মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১১ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :

চিকিৎসাবিজ্ঞানে আল-রাজির অনন্য অবদান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মুসলিম ইতিহাসে যে কজন মনীষী খ্যাতি অর্জন করেন, আল-রাজি তাঁদের অন্যতম। তিনি ৮৬৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে ‘রায়’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম ফাখর আদ-দ্বিন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে আল-হুসায়েন।

তিনি একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ও দার্শনিক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আল-রাজি প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। তেহরানে লেখাপড়া শেষ করে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বাগদাদে চলে যান। তখন তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর। তেহরানে থাকাকালে আল-রাজি রসায়নশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বাগদাদে এসে তিনি গ্রিক চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন।

এ সময় আল-রাজি ইরানি চিকিৎসাপ্রণালী ও ভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি পদার্থবিদ্যায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। দর্শনশাস্ত্রের প্রতিও তাঁর কম অনুরাগ ছিল না।

শিক্ষাজীবন শেষ করে আবু বকর আল-রাজি কিছুদিন জুন্দেশাপুর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাটান। এখানে তিনি আলকেমি ও ভেষজতত্ত্বে গভীর গবেষণা করেন। এ সময় চিকিৎসক হিসেবে তাঁর খ্যাতি চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তখন বাগদাদ শহরে তাঁর সমকক্ষ দ্বিতীয় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।

তিনি কিছুকাল খলিফা আল-মুকতাদিরের প্রধান চিকিৎসক ছিলেন। খলিফার অনুরোধে আল-রাজি কয়েক বছর রায়, জুন্দেশাপুর ও বাগদাদের সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে কাজ করেন। এ সময় পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে রোগীরা নিরাময়ের আশায় তাঁর কাছে ছুটে আসত।

আল-রাজির চিকিৎসাপ্রণালী ছিল আধুনিক আর শিক্ষাপ্রণালীও ছিল উন্নত। তিনি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতেন এবং রোগীর পাশে থেকে তাদের সেবা করার উপদেশ দিতেন। সার্জারি বা শল্যচিকিৎসায়ও আল-রাজির অত্যন্ত সুনাম ছিল। আল-রাজির হাতে চিকিৎসালাভ করাকে রোগীরা আল্লাহর নিয়ামত বলে মনে করত। ফলে আল-রাজির খ্যাতি, সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে তিনি প্রচুর অর্থও কামাই করেন। এভাবে প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় চিকিৎসা পেশায় তিনি নিয়োজিত থাকেন।

আল-রাজি শুধু চিকিৎসা পেশায়ই নিয়োজিত ছিলেন না, এ সময় তিনি গবেষণার কাজও করেন। তিনি নানা ধরনের অ্যালকোহলিত স্পিরিট আবিষ্কার করেন। তিনি কৃত্রিম উপায়ে বরফ তৈরি করার প্রণালী উদ্ভাবন করেন। আল-রাজি তাঁর ব্যস্ততার মধ্যেও গ্রন্থ রচনার কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি আলকেমি বিষয়ে ‘কিতাবুল-আসরার’ বা রহস্যের গ্রন্থ নামক একখানি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। এটি পরে ১১৮৭ সালে লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়। এই গ্রন্থ চতুর্দশ শতক পর্যন্ত রসায়নশাস্ত্রের প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে সারা ইউরোপে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে চালু ছিল। তবে আল-রাজির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অবদান ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রে। তিনি কমবেশি ২০০ কিতাব রচনা করেন।

এর মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রেই তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১০০। আল-রাজির সবচেয়ে বড় কীর্তি হচ্ছে বসন্ত ও হাম সম্পর্কে ‘আল জুদারি ওয়াল হাসবাহ’ নামক পুস্তক রচনা। এতে গুটিবসন্ত ও হাম রোগের লক্ষণের সঠিক বিবরণ ও পার্থক্য লিপিবদ্ধ করেন, যা তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। ওই পুস্তক ইংরেজি, লাতিন ও ইউরোপীয় অন্য ভাষায় অনূদিত হয়। তাঁর চিকিৎসাবিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে ‘এল হাওয়াই’ সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। ওই গ্রন্থ ‘লিবার কন্টিনেন্স’ নামে লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।

আল-রাজির চিকিৎসাবিষয়ক আরেকটি ছোট গ্রন্থ ‘মানসুরি’ বা ‘লবার আলমানসোরিস’। এটি তিনি মানসুর ইবনে ইসহাক নামের জনৈক শাসককে উৎসর্গ করেছিলেন। ওই গ্রন্থে ভ্রমণকারীর জন্য চিকিৎসা উপদেশ, বিষাক্ত প্রাণীর দংশনের প্রতিকারসহ অন্যান্য বিষয় আলোচিত হয়েছে।

আল-রাজি চিকিৎসা ও দর্শন ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, খনিজবিদ্যা, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। শেষ বয়সে এসে আল-রাজি অন্ধ হয়ে পড়েন। প্রায় ৬৮ বছর বয়সে ৯২৫ সালে এই মহান বিজ্ঞানী আফগানিস্তানের হেরাত নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ