বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আল-কোরানের সক্রিয় নৈতিকতাকে ঊর্দ্ধে তুলে ধরুন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাজী ওয়াদুদ নওয়াজ।।

আল-কোরান নাজিল হওয়ার ঘটনাটি মানব ইতিহাসের একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ যুগান্তকারী ঘটনা। এর শুরু স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টি-রহস্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে (সূরা আলাক্ব: আয়াত ১-৫) এবং শেষ ধর্ম ও জীবন-বিধান হিসাবে ইসলামের সাফল্য ও পরিপূর্ণতা ঘোষণার মাধ্যমে। (সূরা আল-ম।য়িদাহ্: আয়াত-৩,সূরা আন-নাছর: আয়াত ১-২)।

তত্ত্ব ও প্রয়োগের সমন্বয়ের বাস্তব সম্মত পথ ধরেই ইসলাম ধর্ম সামগ্রিক জীবন-বিধান হিসাবে পরিপূর্ণতা অর্জন করেছে। মক্কায় নাজিলকৃত মক্কী সূরা গুলির মাধ্যমে আল-কোরান ইসলামের মৌলিক দর্শন ও তত্ত্ব-গত ভিত্তিকে তুলে ধরেছে।আর মদীনায় নাজিলকৃত মাদানী সূরা গুলির মাধ্যমে আল-কোরান সকল ঐতিহাসিক যুগ, সুনির্দিষ্ট দেশ-কাল, সমাজ ও সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কৌশল-গত নীতিমালা সমুহ ব্যাখ্যা করেছে।

এই সমস্ত নীতি-মালার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে হজরত মুহম্মদ (সা.আ) মদীনাতে সর্ব-প্রথম একটি ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করেন।পরবর্তীতে মক্কা বিজয় ও সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নবী করিম (সা.আ) আল্লা কর্তৃক তাঁর উপর অর্পিত মিশন (কর্তব্য ও দায়িত্ব) সম্পূর্ণ করেন।

এটাই ইতিহাস। ঐশী গ্রন্থ হিসাবে মানুষের ব্যক্তি-জীবন, সমাজ-জীবন সহ সমগ্র বস্তু-জগত রূপান্তরের ক্ষেত্রে আল-কোরানের সক্রিয় দায় রয়েছে-ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়। জীবন ও জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্ম-শুদ্ধির প্রবণতাকে কোরান কখনও প্রশ্রয় দেয়নি।

পবিত্র কোরানের মধ্যে কোথাও অনুমান বা অলীক কল্পনার কোনো স্থান নাই।কোরানের মধ্যে আল্লাহ যা কিছু বলেছেন তা সবই সত্য ও বাস্তব। মানব-জীবন ও বস্তু-জগতের অন্তর্নিহিত সত্য ও বাস্তবতাই হলো কোরানের মূল আলোচ্য বিষয়।সমগ্র বিশ্ব-প্রকৃতি, তার বিকাশ-প্রক্রিয়া ও ইতিহাসকে কোরান মানুষের জন্য উপদেশ ও স্রষ্টার সৃষ্টি নৈপুণ্যের বাস্তব নিদর্শন হিসাবে চোখের সামনে তুলে ধরেছে।

বিশ্ব-জগত সৃষ্টির পিছনে আল্লার লক্ষ্য ও ঊদ্দেশ্য এবং স্রষ্টার কাছে মানব-জাতির জবাবদিহিতা; এই দু'টি হলো কোরানের সক্রিয়-নৈতিকতার মূল ভিত্তি।আল্লার প্রতিনিধি হিসাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। পৃথিবীতে বিশ্ব-জনীন ন্যায়-বিচার (ইনসাফ) প্রতিষ্ঠা ও ভার-সাম্য (মীজান) রক্ষা করাই হলো আল্লার প্রতিনিধি হিসাবে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

মুসলমান হিসাবে অবশ্যই আমরা কোরানের মৌলিক নীতিমালার উপর বিশ্বাস রাখি এবং আমাদের জীবন ও জগতকে সেই আদর্শ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে চাই। অনেক বিজ্ঞানী ও উচ্চ-শিক্ষিত ব্যক্তি আছেন যাঁরা নৈতিকতার বিষয়টিকে পুরো-পুরি একটি সামাজিক বিষয় বলে মনে করেন।

বস্তুগত স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে গঠিত যে কোন নৈতিক কাঠামো অবশ্যই একটি সামাজিক বিষয়। কিন্তু কোরানিক নৈতিকতার মূল লক্ষ্য হলো মানব জাতির বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক জীবনের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা।

আধ্যাত্মিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন সামাজিক নৈতিকতার ধারনাটি যে শেষ পর্যন্ত শ্রেণী ও গোষ্ঠী স্বার্থের কানা-গলিতে হারিয়ে যায় ইতিহাস তার স্বাক্ষী।

বিংশ-শতকের গুরুত্ব-পূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার গুলি সামাজিক নৈতিকতা ও মানব কল্যানের নামে পৃথিবী ব্যাপী যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তাও বিশ্ব-বাসী প্রত্যক্ষ করেছে এবং এখনও করছে।

ভোগ-বাদী দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকারের ধারনাটি এ যুগে দুর্বলের উপর নিপীড়ণ ও একটি গোষ্ঠির স্বার্থ-সিদ্ধির হাতিয়ারে পরিনত হয়েছে। কোরানিক নৈতিকতা সত্য ও ন্যায়-বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত।

ব্যক্তি,সমাজ ও জাতীয় জীবনে একে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব প্রতিটি ইমানদার মুসলমানের। এই ন্যায়-বিচার ভিত্তিক কোরানিক-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল একজন মুসলমানের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও আত্ম-শুদ্ধি সম্ভব। বাস্তব জীবন ও জগত থেকে পরিপূর্ণ বিচ্ছিন্ন নিষ্ক্রিয় হয়ে আত্ম-শুদ্ধির প্রচেষ্টাকে কোরান ও ইসলাম সমর্থন করেনা।

পবিত্র কোরানের সূরা আশ-শু'আরা: আয়াত (২২১-২২৬) এর মাধ্যমে মহান আল্লা-তা'আলা শয়তান ও তার অনুসারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। তারা হচ্ছে মিথ্যাবাদী, দুষ্ট-প্রকৃতির লোক যারা সর্বদা অত্যাচারী ও দুষ্কৃতিকারীদের পদাঙ্ক অনুসরন করে চলে।আর মুনাফিক, যাদের কথা ও কাজে মিল নাই তারাও নিঃসন্দেহে শয়তানের সহযোগী।

আল্লাহ পূত-পবিত্র – অসীম অনন্ত পবিত্র আলোর উৎস। বিশ্ব-জগত তাঁর আলোকেই আলোকিত হয়। [সূরা আন-নূর: আয়াত ৩৫]
সকল সৃষ্টি তাঁর সীমাহীন করুণা ও গুনাবলী প্রতিফলিত করে। প্রাকৃতিক নিদর্শন সমূহ ও কোরানের প্রত্যেকটি আয়াতের মাধ্যমে সেই আলো মানুষের অন্তরে প্রতিফলিত হয়।একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারী ছাড়া প্র্তিটি মানুষের অন্তরে এই আলো ধারন করার ক্ষমতা আছে। শয়তানের অনুসারীদের অন্তর কালিমা-লিপ্ত থাকে তাই তারা অন্ধ- এই আলো দেখতে পায়না।

আল্লার সীমাহীন গুনাবলীর নিদর্শন স্বরূপ সৃষ্টির সর্বত্র এই আলো বিরাজমান- কোথাও কোন অন্ধকার নাই।শুধু এই আলো ধারন করার মতো একটি পবিত্র অন্তঃকরন দরকার।বাস্তব জীবনে কোরানের সক্রিয় অনুশীলন,নিরলস প্রচেষ্টা ও গবেষণার মাধ্যমেই কেবল তা লাভ করা সম্ভব।পবিত্র কোরানে আল্লা পাক বলেন "তবে কি এরা কোরান সম্পর্কে (কোনো রকম চিন্তা) গবেষণা করেনা।

নাকি এদের অন্তর সমূহের উপর তার তালা ঝুলে আছে?"[সূরা মুহম্মদ:আয়াত ২৪] মানুষের অন্তঃকরনের এই ঝুলন্ত তালা ভাংতে হলে সক্রিয় কোরান অনুশীলণ ও গবেষণার কোনও বিকল্প নাই।

তথ্য-সূত্র: ক)হে মুহাম্মদ) আপনি পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট-বাঁধা রক্ত থেকে,আপনি পড়ুন এবং (জেনে রাখুন)আপনার প্রভু বড়ই মেহেরবান,তিনি (মানুষকে)কলম দ্বারাই (জ্ঞান-বিজ্ঞান)শিখিয়েছেন, তিনি মানুষকে (এমন সব কিছু) শিখিয়েছেন যা (তিনি না শেখালে) সে কখনও জানতে পারতো না [আয়াত:৯৬;১-৫]

খ) আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণ ক'রে দিলাম,আর তোমাদের জন্য আমার(প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও পূর্ণ ক'রে দিলাম,তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম [আয়াত: ৫:৩]

গ) যখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মানুষদের আপনি দেখবেন, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ হচ্ছে, আয়াত:১১০:১-২]

ঘ) (হে নবী) আমিকি আাপনাকে বলে দেবো, শয়তান কার ওপর(বেশী) সওয়ার হয়? (শয়তান সওয়র হয়)প্রতিটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপী মানুষের ওপর, ওরা (শয়তানের কথা)শোনার জন্য কান পেতে থাকে,আর তাদের অধিকাংশই হচছে (নিরেট)মিথ্যাবাদী। {আর কবিদের কথা!) কবিরা (তো অধিকাংশই হয় পথ-ভ্রষ্ট,)তাদের অনুসরন করে (আরো) কতিপয় গোমরাহ ব্যক্তি।আপনি কি দেখতে পাননা,ওরা(কল্পনার হাওয়ায় চড়ে)প্রতিটি ময়দানে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়?এরা এমন কথা (অন্যদের) বলে যা তারা নিজেরা করেনা।"[আয়াত:২৬:২২১-২২৬].
ঙ)"আল্লাহ তা'আলাই হচ্ছেন আসমান সমূহ ও যমীনের নূর; [আয়াত ২৪;৩৫]

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ