হুসাইন আহমদ মিসবাহ।।
ঢালাওভাবে খেলাধুলা বা বিনোদনের অনুমতি ইসলাম দেয়নি আবার সর্ব প্রকারের খেলাধুলা বা বিনোদনকে নিষিদ্ধও করেনি। খেলাধুলা বা বিনোদন সম্পর্কে ইসলামে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা অনেকেই জানি না, আবার অনেকে জানলেও পুরোপুরি মানিনা। তাই যারা জানিনা তাদের জানাতে এবং যারা জানি তাদের স্মরণ করিয়ে দিতেই চলমান প্রয়াস।
সামগ্রিক দিক বিবেচনায় খেলাধুলা ৫ প্রকার। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক প্রকারের বিধান ভিন্ন। খুবই সংক্ষেপে সে ৫ প্রকারের উপর আলোকপাত করছি।
এক: হারাম। এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যে খেলাগুলো মৌলিকভাবেই হারাম। যেমন জুয়া, ষাড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, রেসলিং। কারণ এই খেলাগুলোতে বিনোদনের নামে প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া হয়। এক পক্ষের সম্পদ নষ্ট হয়। যা বৈধ হতে পারে না। এমন খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই নিষেধ।
দুই: নীতিগত কারণে হারাম। এমন কিছু খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না কিন্তু খেলার মধ্যে এমন কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে যেগুলো হারাম। যেমন ফুটবল। যে খেলাটি আসলে হারাম ছিল না, কিন্তু খেলার একটি নীতি সেটাকে হারাম করে দিয়েছে। সেটা হল এই খেলা হয় হাফপ্যান্ট পরে। আর প্রত্যেক পুরুষের জন্য নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অন্য পুরুষকে দেখানো হারাম। অন্যের জন্য দেখাও হারাম। খেলায় হাটুর উপরাংশ খোলা থাকায় এই খেলাটি হারাম। তাই এই খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই নিষেধ। আর যদি নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে খেলা যায়, তাহলে নীতিগতভাবে হারাম হবে না।
তিন: সংযুক্ত হারাম। এমন খেলা যেগুলো মৌলিকভাবে হারাম ছিল না, হারাম শর্ত সংযুক্ত করণে হারাম হয়েছে। যেমন; বাজি। যেকোন খেলায় যদি বাজি ধরা হয়, তাহলে সেটা হারাম হয়ে যাবে। বাজির খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সবই নিষেধ। বাজির টাকা লেন-দেনও নিষেধ।
চার: শর্তসাপেক্ষে হালাল। যেসব খেলাধুলা উপরোল্লিখিত ৩ পর্যায়ের নয়, সেসব খেলাধুলা কিছু শর্তে হালাল হবে। শর্তের মধ্যে রয়েছে- খেলায় ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষতিকারক কিছু থাকতে পারবে না। খেলাটি খেলোয়াড় বা দর্শকদের ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হবে না, যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি। যদি খেলা বা দেখার কারণে নামাজ, রোজা ইত্যাদি আদায় করা যায় না, তাহলে সে খেলা হালাল হবে না।
পাঁচ : সুন্নত। অবাক হলেও কিছু খেলা আছে সুন্নত। যেমন তীর নিক্ষেপ, পর্দ্দা রক্ষা করে স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা। এখানে দুটি পর্যায়ের খেলা রয়েছে।
এক. তীর নিক্ষেপ। রাসুল সা. এর যুগে তীর ছিল অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র। যুদ্ধের ট্রেনিং স্বরূপ সাহাবায়ে কেরাম রা. এর মধ্যে তীর নিক্ষেপ খেলা হয়েছে। তাই যুদ্ধের ট্রেনিং সংক্রান্ত খেলা বা প্রতিযোগিতা সুন্নতি খেলার তালিকায় গণ্য হবে। অতএব সৈনিকদের জন্য যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা সুন্নত।
দুই. শরীয়তের বিধান মেনে স্ত্রীর সাথে বিনোদনমূলক খেলাধুলা সুন্নত। রাসুল সা. আম্মাজান আয়েশা রা. এর দৌড় খেলায় অংশ নিয়েছেন।
শেষকথা। যেসব খেলা মৌলিকভাবে হারাম, খেলার রীতি-নীতি হারাম, খেলায় সংযুক্ত বিষয় হারাম বা খেলার কারণে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রে ক্ষতি হয় কিংবা ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান লঙ্ঘন হয়, সেসব খেলার আয়োজন, খেলা, দেখা, সহযোগিতা করা, সাপোর্ট করা সবই হারাম। আর যেসব খেলায় উল্লেখিত বিষয়গুলো নেই, সেসব খেলার আয়োজন করা, খেলা, দেখা, সহযোগিতা করা, সাপোর্ট করা জায়েয। কিন্তু মনে রাখতে হবে এতে মূলবান সময় অপচয় হয়। তবে সেসব খেলায় যদি শরীরচর্চার উপদান থাকে, তাহলে সময় অপচয় বলে বিবেচিত হবে না। আর শরীয়তের বিধান মেনে যুদ্ধের ট্রেনিং সংক্রান্ত খেলা, স্ত্রীর সাথে বিনোদনমূলক খেলা সুন্নত। এমন খেলায় সাওয়াব হবে। আল্লাহ! আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
এনটি