শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


দুঃখ-দুর্দশায় মুমিনের করণীয়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মানুষ বলতেই দুঃখ-দুর্দশায হতাশায় নিমজ্জিত হয়। নানান কষ্ট যন্ত্রণায় কাতরাতে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধরতে বলেছেন। চলুন বিস্তারিত পড়ে আসি ‘দুঃখ-দুর্দশায় মুমিনের করণীয়’ শীর্ষক নিবন্ধনটি। লিখেছেন তরুণ আলেম, লেখক সাজ্জাদ হোসাইন।


দুঃখ-দুর্দশার রহস্য

মানবজীবনে দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসার বেশকিছু কারণ রয়েছে। যেমন কোন প্রিয়তম বস্তুকে হারানো, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি, কোন মারাত্মক ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়া, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুলের বাইরে চলে যাওয়া ইত্যাদি। নানা কারণে মানুষ দুঃখ পায়। এটা একটি স্বভাবজাত বিষয়। মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ।

জন্মগত ভাবেই মানুষের মাঝে এ প্রবণতা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা মান্য করা ব্যতিরেকে কারোর পক্ষেই এথেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা আজ সংক্ষিপ্ত আকারে কুরআন-সুন্নাহ থেকেএর সমাধান বের করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ

প্রথমেই আমরা আলোচনা করব এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থা কি ছিল? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত হলে কি করতেন?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী গ্রন্থাবলী পাঠ করলে আমরা জানতে পারি। যখন তার সন্তান ইব্রাহিমের ইন্তেকাল হল, তখন তিনি বললেন,

ان العين تدمع والقلب يحزن ولا نقول الا مايرضي ربنا وانا بفراقك يا ابراهيم لمحزونون (أخرجه البخاري) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরছে। আমার মন বেদনাক্লিষ্ট। তবে, আমি কেবলমাত্র আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট হন তা ব্যতীত আর কিছুই বলব না।হে ইব্রাহিম!নিশ্চয়ই আমরা তোমার বিচ্ছেদে গভীর শোকাহত। (বোখারি)

তাছাড়া হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যখন, তার কলিজার টুকরা সন্তান, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে হারালেন, তখন তিনি একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই তার দুঃখ আক্ষেপের অভিযোগ পেশ করেন। তিনি বলেন,
انما اشكو بثي وحزني الى الله (يوسف :86)

অর্থাৎ আমি কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে আমার সকল দুঃখ দুর্দশা র অভিযোগ পেশ করছি।(সূরা ইউসুফ)

তবে হ্যাঁ এই দুঃখ-দুর্দশা যদি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, এবং ব্যক্তি প্রতিটি মুহূর্তেই তা অনুভব করতে থাকে এবং সর্বক্ষণ তাঁর উপর নেমে আসা বিপদাপদ নিয়ে ভাবতে থাকে, তখনই তা মারাত্মক মানসিক রোগে পরিণত হয়। স্বতন্ত্রভাবে সে রোগের চিকিৎসা করার প্রয়োজন দেখা দেয়। মানুষ তখন তার জীবন নিয়ে চরম হতাশায় ভোগে। ঠিক সেই মুহুর্তে শয়তান তাকে নানা ধরনের প্রবঞ্চনা দিতে থাকে। এই মানসিক রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে তাকে নানা ধরনের অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত করে।

মানুষ যেন এমন দুঃখ দুর্দশার কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত না হয়এবং সীমাতিরিক্ত হতাশাগ্রস্থ হওয়ার ফলে সে গুনাহের কাজে লিপ্ত না হয় এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে পড়ে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসে বিপদাপদে সীমাতিরিক্ত হতাশাগ্রস্থ, বেদনাক্লিষ্ট হতে নিষেধ করেছেন।

এজন্যেই রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম তাঁর সাহাবা, পরবর্তী উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, তারা যেন বিপদ আপদের মুহুর্তে নেককাজ সমূহ বর্জন না করে। কেননা, নেককাজ মানুষের মনোবল ও ঈমানকে শক্তিশালী করে।

তাইতো আমরা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর ঘটনায় লক্ষ্য করি যে, তিনি তার সবচাইতে প্রিয় সন্তান ইউসুফ আঃ কে হারানোর বেশ কয়েক বছর পরও যখন তিনি তার কোন ধন মেলাতে পারেন নি তখন তিনি মারাত্মকভাবে ব্যথিত হন। তবে, তিনি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হননি। বরং বিপদগ্রস্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে তার সম্পর্ক আরো মজবুত হয়, আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাঁর বিশ্বাস আরো শক্তিশালী হয়। তিনি ধৈর্য ধারণে সক্ষম হন।

বলেন, আমি একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই আমার সকল দুঃখ বেদনার অভিযোগ জানাচ্ছি। তার এই পাহাড়সম ধৈর্যের ফলেই আল্লাহ তাআলা তার এই বিপদ দূরীভূত করেছেন এবং তাকে এমন নেয়ামত দিয়েছেন যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বিশেষত তার সেই মুহূর্তের আনন্দ যখন সুসংবাদ বাহক তার কাছে ইউসুফ আলাইহিস সালামের জামা নিয়ে আসেন।

প্রিয় পাঠক আসুন আমরা কুরআন- সুন্নাহ আলোকে জীবন যাপন করে উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তোওফিক দান করেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ