শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেম অন্তর্ভুক্তির দাবি হেফাজতে ইসলামের সিংগাইরে হেফাজতে ইসলামের গণসমাবেশ ২৯ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা হলে ‘হাত ভেঙে’ দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘জুলাই বিপ্লবে আলেম-শিক্ষার্থীদের অবদান ও প্রত্যাশা’ নিয়ে আলোচনা সভা সোমবার সিলেটে অনুষ্ঠিত বিহানের ‘লেখালেখি ও এডিটিং কর্মশালা’ দেশে ফিরে কর্মফল ভোগ করুন, শেখ হাসিনাকে জামায়াতের আমির রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না: জাতীয় পরামর্শ সভা যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় গৃহীত হলো ৭ প্রস্তাব বারিধারায় হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ সভা শুরু ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বের কর্মকর্তারা এখনও অটল রয়ে গেছে

বাড়ছে মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণী: প্রতিকার কোন পথে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মুফতি আলী হুসাইন।।

পাপপঙ্কিলতার আবহমান স্রুতে ভাসমান এ সমাজ, মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের শেষ প্রান্ত পৌঁছে গেছে, চারদিকে মাদকের ছড়াছড়ি, শহর-বন্দরে গ্রামগঞ্জে সমান হারে চলছে মরণনেশা ‘ইয়াবার রমরমা রপ্তানী। গাজা, হেরোইন ফেনসিডিল ড্রাগস ব্যবহারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সমাজের প্রাণ শক্তি তরুণ-তরুণীরা।

পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বিশ্ববিবেকের টনক নড়ে গেছে। জাতী সঙ্ঘের সাবেক মহা সচিব কফি আনান বিশ্ববাসীর দরবারে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করে বলেছিলেন, আসুন আমরা মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। ২৬ জুন ২০০৩ এর আন্তর্জাতিক মাদক অপব্যবহার ও অবধৈ পাচার বিরুধি দিবস এর মূল প্রদি পাদ্য ছিল Lets talk about drugs

ব্যাপক হারে এই মরণনেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ, ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্চে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো, এহন পরিস্থিতিতে যদি আপনি আপনার সন্তানের ব্যাপারে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ না হন, কিংবা সামন্যতম অবহেলা করেন, তাহলে আপনার আদরের সন্তানটি এসামান্যতম অবহেলার কারণে সমাজের দূষিত ভাইরাজে আক্রান্ত হয়ে যাবে।

মুহুর্তেই আপনার সুখ ও সন্তানের স্বপ্নীল আকাঁ ভবিষ্যত ধুলোয় মিশে যাবে। তাই আবারো বলি আত্মসচেতন হোন, শৈশবকাল থেকেই ইসলামী ভাবধারায় গড়ে তুলুন আপনার প্রিয় সন্তানটিকে, প্রাণ খুলে প্রশান্তি অনুভব করবেন, সন্তান নিয়ে কোন রকম ঝামেলা পোহাতে হবে না।

কারো সন্তান মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়লে, তাকে তালীগ জামাতে পাঠিয়ে দিন, কিংবা কোন হক্কানী আলেমেদীন ও আল্লাহ ওয়ালাল সোহবত তথা সংশ্রবে পাঠিয়ে দিন। এপদ্ধতিতে তাকে সুস্থ করে তোলা অতি সহজ হবে। আমাদের কাছে এমন হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে প্রথমে সুচিকিৎসা দিন কিংবা নিরাপদ পরিবেশের কোন মাদক নিরাময় পূণর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিন।

মাদক সেবন সমস্ত অনিষ্টের মূল-
হযরত আবু দারদা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে আমার পরম খলীল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. উপদেশ দিয়ে বলেন, কখনো মদ পান করোনা, কেননা মদ্যপান সমস্ত অনিষ্টের মূল। রাসুলুল্লাহ বলেন, আল্লাহ পাকের সুনির্ধারিত প্রতিশ্রুতি হলো তিনি যে ব্যক্তি মাদক দ্রব্য সেবন করবে, তাকে তীনাতুল খাবাল দ্বারা আপ্যায়ন করা হবে। সহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসুলে খোদা, তীনাতুল খাবাল কি? তিনি উত্তর দিলেন, জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম, পুঁজ। (সহীহ মুসলিম ২০০২)
রাসুলুল্লাহ ইরশাদ করেন, মাদক আর ঈমান কখনো একত্রিত হতে পারে না। (নাসাঈ)
তিনি আরো বলেন, নেশাজাতীয় প্রত্যেক দ্রব্যই মাদক আর সব ধরণের মাদক হারাম। (মুসলিম)

মাদক সামাজিক, শারীরিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মারাত্মক অবক্ষয় সৃষ্টি করে, আল্লাহ বলেন , শয়তান মদ ও জোয়ার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে পারস্পারিক বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করতে চায়, এবং তা তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ; সালাত থেকে দূরে রাখে । সুরা মায়েদা ৯১।

হে মুমিনগণ এইযে মদ, জোয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক সরঞ্জামসমূহ এগুলো শয়তানের অপবিত্র কাজ বৈধ নয়? তাই এসমস্ত বিষয় থেকে তোমরা বেঁচে থাকো। তাহলে নিশ্চত তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হবে। মায়েদা ৯০

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তী ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ, সুতরাং বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কামাল মুহিত বলেন, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাজা, ঘুমের ওষুধ পেথেন্ড্রীন, ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষতি জীবনে বিরাট ধ্বস নামিয়ে দেয়।

এই ক্ষতিগুলোকে আমরা চারটি স্তরে ভাগ করতে পারি।

১. দৈহিক ক্ষতি;
ক. চোখের মণি সংকাচিত হয়ে যেতে পারে, দেখার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে।
খ. ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। যক্ষ্মা হতে পারে, ব্রংকাইসিস হতে পারে। ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস।
গ. হার্ট, বুকের ঢিবঢিব বা হৃদ স্পন্দন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, কমে যেতে পারে, হৃদপিন্ডের কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, হার্ট বড় হয়ে যেতে পারে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতেপারে, কিংবা হার্টব্লক হয়ে যেতে পারে।
ঘ. রক্তকণিকা, রক্ত কণিকার সমস্যার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যে কোন সহজ কারনেই আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যেতে পারে।
ঙ. লিভারের সমস্যা যেমন জন্ডিস , হেপাটাইটিস বি সিরোসিস এমনকি ক্যান্সারও হয়ে যেতে পারে।
চ. পরিপাক তন্ত্র, পরিপাক তন্ত্রের সমস্যার মধ্যে খাবারের রুচি কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা হওয়া, অ্যাসিডিটি আলসার কোষ্ঠকাঠিন্য এমনকি আমাশায়ও হতে পারে।
ছ. প্রজনন ও যৌন ক্ষমতা প্রাথমিক অবস্থায় যৌন ইচ্ছা একটু বাড়লেও পারফমেন্স বা দক্ষতা বাড়েনা, পরবর্তী সময়ে ইচ্ছাও লোভ পেতে থাকে, বীর্য কমে যেতে পারে, শুক্রকীটের পরিমাণ কমে যেতে পারে, সৃষ্টি হতে পারে বিকলাঙ্গ শুক্রকীট। ফলে সন্তান জন্ম দানে ব্যর্থ হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে, কিংবা বিকলাঙ্গ প্রতিবন্ধি শিশু জন্ম নেয়ার আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায়না।
জ. এছাড়া যৌন রোগ সিফিলিস ও মারাত্মক এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
ঝ. তক, অপরিচ্ছন্নতার কারনে খোসপচড়া, চুলকানী বিভিন্ন ছত্রাক রোগ হতে পারে, সুই ব্যবহারকারীদের তকে ঘা ফোড়া বা রক্তবাহী নালীতে প্রদাহ কিংবা ইনফেকশন হতে পারে।

২. মনের ক্ষতি: মাদকের প্রভাবে মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হয় মস্তিস্কের ক্ষমতা, ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মানসিক প্রক্রিয়া যেমন আবেগ চিন্তা পোষণ, স্মরণশক্তি ইত্যাদি, আচরণে ফুটে ওঠে অস্বাভাবিকতা, ছাত্র-ছাত্রীরা অমনোযোগী হয়ে যেতে পারে। আর অমনোযোগীতার কারণে তাদের স্মৃতির ভিত দুর্বল হয়ে ওঠতে পারে, মেজাজ চড়া থাকবে অস্থিধরতায় ডুবে থাকবে, কিংবা উদ্যমের অভাবে অলসতার কারণে কাবু হয়ে যেতে পারে, মানব মনের প্রধান একটি পিলার আবেগ, এটি অনিয়ন্ত্রণের কারণে উগ্র মেজাজের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, অ্যাংজাইটি ডিস অর্ডার হতে পারে, প্রত্যক্ষণ ও চিন্তার জট ধরার কারণে সেজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে, আসক্তদের আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যায়, এমনকি ব্যক্তিত্বেরও বিপর্যয় ঘটে।

৩. সামাজিক ক্ষতি, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নেশাখুরদের সামাজিক জীবন, পারিবিারিক শান্তি হারিয়ে যায়, মায়ামমতা ভালবাসার অভাবে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, ছোটদের প্রতি আদর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা, বৈবাহিক জীবনের মূল অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুস্কর, ভেঙ্গে যায় সোনালী সংসার।

আসিক্তর কারণে রোগি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, দাওয়াতে যায়না কিংবা মেহমান এলে তার কোন ভাবান্তার ঘটেনা, সবাইকে এড়িয়ে চলে, তবে আসক্তিদের সাহচর্যে ভাল থাকে সে । তাদের সংশ্রবে থাকতে উদগ্রীব হয়ে থাকে সে । নেশাখুররা খুব সহজে ঢুকে অপরাধ জগতে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, এমনকি নিরপরাধ যুবসমাজকে বসে এনে দলে ভেড়ায়।

৪. আধ্যাত্মিক ক্ষতি: মাদকাসক্তের নৈতিক মূল্যবোধ সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায়। একাকার হয়ে যায় ন্যায়-অন্যায় বোধ। অনবরত মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে। অন্যায় আচরণের জন্য অনুশোচনায় ভুগে না। তাদের মনে তীব্র হতাশা কাজ করে। আধ্যাত্মিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়, মাদকাসক্তির আগের মানুষ আর পরের মানুষের মাঝে আমুল পরিবর্তন ঘটে। যেনো নিজের মাঝে জেগে ওঠে অন্য একদানব। এই দানব পৃথিবীর সব অপরাধ ঘটাতে পারে।

লেখক- মুহাদ্দিস, মারকাযুল ফিকহিল ইসলামী উত্তরা,ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ