শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

হাদীস অস্বীকারকারীদের প্রমাণ ও তার জবাব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আব্দুর রহিম: হাদীস অস্বীকারকারীরা সর্ব প্রথম তাদের দলীল হিসেবে এই আয়াত উল্লেখ করে থাকে। وَلَقَد يَسَّرنَا القُرآنَ لِلذِّكرِ فَهَل مِن مُدَّكِرٍ (সূরা কামার: ১৭) তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে কুরআন একেবারেই সহজ। অতএব, তা অনুধাবনে বা আমল করতে কোন প্রকার তা’লিম বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।

এর জবাব: কোরআনে কারিমের বিষয়াবলি দুই প্রকার। কিছু বিষয় এমন রয়েছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য আল্লাহর ভয়, পরকালের ফিকির, আল্লাহর দিকে রুজু পয়দা করা এবং সর্বসাধারণকে উপদেশ প্রদান করা। আর কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলোতে আহকাম-বিধিবিধান ও এর মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। وَلَقَد يَسَّرنَا القُرآنَ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট প্রথম প্রকার বিষয়াবলির সাথে, দ্বিতীয় প্রকার বিষয়াবলির সাথে নয়। যার প্রমান হলো, وَلَقَد يَسَّرنَا القُرآنَ সাথে لِلذِّكرِ শর্ত। যদি বিধিবিধান বের করাও সহজ হতো, তবে এই শর্ত করা হতো না।

তাছাড়া সামনে বলা হয়েছে, فَهَل مِن مُدَّكِر। هل من مستنبط বা هل من مجتهد বলা হয় নি। তাছাড়া কুরআনে কারিমের কয়েকটি আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, এই কিতাব রাসূল ছাড়া বুঝা সম্ভব নয়। যেমন : وَأَنزَلنَا إِلَيكَ الذِّكرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيهِم (সূরা নাহাল : ৪৪)

২. হাদীস অস্বীকারকারীরা বলে, কুরআনে কারিমে বিভিন্ন স্থানে স্বীয় আয়াতগুলোকে স্পষ্ট প্রমান সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর দ্বারাও বুঝা যায় যে, কুরআন স্বয়ং স্পষ্ট। এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।

জবাব: যেসব আয়াতকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সেসব আয়াত দ্বারা আকীদার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রমানাদি এতেই স্পষ্ট যে, সামান্য মনোযোগ দিলেই তা অন্তরে বসে যায়। খ্রিষ্টানদের তৃত্ববাদ আকিদার মত নয় যে, সারা বিশ্ব মিলেও তা বুঝা সম্ভব হয়নি। এ কারণে তার উপর ভিত্তি করে একথা বলা যায় না যে, আহকামের ক্ষেত্রেও তা সহজ, এর ব্যাখার জন্য কোন নবী বা রাসূলের প্রয়োজন নেই।

৩. إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثلُكُم يُوحَىٰ إِلَيَّ (কাহাফ : ১১০) হাদীস অস্বীকারকারীরা বলে, রাসূল সা. কে অন্যান্য মানুষের মত একজন মানব সাব্যস্ত করা হয়েছে। অতএব, এই আয়াতটি স্পষ্ট যে, রাসূল সা. এর উপর অবতীর্ণ وحي متلو তো অনুসরণ করা ওয়জিব, কিন্তু রাসূল সা. এর বাণীগুলোর উপর আমল করা ওয়াজিব নয়।

জবাব: ১. মুলত এই আয়াতটিকে তার পূর্ব ও পর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে এই প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। আসলে এই আয়াতটি সেসব কাফেরদের জবাবে এসেছিলো, যারা হুজূর সা. এর নিকট মু‘জিযা দাবি করে আসছিলো। এর জবাবে বলা হয়েছে, আমি তোমাদের মত একজন মানুষ, এজন্য আমি আমার মর্জি মোতাবেক অলৌকিক বিষয় দেখাতে সক্ষম নই, যতক্ষণ না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এতে বুঝা গেলো مِثلُكُم বলে যে উপমা দেয়া হয়েছে তা সব ব্যাপারে নয়। বরং আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিত কোন মু‘জিযা দেখাতে সক্ষম না হওয়ার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের মত।

২. অত্র আয়াতে অন্য মানুষের সাথে হুজূর সা. এর পার্থক্যের কারণ ওহিকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর “ওহি” শব্দকে ব্যাপক আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। যা মাতলু ও গাইরে মাতলু উভয়কে শামিল করে। সুতরাং এ আয়াত দিয়ে রাসূলের অনুসরণ ওয়াজিব না হওয়া প্রমাণ করার বিষয়টি অনর্থক।

হাদীস অস্বীকারকারীগণ ঐসব ঘটনা দিয়েও প্রমাণ দিতে চান, যাতে হুজূর সা. এর কোন কাজের উপর কুরআনে কারীমে ভর্ৎসনা অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন, বদরের যুদ্ধের সময় বন্দিদের মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপরে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই ঘটনায় কুরআন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, হুজূর সা. এর সিদ্ধান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী হয়নি। এজন্য নবী সা. এর কথা ও কাজকে ব্যাপক আকারে প্রমাণ বলা যায় কিভাবে?

জবাব: একথা সত্য যে, এসব ঘটনায় হুজূর সা. এর ইজতিহাদী পদস্খলন ঘটেছিলো। যার ফলে ওহীর মাধ্যমে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যদি গভীরভাবে দেখা যায়, এই ঘটনায় হাদীসের প্রমাণিকতা বুঝে আসে। কারণ, যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনে কারীম এই ইজতেহাদী ভুলের উপর সতর্ক করেনি, ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত সাহাবী এই হুকুমে হুজূর সা. এর অনুসরণ করেছিলেন। আর যখন কোরআনে কারীমে সতর্কবাণী নাযিল হয়েছে তখন রাসূল সা. এর প্রতি প্রিয়জন সুলভ ভর্ৎসনা হয়েছে। কিন্তু সাহাবীদের উপর কোন প্রকার ভর্ৎসনা হয়নি, কেন তারা হুজূর সা. এর অনুসরণ করলেন? এতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, এ ব্যাপারে সাহাবায়েকেরাম রাসূল সা. এর অনুসরণ করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর রাসূল সা. এর ফায়সালার পুরো দায় দায়িত্ব স্বয়ং তাঁর উপরই ন্যস্ত ছিলো।

৫. হাদীস অস্বীকারকারীগণ এই ঘটনা দিয়েও প্রমাণ পেশ করে থাকেন, যাতে হুজূর সা. মদিনাতে আনসারী সাহাবীগণকে নর খেজুর গাছের ফুল মাদি খেজুর গাছের সাথে বিশেষ পদ্ধতিতে লাগাতে নিষেধ করেছিলেন। সাহাবায়েকেরাম তার উপর আমল করলে উৎপাদন হ্রাস পায়। তখন হুজূর সা. বলেছিলেন, أنتم اعلم بأموردنياكم তোমাদের পার্থিব বিষয়ে তোমরা আমার চেয়ে ভালো জানো। অর্থাৎ এ ব্যাপারে আমার অনুসরণ করা তোমদের উপর ওয়াজিব নয়।

জবাব: রাসূল সা. এর বাণীগুলোর দুটি দিক রয়েছে। ১. যেসব বাণী তিনি রাসূল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ২. যেসব বাণী তিনি ব্যক্তিগত পরামর্শ রূপে বর্ণনা করেছেন।

أنتم أعلم بأموردنياكم এর সম্পর্ক দ্বিতীয় প্রকার বাণীর সাথে। আর আলোচ্য বিষয় হলো, প্রথম প্রকার বাণী। অতএব এই প্রমাণ ঠিক নয়।

এখানে প্রশ্ন হতে পারে, এটা জানা আমাদের জন্য কঠিন যে, কোন বাণীটি কোন শ্রেণির বা কোন প্রকারের। অতএব, রাসূল সা. এর বক্তব্য ও কর্মগুলোকে ব্যাপকরূপে প্রমাণ্য বলা যায় না।

এর জবাব হচ্ছে, রাসূল সা. এর আসল দিক হচ্ছে রাসূল হওয়া। অতএব, নবীজি সা. এর প্রতিটি কথা ও কর্মকে এই শ্রেণির উপর প্রযোজ্য ধরে প্রমাণ সাব্যস্ত করা হবে। তবে কোন স্থানে যদি কোন প্রমাণ বা নিদর্শন এমন পাওয়া যায়, যা ব্যক্তিগত পরমর্শের মর্যাদা রাখে এবং বাস্তব ঘটনাও এই যে, পুরো হাদীসভান্ডারে ব্যক্তিগত পরামর্শের উদাহরণ হাতে গণা কয়েকটি এবং এরূপ স্থানে স্পষ্ট ভাষায় বিবরণ রয়েছে যে, এই ইরশাদটি শরয়ী হুকুম নয়। বরং ব্যক্তিগত পরামর্শ। কয়েকটি বাণী ছাড়া বাকি সব বাণী রাসূল হিসেবে সম্পাদিত হয়েছে, আর এগুলো সবই প্রমাণ।

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমদ মাদরাসা মানিকনগর, ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ