শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা হলে ‘হাত ভেঙে’ দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘জুলাই বিপ্লবে আলেম-শিক্ষার্থীদের অবদান ও প্রত্যাশা’ নিয়ে আলোচনা সভা সোমবার সিলেটে অনুষ্ঠিত বিহানের ‘লেখালেখি ও এডিটিং কর্মশালা’ দেশে ফিরে কর্মফল ভোগ করুন, শেখ হাসিনাকে জামায়াতের আমির রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না: জাতীয় পরামর্শ সভা যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় গৃহীত হলো ৭ প্রস্তাব বারিধারায় হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ সভা শুরু ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বের কর্মকর্তারা এখনও অটল রয়ে গেছে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি: ডিসি ওয়ারী খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল

মাতা-পিতা সন্তানের রোল মডেল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।আলী হুসাইন।।

মাতা-পিতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়, কারন পিতা-মাতাই সন্তানের নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু, আশ্রয়স্থল। ভয় বা ভীতিকর কোন কিছুর আঁচ পেলেই সে দৌঁড়ে আশ্রয় নেয় তার পিতা-মাতার কাছে। তারা যা বলে, তারা যা কিছু করে তাই তার কাছে প্রিয় ও সঠিক।

[caption id="" align="aligncenter" width="339"]No description available. মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত কিতাবাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]

কোন অভিভাবক কোমলমতি শিশুর সামনে ভয়-ভীতি, রুঢ়তা-ভীরুতা দুঃসাধ্য, ব্যর্থতা, দ্বিধা-দ্বন্দ এসব কোন কিছুই প্রকাশ করবে না। কেননা ঐসকল আচরন শিশুর মন-মস্তিষ্কে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, মার্জিত রুচিবোধ, সুস্থ মন-মানসিকতা, শিশুর খাদ্র-বস্ত্র, বাসস্থান, শারিরীক সুস্থতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আত্মিক পরিশুদ্ধতা, চারিত্রিক উৎকর্ষতা, নীতি নৈতিকতার শিক্ষায় কোন শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না।

মনে রাখার উচিৎ, শিশুর কোমল ও নরম মন কাদামাটির মত, এসময় তাকে নিজের মত করে গড়ে তোলা সম্ভব।

তাই অভিভাবকের কর্তব্য প্রথমে নিজে উপরিউক্ত গুনাবলি অর্জন করা। সন্তানের সাথে সর্বদা সু-সম্পর্ক ও সদ্ব্যবহার বজায় রাখা। সদভাব ও সু-সম্পর্কের অভাবে পিতা-মাতার সাথে শিশুর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর একবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেলে যা হবার তাই হয়।

সাধারনত সকল শিশুরাই অনুকরন প্রিয় হয়ে থাকে, পৃথিবীতে মাতা-পিতাই তাদের সবচাইতে কাছের আপনজন। তাই মাতা-পিতার প্রত্যেকটি আচরন শিশুরা অনুকরণ করে থাকে। সে চেষ্টা না করলে তার মানসপটে বা অবচেতনে মাতা-পিতার প্রতিটা আচরন পাথর অঙ্কিত হয়ে থাকে। এবং সময়ে যথাসময়ে সেগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

শিশু একটু বেড়ে উঠলে ছেলে সন্তান সাধারনত পিতার অনুসরন করে থাকে আর মেয়েরা অনুসরন করে মায়ের। আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আপনি যদি নামাযে দাড়ান দেখবেন যে, আপনার অবুঝ শিশুটিও দেখে দেখে আপনার অনুসরন করছে। যদি কোরআন তিলাওয়াত করেন, তাহলে আপনার আদরের শিশুটিও কোরআন তিলাওয়াত করা শিখবে।

পক্ষান্তরে আপনি নিজেই যদি নামায না পড়েন বা তিলাওয়াত না করেন বরং টিভি, সিনেমার সামনে সবসময় বসে থাকেন, নিজেকে গান শুনার মাঝে লিপ্ত রাখেন তাহলে আপনার অবুঝ শিশু এই বিষয়গুলি অনুসরন করতে থাকবে ।

ভেবে দেখবেন কি? তার জীবনের মূল ভিত কিসের উপর নির্মান হচ্ছে। সেদিন দেখলাম পথিমধ্যে একভদ্র মহিলার কোলে দুই-আড়াই বছরের ফুটফুটে একটি শিশু। পাশের দোকান থেকে গানের আওয়াজ আসছে। এই ছোট্ট শিশু গানবাদ্যের কি বুঝে?। তারপরও দেখলাম গানের তালে তালে হাত-পা নাড়াচ্ছে। এ অবস্থা দেখে মা তো খুশিতে বাগ বাগ।

আমি খুব বিস্মীত হলাম, ছোট্ট অবুঝ একটি শিশুর মাঝে এ আচরন কিভাবে এলো? সে তো পিতা-মাতার কাছ থেকেই শিখেছে। ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার একজন মহান ব্যাক্তি ও দেশ বরেণ্য আলেম, আল্লামা গিয়াসুদ্দীন রহ. যিনি বালিয়ার পীর বা শায়খে বালিয়া নামে পরিচিত। তিনি জ্বীন-ভূতের চিকিৎসায় খুব খ্যাত ছিলেন, একবার একটি ছোট শিশুকে চিকিৎসার জন্য তার নিকট উপস্থিত করা হলো, শিশুটির সমস্যা ছিল, তাকে যখন টেলিভিশনের সম্মুখে উপস্থিত করা হয় তখন সে স্বাভাবিক কথা বলে, ফুর্তি করে, লাফালাফি করে, সাধারন বাচ্চারা যা করে।

[caption id="" align="aligncenter" width="437"]No description available. মাকতাবাতুত তাকওয়ার প্রকাশিত কিতাবাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]

কিন্তু যখনই টেলিভিশনের সামনে থেকে সরিয়ে রাখা হয়, তখন থেকে কারো সাথে কোন কথা বলে না; একেবারেই চুপসে যায়, যেন সে জন্মগত বোবা বা বধীর। পীর সাহেব তার অবস্থার আদ্যোপান্ত শুনলেন এবং তার অন্তরদৃষ্টির দরুন বুঝতে পারলেন, এ সমস্যা মূলত মা থেকে সৃষ্টি, তাই তিনি শিশুর মাকে চিকিৎসা দিলেন আর তার প্রাথমিক চিকিৎসা হল বেত্রাঘাত।

আশ্চর্য ঘটনা
প্রহারের চোটে মা’র মুখ থেকে যে তথ্য বেরিয়ে এলো তা শুনলে আপনি অবাক বনে যাবেন। “ আমি এবং আমার হাসবেন্ট দুজনেই চাকুরিজীবী বাসায় আর কেউ নেই, নাস্তা করার পর স্বামী অফিসে চলে যায় আর আমি তার একটু পরে অফিসে যাই। যেহেতু বাসায় কেউ নেই তাই টেলিভিশন ছেড়ে দিয়ে এই বাচ্চাটিকে তার সামনে বসিয়ে রাখি এবং দরজা তালাবদ্ধ করে অফিসে চলে যাই। এভাবেই চলতে থাকে দীর্ঘদিন ।

আমরা বিষয়টি ইতোপূর্বে টের পাইনি। এখন দেখছি সে টিভির সামনে থাকলে খুব ভালো; কোন সমস্যা নেই কিন্তু টিভির সামনে থেকে সরিয়ে নিলেই নির্বাক স্তব্ধ হয়ে যায় কোনরুপ কথাবার্তা বলে না।

কিন্তু দেখুন এই অবুঝ শিশুর স্মৃতিপটে টিভি নামক বস্তুটি কিভাবে গ্রাস করে নিয়েছে। যেন তার জীবনের রক্ত মাংসে খাদ্যের মতই ভূমিকা পালন করে চলছে এই টেলিভিশন। শিশুর মন কাদা মাটির মত নরম, এ নরম কোমল মস্তিষ্কে যা লাগে তা গিথে যায় , প্রত্যেক পিতা-মাতার নিম্নোক্ত নেতিবাচক দিকগুলি এড়িয়ে চলা উচিৎ..

এড়িয়ে চলুন
১. কেউ ধুমপানে অভ্যস্থ হলে কখনো সন্তানের সামনে ধুমপান করবেন না।
২. সন্তানের সামনে কাউ কে গালি-গালাজ করবেন না।
৩. সন্তানের সামনে স্ত্রী কে শ্বাসন করবেন না , স্ত্রীকে প্রহার করবেন না । গালি গালাজ করবেন না তবে ভাল দিকগুলি তার সামনে উপস্থাপন করতে বাধা নেই এবং ভাল কাজগুলো তার সামনে বেশি বেশি করা উচিৎ । যেমন.. পিতা-মাতার সম্মান প্রদর্শন, তাদের ভালবাসার নমুনা, বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, বাড়ির আঙিনা ও তার চারপাশ আবর্জনা পড়ে থাকলে তা পরিষ্কার করা, খাবারের পূর্বে হাত ধোয়ার অভ্যাস করানো।

খাবারের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা, খাবার শেষ করার পর আলহামদুল্লিাহ বলা । আবর্জনার প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি করা, খাবার পর হাতের আঙুল কিভাবে চেটে খেতে হয়, প্লেট কিভাবে পরিস্কার করতে হয়, রান্নাঘর কিভাবে পরিস্কার রাখতে হয়, ময়লাযুক্ত কাপড় পরিধান না করা, ইত্যাদি স্বভাব সূলভ আচরন নিয়মিত ব্যায়াম/মেসওয়াক করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি ।

লেখক-মুহাদ্দিস, মারকাযুল ফিকহিল ইসলামী, উত্তরা ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ