মোস্তফা ওয়াদুদ: আফগানিস্তান। প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ‘স্তান’ অর্থ জমি। ‘আফগানিস্তান’ মানে আফগানদের দেশ। ‘স্তান’ শব্দটি কুর্দিস্তান এবং উজবেকিস্তানের নামেও ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছেন এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এই ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হল পশতু জাতি। এরা আগে আফগান নামেও পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে আফগান বলতে কেবল পশতু নয়, বরং জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককেই বোঝায়।
অর্থবিত্তের এ দেশটি এতদিন ভিন্নধারার দখলে ছিলো। তবে এখন ধীরে ধীরে তালেবানের দখলে আসছে আফগানিস্তান। দেশটির অবকাঠামোকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য তালেবানকে যারা পরিচালনা করছেন তাদের নিয়ে থাকছে আজকের প্রতিবেদন।
১ । হাইবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহ
তিনি একজন আলেম। বর্তমানে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা ও আমীরুল মুমিনীন হিসেবে পরিচিত। তালেবানের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও মিলিটারি ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের দায়িত্ব রয়েছে তার উপর। তার আগে তালেবানের সুপ্রিম লিডার ছিলেন আখতার মানসুর রহ.৷ ২০১৬ সালে আফগান-পাকিস্তান বর্ডারে মার্কিনী ড্রোন হামলায় তার শাহাদাতের পর আমীরুল মুমিনীন হাইবাতুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার ছাত্র ও সহযোগীরা রয়টার্সকে জানান, ২০১৬ সালের মে মাসে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পনেরো বছর যাবৎ সাউদার্ন পাকিস্তানের কুচলাকের একটি মসজিদে শিক্ষকতা ও দাওয়াতের কাজ করেছিলেন। তার বয়স আনুমানিক ষাট বছর। তিনি আফগানিস্তানে থেকেই তিনি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
২। মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা উমর রহ. এর সন্তান। তার বয়স আনুমানিক তিরিশ বছর। তালেবানের মিলিটারি অপারেশন তদারকির দায়িত্ব তার উপর। তার অবস্থান এখনো অজ্ঞাত। স্থানীয় মিডিয়ার ভাষ্যমতে, তিনি আফগানিস্তানের ভেতরেই আছেন। একজন তালেবান কমান্ডারের মতে, শহীদ আখতার মানসুর রহ. এরপর সুপ্রিম লিডার নির্বাচনী মজলিসে মোল্লা উমর রহ. এর উত্তরাধিকারী বিবেচনায় তাকে দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি তার স্বল্প বয়স ও ব্যাটলফিল্ড অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখিয়ে সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন ও হাইবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহর নাম প্রস্তাব করেন।
[caption id="" align="aligncenter" width="377"] তালেবানের আংশিক কমিটি ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দের তালিকা[/caption]
৩। সিরাজুদ্দীন হাক্কানী
তিনি বিখ্যাত মুজাহীদ লিডার জালালুদ্দীন হাক্কানী রহ. এর সন্তান। বর্তমানে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত ‘হাক্কানী নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। এই গ্রুপটি আফগান-পাকিস্তান বর্ডারজুড়ে তালেবানের ফাইন্যান্সিয়াল ও মিলিটারি বিষয়-সম্পত্তির দেখাশোনা করে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, হাক্কানী নেটওয়ার্কের সদস্যরা আফগানিস্তানে যুদ্ধের কাজ পরিচালনা করে থাকেন। সিরাজুদ্দীন হাক্কানীর বয়স আনুমানিক চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে। তার অবস্থানও জানা সম্ভব হয়নি।
৪। মোল্লা আবদুল গনী বেরাদার
তিনি তালেবানের অন্যতম একজন কো-ফাউন্ডার। বর্তমানে কাতারে অবস্থিত তালেবানের হেড অব পলিটিক্যাল অফিস হিসেবে কর্মরত আছেন। তাছাড়া দোহায় তালেবানের যে নেগোশিয়েটিং টিমটি আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যুদ্ধবিরতী বা বিভিন্ন ধরণের পলিটিক্যাল ডিল পরিচালনা করছে, তিনি তার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি মোল্লা উমর রহ. এর সবচেয়ে আস্থাভাজন কমান্ডারদের একজন। তিনি ২০১০ সালে সাউদার্ন পাকিস্তানের করাচীতে পাক সিকিউরিটি ফোর্সের হাতে গ্রেফতার হোন। পরে ২০১৮ সালে মুক্তি লাভ করেন তিনি।
৫। শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই
তিনি তালেবান সরকারের (১৯৯৬-২০০১) একজন ডেপুটি মিনিস্টার ছিলেন। প্রায় এক দশক ধরে দোহায় বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে সেখানে দলটির রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধানও হয়েছিলেন। পশ্চিমা মদদপুষ্ট আফগান সরকারের সাথে আলোচনা ও কয়েকটি দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
৬। আবদুল হাকীম হাক্কানী
তিনি হেড অব দ্যা তালেবান’স নেগোশিয়েটিং টিম, তালেবানের প্রাক্তন ছায়া চিফ জাস্টিস ও কাউন্সল অব রিলিজিয়াস স্কলার্স- এর প্রধান। আমীরুল মুমিনীন হাইবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সূত্র :আল জাজিরা।
এমডব্লিউ/