শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই: ধর্ম উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেম অন্তর্ভুক্তির দাবি হেফাজতে ইসলামের সিংগাইরে হেফাজতে ইসলামের গণসমাবেশ ২৯ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা হলে ‘হাত ভেঙে’ দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘জুলাই বিপ্লবে আলেম-শিক্ষার্থীদের অবদান ও প্রত্যাশা’ নিয়ে আলোচনা সভা সোমবার সিলেটে অনুষ্ঠিত বিহানের ‘লেখালেখি ও এডিটিং কর্মশালা’ দেশে ফিরে কর্মফল ভোগ করুন, শেখ হাসিনাকে জামায়াতের আমির রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না: জাতীয় পরামর্শ সভা যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় গৃহীত হলো ৭ প্রস্তাব বারিধারায় হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ সভা শুরু

আশুরার দিনের যে ঘটনাগুলো ইসলামে স্মরণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা সাখাওয়াত রাহাত

পবিত্র আশুরা। আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা জালেম ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন নিপীড়িত মুসা আলাইহিস সালাম ও তার জাতিকে। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে (লোহিত সাগর) যে রাস্তা বের করে তিনি তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছিলেন; সেই একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে তিনি ডুবিয়ে মেরেছেন।(১) ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন।

ইসলামপূর্ব আরব জাহেলি সমাজে এবং আহলে কিতাব ইহুদি-নাসারাদের মাঝেও এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা ছিল। হাদিসে এসেছে— (জাহেলি সমাজে) লোকেরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গেলাফ জড়ানো হত। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন— যে এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক।(২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনা মুনাওয়ারায় আসার পর দেখেন, মদিনার আহলে কিতাব ইহুদিরা এ দিনে রোজা রাখছে। এ দিনকে তারা বিশেষভাবে উদ্যাপন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন: এ দিনে তোমরা কী জন্য রোজা রাখছ? তারা বলল: এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিবস। আল্লাহ তায়ালা এ দিনে হজরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওমকে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছেন। এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ (দরিয়ায়) নিমজ্জিত করেছেন। এরপর হজরত মূসা আ. এ দিনে শুকরিয়া আদায় স্বরূপ রোজা রাখতেন। তাই আমরাও রোজা রাখি। নবীজী এ শুনে বললেন: মূসা আলাইহিস সালাম এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। এরপর নবীজী নিজেও রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বললেন।(৩)

আশুরার দিনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো নেয়ামতের শোকর আদায় করা। তাই আমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার যত প্রকার নেয়ামত রয়েছে সেগুলো স্মরণ করে আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে। যে নেয়ামতের শোকর যেভাবে আদায় করতে হয়, সেভাবে সে নেয়ামতের শোকর আদায় করতে হবে। আল্লাহ সম্পদ দিয়ে থাকলে তার শোকর আদায় করতে হয় আল্লাহর রাস্তায় দান করে, আল্লাহর হুকুম মতো তা ব্যয় করে। আল্লাহ ইলম বা জ্ঞান দান করলে সে ইলম অনুযায়ী আমল করে এবং মানুষকে তা বিতরণ করে তার শোকর আদায় করতে হয়। আল্লাহ সুস্থতা দান করলে, সময় সুযোগ দান করে থাকলে দীনের কাজে সেটাকে লাগানো হলো সেই নেয়ামতের শোকর আদায়। এভাবে আল্লাহ আমাদেরকে যত নেয়ামত দান করেছেন সেই সব নেয়ামতের শোকর আদায় করার মনোভাব সৃষ্টি করাই হলো আশুরার দাবি। আশুরার রোজা রাখার সাথে সাথে সমস্ত নেয়ামতের শোকর আদায় করার মনোভাব সৃষ্টি করাই হচ্ছে আশুরার দিনের কাজ।

আফসোস আজকাল আশুরা বললে আমাদের অনেকের কাছেই 'কারবালা' মনে হয়! অথচ ইসলামি শরিয়তে আশুরার ফজিলতের সাথে কারবালার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। ৬১ হিজরির এই দিনে কারবালা প্রান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তম দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।

অনেকে মনে করেন— আশুরার তাৎপর্য বোধহয় এখানেই। নিঃসন্দেহে উম্মতের জন্য এ ঘটনা ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে চিরস্থায়ী বিভক্তি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

হজরত হুসাইন, হাসান, আলী, ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-সহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার তথা আহলে বাইতকে মহব্বত করা আমাদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের ব্যথায় আমরা ব্যথিত। তাদেরকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা অপরিসীম। পাশাপাশি সাহাবীগণের মর্যাদা ও ভালোবাসা কুরআন ও হাদিসের নির্দেশ অনুসারে আমাদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই নবী-বংশের ভালোবাসার নামে কেবল ধারণা বা ইতিহাসের ভিত্তিহীন কাহিনীর উপর নির্ভর করে সাহাবীগণ বা কোনো একজন সাহাবীর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ আমাদের ঈমানের জন্য ধ্বংসাত্মক।

একজন মুসলমানের জন্য সবকিছুর মূল্যায়ন সেভাবেই হতে হবে যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছেন। যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম করে গেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় কারবালার ঘটনা ঘটেইনি। তিনি আশুরার দিনকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে পালন করেছেন সেটাই আমাদের লক্ষণীয়। এদিনকে আমরা সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই পালন করব। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন তা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি এদিনে রোজা রাখতেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলতেন।

সুতরাং এ দিনে কারবালার ঘটনার শোক প্রকাশের নামে হায় হোসাইন! হায় হোসাইন মাতম, তাজিয়া মিছিল, নিজেকে নিজে জখম ইত্যাদি করা সবই ইসলামবিরোধী কর্ম। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখুন এবং কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন। সূত্র: (১) বুখারি ১/৪৮১, (২) বুখারি ১৫৯২, (৩) বুখারি ১১২৫, ৩৯৪৩; মুসলিম ১১৩০।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ