শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

বেহেশতি জেওর: কোটি মুমিনের হৃদয় জয় করা একটি গ্রন্থ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এমদাদুল হক তাসনিম।।

ভারত উপমহাদেশে পবিত্র কুরআনে কারিমের পর সবচেয়ে সমাদৃত গ্রন্থ সম্ভবত বেহেশতি জেওর। মাসয়ালা-মাসায়েলের এই সিরিজগ্রন্থটি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। প্রায় শত বছর আগে লেখা গ্রন্থটির আবেদন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। এখনও সাধারণ দীনদার মুসলিমরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের ধর্মকর্ম শেখার জন্য গ্রন্থটিকে অন্যতম প্রধান অবলম্বন হিসেবে বেছে নেন। বিগত শতাব্দীর সেই চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের দীন সম্পর্কে জানার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পঠন-পাঠন সামগ্রী ছিল না।

মকসুদুল মুমিনিন, বারো চাঁদের ফজিলত আর নেয়ামুল কুরআন জাতীয় কিছু বইপত্র প্রচলিত থাকলেও এর বিশুদ্ধতা নিয়ে ছিল যথেষ্ট প্রশ্ন। চরম সেই শূন্যতার সময়টিতে মুজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. বেহেশতি জেওর কিতাবটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। ইমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত সেই গ্রন্থটি দীনদার শিক্ষিত মুসলমানদের ঘরে ঘরে স্থান করে নেয়।

এরপর সময় গড়িয়ে গেছে অনেক। ইসলামকে জানার জন্য পঠন-পাঠন সামগ্রীতে বিপুল সমৃদ্ধি ঘটেছে। অনুবাদ ও মৌলিক মিলিয়ে প্রচুর বইপত্র এখন পাঠকের হাতের নাগালেই রয়েছে। কেউ এখন ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে অন্তত বইপত্রের অভাব বোধ করে না। উৎকর্ষের এই সময়েও বেহেশতি জেওর এখনও দীনদার মুসলমানদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য অবলম্বন। সহজ ভাষায় দীনি মাসয়ালা-মাসায়েল জানার জন্য এখনও মুসলমানরা দ্বারস্থ হয় বেহেশতি জেওরের। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহর দরবারে মকবুল হওয়া একটি গ্রন্থ।

প্রায় শত বছর ধরে ব্যাপক সমাদৃত এই বেহেশতি জেওর কিতাবটি উর্দু ভাষায় রচিত হানাফি মাজহাবের একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ঈমান-আকিদা বা মানুষের ব্যক্তিগত আমল যেমনÑ ওজু, নামাজ, রোজা ইত্যাদি থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সব সমস্যার সমাধান রয়েছে গ্রন্থটিতে।

এমনকি সাংসারিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ও কিতাবটিতে স্থান পেয়েছে। কিতাবটি দশ খ-ে প্রকাশিত হলেও আমাদের দেশে তিন খ-েই সবগুলো একত্রে পাওয়া যায়। কিতাবটির শেষ খ-ে কিছু নেককার নারীর জীবনীও স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে কিছু রোগ-বালাইয়ের প্রতিকার ও টুটকার কথা বলা হয়েছে গ্রন্থটি। এটি কওমি মাদরাসার পাঠ্যসিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে কিতাবটি নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিতাবটির লেখক হিসেবে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহ.-এর নাম প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত আছে। যদিও তিনি কিতাবটির মূল লেখক নন। তবে তাঁর তত্ত্বাবধানে এটি সংকলিত হয়েছে এবং তাঁর নামের কারণেই এতো ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। কেননা উম্মতের প্রতি তাঁর দরদ ও ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। এজন্য তাঁকে হাকিমুল উম্মত বা উম্মতের চিকিৎসক বলা হয়।

বেহেশতি জেওর কিতাবটি ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে: ১. সত্য ঘটনা; ২. বিশ্বাস; ৩. ভুল বিশ্বাস এবং কর্ম; ৪. সালাত ও তার গুণাবলী; ৫. রোজা, জাকাত, কুরবানি, হজ, শপথ, ধর্মত্যাগ, হালাল ও হারাম ইত্যাদি; ৬. বিবাহ, তালাক, ইদ্দত, ভরপোষণ, কর্তৃত্ব, জীবিকার অধিকার এবং কুরআন মাজিদ পড়া; ৭. ব্যবসা নীতি এবং সম্পদ খোঁজা; ৮. শিষ্টাচার, অন্তর কাজের নৈতিক সংস্কার ও তার প্রতিফল এবং কেয়ামতের আলামত; ৯. নেককার নারীদের জীবন; ১০. স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং শিষ্টাচার।

হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহ. ছিলেন একজন সামাজিক নেতা। তাঁর প্রভাব সমাজ ও সমাজের মানুষের ওপর কেমন ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। একজন আলেম কীভাবে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেলেন তা এক বিস্ময়কর বিষয়। আর সেটা একশ বছর পরেও সমানভাবে সক্রিয় রয়েছে।

অথচ এই একশ বছরে তো দুনিয়ার চিত্রই বদলে গেছে। কিন্তু তাঁর বেহেশতি জেওর কিংবা খুতবাতুল আহকাম পুরো উপমহাদেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে যাচ্ছে। এটি শুধু তাঁর কারামতের কারণে হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। তিনি ইসলাম ও সমাজকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। একই সঙ্গে সবধরনের সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তিনি শুধু পীর নন, ছিলেন একজন সাধক ও সমাজ সংস্কারক। উপমহাদেশে ইসলাম বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে থানবি ধারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আজও তাঁর প্রবর্তিত ইসলাহ বা সংশোধনের ধারা ব্যাপক সমাদৃত। মূলত তাঁর সর্বপ্লাবি ব্যক্তিত্বের কারণেই বেহেশতি জেওরের মতো কিতাব এতেটা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। নিছক দীনের প্রাথমিক বিষয়াদি নিয়ে শত বছর আগে সংকলিত কিতাবটিতে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু বিষয় সংস্কারের প্রয়োজন থাকতে পারে, কিন্তু আরও বহুকাল এটি দীনদার মুসলমানদের পাথেয় হিসেবে গণ্য হবে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, ইসলামী বার্তা

[লেখা ও লেখকের কথা প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সাময়িকী ‘লেখকপত্র’ এর সৌজন্যে]

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ