সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬


নিশ্চয় আল্লাহর সাথে অংশীদার বানানো সবচে বড় জুলুম: আল কুরআন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুর রশীদ।।

পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে যেমন রয়েছে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা। ঠিক তেমনি রয়েছে পরস্পর পরস্পরের প্রতি জুলুম বা অন্যায় আচরণের প্রবণতা ৷ জুলুম এমন একটা অপরাধ বা অন্যায় যার অস্তিত্ব প্রতিটি সেক্টরে লক্ষ্য করা যায় ৷ সাধারণত জুলুম বলতে আমরা বুঝি কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করা, ধন-সম্পদ নষ্ট করা, হত্যা করা ইত্যাদি ৷ কিন্তু জুলুম অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ বহন করে থাকে ৷ জুলুম হতে পারে স্রষ্টার প্রতি, নিজের প্রতি, অন্যের প্রতি, প্রাণীর প্রতি ও উদ্ভিদের প্রতি ইত্যাদি ৷

এছাড়াও জুলুম প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও বস্তুর প্রতিও হতে পারে ৷ তাই, জুলুম সম্পর্কে জ্ঞান রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ৷ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি কোনো জুলুম করতে চান না।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১০৮) আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘আপনার প্রভু কারো ওপর জুলুম করেন না।’ (সূরা কাহফ, আয়াত: ৪৯)। হাদীসে এসেছে, ‘নবী করিম সা. তাঁর মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা! আমি আমার জন্য জুলুম হারাম করেছি আর তা (জুলুম) তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও হারাম করেছি । অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৬৭৩৭)।

জুলুম শব্দের সাধারণ অর্থ হলো- বস্তুকে তার সঠিক জায়গায় দাখিল না করা ৷ এছাড়াও অত্যাচার, অবিচার, জবরদস্তি, উৎপীড়ন, সীমালঙ্ঘন ইত্যাদি বুঝায়৷ সুতরাং স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে জুলুমের অর্থ ব্যাপক ৷

যাপিত জীবনে যেভাবে আমরা স্রষ্টার প্রতি জুলুম করে থাকি সে সম্পর্কে আমরা কয়জনই বা চিন্তা করি ৷ যিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তাঁর প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি জুলুম করে থাকি ৷ অথচ এর প্রতি আমরা ভ্রূক্ষেপও করি না ৷ এটা সাধারণ কোনো অপরাধ নয়; বরং মহা অপরাধ ৷ এটা কেমন মহা অপরাধ তা বুঝতে পারা আমাদের চিন্তা-শক্তিরও বাইরে।

মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে রব হিসেবে গ্রহণ না করাই হলো তাঁর প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম (শিরক)৷ কেননা তিনিই যেহেতু সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা; অন্য কেউই এর উপযুক্ত নয় ৷ সুতরাং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ করাই হলো আল্লাহর প্রতি জুলুম করা ৷ সকল প্রকার ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র মহান আল্লাহ তা’য়ালা ৷ যখন ইবাদত অন্যের জন্য করা হয় কিংবা অন্যকে খুশি করার উদ্দেশে করা হয়, সেটা হবে আল্লাহর প্রতি মারাত্মক জুলুম (শিরক) ৷

লোক দেখানো ইবাদাতও এক প্রকার বড় জুলুম ৷ লোক দেখানো ইবাদত মূলত আল্লাহর সাথে ঠাট্টা কারার শামিল ৷ এমনও ঘটে যে, আমরা যখন কোনো বিপদের কবল থেকে মুক্তি পায় তখন চিন্তা না করেই বলে ফেলি, এটা না থাকলে বা এই ব্যক্তি না হলে আমি প্রায়ই মারা যেতাম বা আমার অনেক ক্ষতি হতো ৷ জমিতে সার দেওয়ার ফলে ফসল ফলেছে ইত্যাদি এসবের মধ্য দিয়ে জুলুম হয়ে থাকে ৷ এভাবে আমাদের বিভিন্ন কর্মের ক্ষেত্রে যা মাধ্যম হয়ে থাকে সেগুলোকে আল্লাহর স্থানে উত্তীর্ণ করাই হলো আল্লাহর প্রতি জুলুম করা ৷

কারণ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোনো না কোনো কিছুকে আল্লাহ মাধ্যম বানিয়ে আমাদের সাহায্য করে থাকেন ৷ আবার কখনো কখনো কোনো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ আমাদের যত্ন নেন ৷ তাই আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা একান্ত অপরিহার্য যেন মহান রবের প্রতি জুলুম না হয়ে পড়ে ৷ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম ৷ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩) মনে রাখবেন, শিরকের গুনাহ আল্লাহ তা’য়ালা কখনো ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না তাওবা করে পুনরায় ঈমান গ্রহণ করেন ৷

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম ও সদস্য- বাংলাদেশ কওমি তরুণ লেখক ফোরাম

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ