আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের তিক্ততা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এমনটা আশ্চর্য্যজনক কিছু ছিল না। তবে গত এপ্রিলের শেষের দিকে ভারত যখন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে নাকাল হয়ে পড়ে, তখন সীমান্তের ওপারের বাসিন্দারা প্রতিবেশী দেশটির জন্য টুইটারে অজস্র সহানুভূতিমূলক বার্তা পোস্ট করেছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা জানান, সহানুভূতিমূলক হ্যাশট্যাগ মানেই যে ইতিবাচক টুইট তা কিন্তু নয়। ব্যবহারকারীরা এসব হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ট্রল থেকে শুরু করে তারকাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানিয়ে থাকে। কিন্তু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে গত ২১শে এপ্রিল থেকে ৪ঠা মে পর্যন্ত হাজারো পাকিস্তানি ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক টুইট করেছেন।
গবেষণাটি চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আশিকুর খুদাবুখশ। তিনি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদারতা, সমানুভূতি ও একতা প্রকাশকারী হাজারো টুইট শনাক্ত করেছেন। গবেষণার জন্য, প্রাথমিকভাবে #ইন্ডিয়ানিডসঅক্সিজেন, #পাকিস্তানস্ট্যান্ডসউইথইন্ডিয়া, #এন্ডিয়াসেস্যরিটুকাশমির হ্যাশট্যাগ সম্পন্ন ৩ লাখ টুইট সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৫৫ হাজার ৭১২টি টুইট করা হয় পাকিস্তান থেকে ও ৪৪ হাজার ৬৫১টি করা হয় ভারত থেকে। বাকিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পোস্ট হয়।
টুইটগুলো সংগ্রহের পর একটি ‘হোপ স্পিচ ক্লাসিফায়ার’ (আশা জাগানিয়া বক্তব্য শ্রেণিকারী) – একটি ভাষা যাচাইকরণ যন্ত্র- ব্যবহার করে সেগুলো থাকা বাক্যগুলো থেকে ইতিবাচক মন্তব্যগুলো বাছাই করা হয়। এক্ষেত্রে গবেষকরা লেখাগুলোয় ‘সহিংসতা প্রশমনকারী ইতিবাচক আশা জাগানিয়া বক্তব্য’ আছে কিনা- প্রার্থনা, সমানুভূতি, একতা, মর্মপীড়া ইত্যাদি শব্দ- তা শনাক্ত করার প্যাটার্ন খুঁজেছেন।
গবেষণাটিতে দেখা গেছে, পাকিস্তান থেকে পোস্ট হওয়া টুইটগুলোতে অসহানুভূতিশীল টুইটের চেয়ে সহানুভূতিপূর্ণ টুইটের সংখ্যা অনেক বেশি। পাশাপাশি সেগুলোয় লাইকও বেশি পড়েছে; রিটুইটও বেশি হয়েছে। এর ফলে সেগুলো খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
খুদাবুখশ বলেন, আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে যে, মানুষের আবেগ প্রকাশের মধ্যে এক ধরনের সর্বজনীনতা রয়েছে। আপনি যদি উদ্দেশ্যহীনভাবে খোঁজেন তাহলে আপনি ৪৪ শতাংশেরও বেশি সময় ইতিবাচক টুইটই পাবেন। আমাদের গবেষণা পদ্ধতিতে ৮৩ শতাংশ সময়েই ইতিবাচক টুইট শনাক্ত হয়েছে।
এপ্রিলের শেষের দিকে ও মে’র শুরুর দিকে ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। হাসপাতালের সব শয্যা রোগীতে ভর্তি হয়ে যায়, অক্সিজেন না পেয়ে মারা যান অনেকে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে হয়। ওই সময়ে পাকিস্তান থেকে ভারতীয়দের জন্য ব্যাপক পরিমাণে সহানুভূতির প্রদর্শন হয়েছে।
লাহোরের ইতিহাস বিষয়ক অধ্যাপক আরিফা জেহরা বলেন, এর পেছনে একটি কারণ হতে পারে যে, ওই সময়ে পাকিস্তানেও সংক্রমণ পরিস্থিতি তীব্র হচ্ছিল। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখানেও বেশ খারাপ ছিল। আমাদের আশা দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের শত্রুদের অবস্থাও তখন একই। আমাদের সীমান্ত এত কাছাকাছি যে, যাই ঘটুক না কেন, সবকিছুই আমাদের একে-অপরকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু অধ্যাপক জেহরা আরও বলেন যে, এসব ইতিবাচক বার্তা আমায় উষ্ণ অনুভূতি দিয়েছে। আমরা যে এখনো মানুষ আছি, এর সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা ছিল এগুলো। ভূতাত্ত্বিক হোক বা আদর্শগত, মহামারি কোনো সীমান্ত চেনে না। আর আকাশে কালো মেঘ দেখলে প্রার্থনা ভাগ করায় কোনো ক্ষতি নেই।
আর পাকিস্তানি টুইটাররা তাই করেছেন। ২৪শে এপ্রিল ফাতিমা খলিল ভট্ট নামে একজন লিখেছেন, ‘ইয়া আল্লাহ, ভারতের মানুষদের উপর রহমত করো। আপনাদের জন্য দোয়া ও সহানুভূতি রইলো। আমরা প্রতিবেশী, শত্রু নই।’
একইদিন ডা. মারিয়া জামান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘ইদি ফাউন্ডেশন ভারতে ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। সবকিছুর আগে মানবতার স্থান। আমরা প্রতিবেশী; শত্রু নই। আমরা প্রতিন্দ্বন্দ্বী; প্রতিপক্ষ নই। আমাদের সীমান্ত আছে সত্য, কিন্তু হৃদয়ে কোনো সীমান্ত নেই।।’
আরহাম হায় নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশীদের পরিস্থিতি হৃদয়বিদারক। পাকিস্তান থেকে ভালোবাসা ও দোয়া রইলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানবজাতিকে এই মহামারির মধ্যে সহায়তা করুক।’
-কেএল