ইদানীংকালে কওমি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেড়েছে নোটভিক্তিক পড়াশোনার প্রবণতা। এতে ইলমের বুৎপত্তি অর্জনে ব্যাপক বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন তালেবে ইলমরা। শিক্ষার্থীদের নোট নির্ভরতার ক্ষতির দিক তুলে ধরে তা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছেন বাংলার মাদানী খ্যাত আল্লামা নূর হোসাইন রহ.। তার সেই নসিহত তুলে ধরা হল আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য
এখন ছাত্ররা কিতাব বাদ দিয়ে ছুটছে নোটের পেছনে! বেফাকে যেহেতু ভাল ফলাফল করতে হবে, তাহলে কী করতে হবে? নোট দেখতে হবে! সুওয়ালের জবাবগুলো সংগ্রহ করতে হবে। আমি আমাদের মাদরাসায় সেদিনও আলোচনা করেছি। বলেছি, তালিবে ইলমদের কাছে যত নোট আছে সব জমা নিয়ে নিন! কোনো নোট চলবে না। নোটের মৌলভীর এখানে দরকার নেই। সত্যিকারার্থে বনতে হলে মূল কিতাব মুতালাআ করতে হবে। মূল কিতাব মুতালাআ না করে ইলম হাসিল করা যাবে না। ‘নোট-মোট’ চলবে না। ‘‘তোমরা পরীক্ষায় পাস কর, না ফেল কর, সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমার এখানে নোট চলবে না!’’
যাইহোক, নোটভিত্তিক পড়ালেখার যে রেওয়াজ মাদরাসাগুলোতে ঢুকে পড়েছে, সেটা আরেকটা তাবাহী বটে। হযরত মাওলানা আবুল হাসান কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুর ‘তানযীমুল আশতাত’। নিঃসন্দেহে এটা তাঁর একটা ইলমী কারনামা। বড় মেহনত করে লিখেছেন। অনেক তালিবে ইলম এ ‘তানযীমুল আশতাত’ মুতালাআ করে পরীক্ষা দেয়। আর অন্য কোনো শরাহ-শুরুহাতে হাত দেয় না। এ তালিবে ইলম এ খোলাসা মুতালাআ করে কখনো ইলমী মাকাম তয় করতে পারবে না। কেন পারবে না? কারণ এক পৃষ্ঠা খোলাসার পেছনে তাঁর হয়ত পাঁচ শ পৃষ্ঠা, হাজার পৃষ্ঠা মুতালাআ ছিল। এরপর তিনি এ এক পৃষ্ঠার খোলাসা লিখেছেন। তাহলে তাঁর খোলাসার পেছনে মুতালাআ আছে পাঁচ শ থেকে হাজার পৃষ্ঠা। এজন্য এ খোলাসার পেছনে তাঁর বসীরাত আছে। কিন্তু যে তালিবে ইলম সরাসরি খোলাসা মুতালাআ করছে, শরাহ-শুরুহাত দেখছে না, তার বসীরাত হবে কীভাবে? বসীরাত অর্জন করতে হলে নিজস্ব মুতালাআ লাগবে। আগে নিজে ব্যাপক মুতালাআ করবে নির্দিষ্ট মওযুর উপর। এরপর নিজে খোলাসা তৈরি করবে। তিনি দশটা তাওজীহ করেছেন, তুমি দশটা নয়; পাঁচটাই কর। কিন্তু নিজে মুতালাআ করে খোলাসা তৈরি কর। তাহলে হবে কী, তোমারও এ খোলাসার পেছনে পাঁচশ পৃষ্ঠা মুতালাআ থাকবে। আর মাসআলার উপর তোমার বসীরাত তৈরি হবে।
এজন্য নোটভিত্তিক লেখাপড়া, এটাও তাবাহী ও বরবাদির পয়গাম। আর শুধু খোলাসা দেখে দেখে মৌলভী বনা, সেটাও তাবাহী ও বরবাদির পয়গাম। সত্যিকারার্থে মৌলভী হতে হলে তোমাকে ব্যাপকভাবে মুতালাআ করতে হবে। একই মওযুর উপরে বিভিন্ন কিতাব মুতালাআ করতে হবে।
এনটি