আশিক আল-হুসাইনী
যখন আমি দেখি দুঃখিনী মা পুরানো কাপড় পরে ভাঙ্গা ঘরে বসে আছে। পেটে কোনো আহার নেই। দুঃখিনী বোন হতাশ মন নিয়ে নিরাশায় বসে আছে,মুখে কোনো ভাষা নেই। অবুঝ অনাথ শিশুটি ক্ষুধার তাড়নায় কাতর হয়ে আছে,খাদ্য ব্যবস্থা ও মায়া মমতা দেওয়ার কেউ নেই। আমার প্রতিবেশী মেধাবী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে পা গুটিয়ে বসে আছে,জিজ্ঞেস করার কেউ নেই।
তখন আমার বিবেক বলে দেয়,দুঃখিনী মা কষ্ট করতে চায়,হাত বাড়াতে চায়না। দুঃখিনী বোন অসহায়ত্ববোধ করে,মুখ খুলতে রাজি নয়।অবুঝ অনাথ শিশুটি গরীব-মিসকিন,তাই আদর সোহাগ পায়না। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া গরীব শিক্ষার্থীরা সমাজের বোঝা,তাই কেউ কারণ জিজ্ঞেস করে না।
তখন মন ভরা ব্যথা নিয়ে ভাবতে থাকি কিভাবে মায়ের মুখে হাসি ফুটানো যায়। বোনের মুখে কথা বলানো যায়। অবুঝ শিশুটির মায়া মমতা ও খাদ্য-বস্ত্র ব্যবস্থা করা যায়। সমাজের বোঝা গরীব মিসকিন ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে শিক্ষিত করা যায়।
তখন ভাবনার জগত থেকে অদৃশ্য আওয়াজ ভেসে আসে,❝হে যুবক! তোমরা অগ্রসর হও সম্মুখ পানে,সফলতা তোমাদেরই খুঁজে।❞
সুতরাং যুব সমাজের উচিত,তারা প্রত্যেকেই যেন সমাজের এমন গরীব-অসহায়ের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এর জন্য শরীয়ত সম্মত যেকোনো ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন কল্যাণ তহবিল,গুরাবা ফান্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট ইত্যাদি বিভিন্ন নামে কিছু সংগঠন গড়ে তোলা যায়। যে ফান্ডে সমাজের ধনবান-বিত্তশালী লোকদের দান সদকা,যাকাত,ফিতরা ইত্যাদি জমা করা হবে। যা থেকে সমাজের অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
গত বছর থেকে শুরু করে এবছরেও মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ও লকডাউনে কর্মসংস্থান হারা বিভিন্ন ধরনের শ্রেণি পেশাদারী ও গরীব অসহায়েদের ত্রাণ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বিভিন্ন সরকারী,বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু প্রত্যেকের নির্দিষ্ট অর্থায়ণ ও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় সেই ত্রাণ দেশের সর্বত্রে পৌঁছাতে পারেনি।
এজন্যই আমরা আশা রাখি,দেশের প্রতিটি গাম-মহল্লায় এলাকাভিত্তিক কিছু উদ্যোগ নিবে সমাজের দায়িত্বশীল যুবসমাজ। তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক ও অধিবাসীগণ। এবং সরকারও গরীবদের প্রতি আরো সদয় ও যত্নশীল হতে হবে।
তাহলেই দারিদ্র্য মুক্ত একটি দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ণ করা সম্ভব হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে,যাতে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই দ্বীনদার গরীব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মুখে হাসি ফুটানোই সবার উদ্দেশ্য হয়। তাহলে কাজগুলো ফলপ্রসূ হবে।
সুতরাং,আমরা চাই! প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে এই ধরণের সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। যেই সংস্থা সংগঠনগুলো সমাজের সচেতন যুবকদের নিয়ে অগ্রসর হলেই অসহায় বঞ্চিতা মা বোন ও অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফুটে উঠবে। ইনশাআল্লাহ!
লেখক: অধ্যায়ণরত; জামিয়াতু ইবরাহীম মাহমুদনগর,সাইনবোর্ড,ঢাকা।
-এটি