মুহাম্মদ এহছানুল হক।। পৃথিবীতে অগণিত ধর্ম-মতবাদ আছে। তবে ইসলাম শ্রেষ্ঠত্ব ও গ্রহণীয়তায় একক। স্বচ্ছ সাবলীল। সুন্দর সমুন্নত। বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ। এখানে বিন্দুমাত্র দ্বিধা-সংশয় নেই। খেয়ালীপনা বা সেচ্ছাচারিতার নূন্যতম অবকাশ নেই। প্রতিটি বিধান যৌক্তিক। প্রমাণসিদ্ধ। বরং সকল অভিযোগ-আপত্তির সুদৃঢ় খণ্ডন ইসলামের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায় ইসলামের প্রতি নিবেদিত হতে চাইলে, ইসলামকে সানন্দে-গ্রহণে আগ্রহ দেখালে ইসলাম বলে- ‘আগে ভাবুন! আমার দীক্ষা ও নির্দেশনাকে যুক্তির প্রামাণ্য-কষ্টিতে যাচাই করুন। গভীরভাবে চিন্তা করে চিত্ত স্থির হলে, বোধ-বুঝের সাথে প্রশান্ত হৃদয়ে আমাকে ধারণ করুন।’
এটা ইসলামের অনুপম শোভা। জগতের আর কোনও ধর্ম-মতবাদে এমন নেই। কোনও চিন্তা-দর্শন এভাবে বলতে পারেনি। কতোটা মধুমাখা স্বরে, সুস্পষ্ট ভাষায় দয়াময় আল্লাহ বিশ্বমানবের প্রতিটি সত্ত্বাকে ইসলামের যথার্থতা জানিয়েছে। তার নিকট একমাত্র মনোনীত এ ধর্মের উৎকর্ষ আলোচনা করেছেন। বলেছেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَٱعْتَصَمُواْ بِهِۦ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِى رَحْمَةٍۢ مِّنْهُ وَفَضْلٍۢ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَٰطًا مُّسْتَقِيمًا
হে মানবকুল! তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট প্রমাণ –রাসূল– এসেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি প্রকৃষ্ট আলো –কুরআন– অবতীর্ণ করেছি। অতএব যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তাদেরকে তিনি অবশ্যই তার দয়া ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দিবেন এবং তার দিকে আসার মতো সরল পথে পরিচালিত করবেন। ( পবিত্র কুরআন- ৪ : ১৭৪,১৭৫)
قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
আল্লাহর নিকট থেকে তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং সমুজ্জ্বল গ্রন্থ এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, এর দ্বারা তিনি তাদেরকে নিরাপত্তার পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ নির্দেশক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেন। (পবিত্র কুরআন- ৫ : ১৫,১৬)
كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তার বিধান সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো।
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। যাদের প্রতি কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশত ওরা মত বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। আর যারা আল্লাহর নির্দেশসমূহের প্রতি কুফুরি করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত। ( পবিত্র কুরআন- ৩ : ১৯)
قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত করো! (পবিত্র কুরআন- ২ : ১১১ )
إِنْ عِندَكُم مِّن سُلْطَانٍ بِهَٰذَا ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের দাবি ও বক্তব্যের স্বপক্ষে তোমাদের নিকট কোনও প্রমাণ নেই। কেন তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো- যে বিষয়ে তোমাদের কোনও জ্ঞান নেই। (পবিত্র কুরআন- ১০ : ২৭ )
পবিত্র কুরআনে এমন প্রচুর আয়াত আছে। তারপরও যদি কেউ ইসলাম নিয়ে কল্পনাপ্রসূত কথা বলে, পবিত্র এ ধর্মকে সেকেলে বা পশ্চাদপদ মনে করে তাহলে এটা অবশ্যই তার নির্বুদ্ধিতা ও জ্ঞানদৈন্য। অথবা নিতান্তই সংকীর্ণতা। ইসলামের সকল বিষয় সুপ্রকাশ্য। তাই বিভ্রান্তি নিরসনে একটু একটু করে হলেও ইসলামকে জানার চেষ্টা করুন।
লেখক: শিক্ষার্থী, দাওয়াহ বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
এমডব্লিউ/