাবায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচে বড় পূর্ণতা হলো—তিনি সব সম্পর্ক সুচারুভাবে সামাল দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন; এর চাহিদা ছিলো সাহাবায়ে কেরামের ওপর তার প্রতিপত্তি থাকবে। অন্যদিকে তিনি নবী ছিলেন; এর চাহিদা ছিলো সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে মনখোলা হবেন, বন্ধুর মতো মিশে যাবেন। দুইদিকে দুই সম্পর্কের টানাটানি। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটো সম্পর্কই যথাযথভাবে বজায় রেখেছেন। সম্পর্ক যত চিকন ও সুক্ষ্মই হোক, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কতার সাথে সেই সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রেখেছেন।

সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ
বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। কিন্তু সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করা তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো না। তবুও করতেন উম্মতকে শিক্ষা দেবার জন্য।

সাহাবিদের মনতুষ্টির জন্য। কেননা রাসূলের সিদ্ধান্তে সাহাবিরা মানতুষ্ট না হলে রহমত নেমে আসবে না। রহমত নেমে আসতে যেন বাধা না পায়, তাই তিনি সাহাবিদের মনতুষ্টির জন্য তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। শুআবুল ঈমানে ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে।

তিনি বলেন, মশওয়ারা তথা পরামর্শ সম্পর্কীয় আয়াত যখন নাজিল হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূল পরামর্শের উর্ধ্বে। কিন্তু এই পরামর্শকে আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের জন্য রহমতস্বরূপ বানিয়েছেন।

আরেক রেওয়াতে আছে—ইমাম আহমদ রহিমাহুল্লাহ সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর এবং ওমর রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন, কোনো বিষয়ের পরামর্শে তোমরা একমত হয়ে গেলে আমি তার বিরোধিতা করবো না।’ এই হাদীস থেকে বুঝা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কখনো কখনো পরামর্শের প্রয়োজন পড়তো।

এর উত্তর হচ্ছে—কখনো কখনো প্রয়োজন পড়তো ঠিক। কিন্তু পরামর্শের প্রয়োজন পড়াটা নবুওয়তের মর্যাদার খেলাফ নয়। বরং নবুওয়তের মর্যাদারই অংশ। আমি এখানে একটি তত্ত্ব বের করেছি। তা হলো—একদমই পরামর্শের প্রয়োজন না পড়া ‘ইলাহে’র গুণ। রাসূল তো ইলাহ না। তার প্রয়োজন পড়াটাই তার মর্যাদার অংশ।

ভালো কাজেও ইস্তেখারা করা
যে বিষয়ে আমরা সংশয়ে থাকি কিংবা যে বিষয়টি আমরা ঠিক করে উঠতে পারি না, সে বিষয়ে ইস্তেখারা করে থাকি। কিন্তু হাদীসে ভালো কাজে, যে কাজে আমাদের অকল্যান নেই জানি, সে কাজেও ইস্তেখারা করার কথা এসেছে।

হযরত যায়নাব রাদিআল্লাহু আনহাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নিজের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন, যায়নাব রাদিআল্লাহু আনহা বললেন, আমি ইস্তেখারা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।

এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, এরচে বড় সৌভাগ্য এবং খেদমতের সুযোগ আর কী হতে পারে। এখানে ইস্তেখারা করার কী হলো?

এর উত্তর হলো—অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করার সুযোগের চেয়ে বড় সুযোগ আর হয় না। কিন্তু প্রত্যেকেই খেদমতের যোগ্য হয় না। কখনো কখনো খাদেম যোগ্য হয় না, তার খেদমতে স্বস্তি পায় না মাখদুম। আবার কখনো খাদেম যোগ্য হয়, কিন্তু মাখদুমের স্বভাব-চরিত্র এতটাই সংবেদনশীল হয়, খাদেম ঠিকমতো খাপ খায় না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন দ্বিতীয় পর্যায়ের। তার সংবেদনশীলতা এতটাই বেশি ছিলো যে, যায়নাব রাদিআল্লাহু আনহা ভাবছিলেন তিনি রাসূলের খেদমত করে পুরো স্বস্তি দিতে পারবেন কিনা। এই দ্বন্দ্ব থেকেই তিনি ইস্তেখারা করতে চেয়েছেন।

এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার চেয়ে বেশি কষ্ট আর কোনো নবীকে দেয়া হয়নি।’ অথচ নূহ আলাইহিস সালামকে যে দীর্ঘ সময় কষ্ট দেয়া হয়েছে, তত দীর্ঘ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া হয়নি। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সংবেদনশীল। অন্য নবীদের তুলনায় সময়ের হিসেব কম হলেও কষ্ট পেয়েছেন সবচে বেশি। তাই তিনি এমন কথা বলেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোটা জীবনের প্রতিটি ঘটনা আমাদের জন্য আদর্শ। এখন দরকার শুধু সেই মহোত্তম আদর্শে নিজেদের জীবন রাঙিয়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ