বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রসিকতার ছলে কাউকে ছোট করো না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম।।

বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি, ছোটদের নিয়ে আমরা নানা সময় রসিকতা করি। কখন রসিকতার ছলে আমরা তাদের ছোট করে ফেলি। তাদের হেয় করি। কখনো ইচ্ছে করে করি, কখনো নিজের অজান্তেই করি। কিন্তু এর দ্বারা একে অপরের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে। সুযোগ খুঁজতে থাকে। যদিও সে হাসিমুখে তা গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু, অন্তরে জ্বলে তার ক্রোধের আগুন। যদি সুযোগ পায়, তার সব ক্ষোভ মিটিয়ে নিবে।

একটি গল্প পড়েছিলাম, এক ক্ষমতাবান ব্যক্তি দূর্বল এক ব্যক্তিকে পাথর দিয়ে আঘাত করল। দূর্বল হওয়ায় লোকটি কিছুই করতে পারল না। সে পাথরখানি কুড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। একদিন সে এক কুয়োর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ কুয়ো থেকে শব্দ ভেসে আসল তার কানে। তাকিয়ে দেখে সে অবাক! কারণ, কুয়োর ভিতর ব্যক্তিটি হল একসময় ক্ষমতার জোরে পাথর মারা ব্যক্তিটি। ঠিক তখনই তার প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করল। কুড়িয়ে নেওয়া পাথরখানি নিয়ে এসে বলে— এটি সেই পাথর, যেই পাথর দিয়ে তুমি আমাকে আঘাত করেছ। তখন আমি দূর্বল ছিলাম। তুমি সবল ছিলে। আজ তুমি আমার কাছে নিরুপায়। এ-বলে নিজের সব ক্ষোভ একত্র করে ছুড়ে মারে পাথরটি।

তদ্রূপ, হেয়কৃত ব্যক্তিটিও এমন একটি সুযোগের আশায় থাকে। যখনই সে নাগালে পেয়ে যায়, আর প্রতিশোধ নিতে এক মূহুর্ত দেরি করে না।

আমরা রাসূল সা. এর উম্মাহ। রাসূল সা. কখনো রসিকতা করে কাউকে হেয় করেন নি। কিন্তু আমরা তাঁর উম্মাহ হয়ে কীভাবে একজন মুমিনকে হেয় করি! কাউকে হেয় করা প্রকৃত মোমেনের কাজ নয়।

রাসূল সা. এর রসিকতার নমুনা দেখুন। একদিন এক বুড়ি রাসূল সা. এর দরবারে হাজির হন। রাসূল সা. বুড়িকে রসিকতা করে বললেন, কোন বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এই কথা শুনে বুড়ির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। রাসূল সা. বুড়ির অবস্থা বুঝতে পেরে বলেন, জান্নাতে কোন বুড়ি যেতে পারবে না এর মানে হলো, সবাই যুবক অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। যারা বৃদ্ধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও যুবক বানিয়ে জান্নাতে দেওয়া হবে। দেখুন— রাসূল সা. ও রসিকতা করেছিলেন। কিন্তু, মিথ্যা বলেননি। হেয় করেননি।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। [সূরা হুযরাত ১১]

বর্তমান সমাজে এটা এক মহাব্যাধি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন-আমীন!

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ