মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-কাউসার ।। হক কথা উচ্চ আওয়াজে বলা’ ও ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ সর্বদা করা’ এই দু'টি সিফাত (গুণ) আমাদের থেকে এমনভাবে বিলুপ্ত হয়েছে যে, আজকাল হকের পক্ষে যারা বলিষ্ঠ কন্ঠে কথা বলে, যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ হরদম করে যায়, তাঁদের নিয়ে মন্তব্য করি- ওরা ইসলাম নিয়ে একটু বেশি কথা বলে, ওরা উগ্রস্বভাবের, ইত্যাদি।
প্রতিদিন সমাজে অনেক অন্যায় ও অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা এর প্রতিবাদ তো করি-ই না, তার বিপরীতে, যারা প্রতিবাদ করে তাঁদের বিরুদ্ধে উগ্রতা'র টাইটেল ঠিকই লাগাতে পারি!
দেখুন! অন্যায়ের প্রতিবাদে রাসূল সা.-এর নাসিহা- অপরাধ ও অন্যায়ের মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে নসিহত পেশ করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কোনো মুসলিমের চোখের সামনে যদি অন্যায়ভাবে কেউ কারো সম্পদ বা সম্মান হরণের চেষ্টা করে তবে তার করণীয় হলো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা।
কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বর্ণনা করেন- হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। (নিজ হাতে প্রতিরোধ করতে) সম্ভব না হলে যেন মুখে প্রতিবাদ করে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে যেন অন্তত মন থেকে ঘৃণা করে। এটা দুর্বলতম ঈমানের আলামত। (মুসলিম)
উল্লেখ্য, ‘অন্তরে ঘৃণা করা’কে ঈমানের দুর্বলতম আলামত বলা হয়েছে। আসলে অন্তরে ঘৃণা করা দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদের মূল মর্মার্থ শুধু ঘৃণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং নিরবে-নিরবে অন্যায়-অপরাধ বন্ধে কাজ করে যাওয়া। নিরবে কাজ করে যাওয়ার প্রচেষ্টায় যেনো অন্যায় অপরাধ বন্ধ হয়।
শুধু তাই নয়, কোনো মুমিন-মুসলমানের সামনে কোনো অন্যায়-অপরাধ ঘটে গেলে যদি সে ঘটনা দেখে কারো মনে হাসির উদ্রেক হয়, সেটিও অন্যায়কে সমর্থন করার অর্থে পরিগণিত হবে। তাই অন্যায়ের সঙ্গে কোনোভাবেই আপোষ করা যাবে না!
কোনো মুসলিমের মান-সম্মানের ওপর আঘাত আসে এমন যে কোনো কাজ-ই ইসলামে হারাম। তাই এসব কর্মমাণ্ডেরও প্রতিরোধ করা আবশ্যক। কেননা হাদিসে এসেছে -তোমাদের সম্মান নষ্ট করা হারাম। (বুখারি)
বিশ্বনবির হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কারো প্রতি অন্যায় আচরণ হতে দেখলে তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। সে দাবি পূরণে সম্ভব হলে হাতে, মুখে এবং নিরবে নিরবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখা।
সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়। তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক।
কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে। এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে।
রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন- মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগির-ই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
প্রিয় দ্বীনি ভাই আমার! আপনার কাছে একটাই অনুরোধ, আপনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন আর না-ই করেন; অন্ততপক্ষে, যারা হক কথা বলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, তাঁদের বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকুন!
আল্লাহ্ তা'আলা যেনো আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার তাওফিক দান করেন! আমীন।
শিক্ষক: মাদ্রাসায়ে নূরে মদীনা কান্দিগাঁও, আটপাড়া, শাল্লা, সুনামগঞ্জ!
-এটি