শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই 

গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা, নজরদারিতে ফেসবুক-ইউটিউব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: কঠোর নজরদারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউব। গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন প্রযোগকারী সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট পোস্ট মুছে ফেলাসহ অপরাধীকে নিয়ে আসছে আইনের আওতায়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্য, নারী-শিশু হয়রানি সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট তাদের সাইবার নিরাপত্তা আরো জোরদার করছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি চট্টগ্রামে সাইবার ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। কোরিয়া সরকারের সহায়তায় এই ল্যাব স্থাপন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে গুজব সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজার কথাও ভাবছে সরকার। তবে গত বছর গুজব বন্ধে হাইকোর্ট বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছিল।

জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক, টুইটার, লাইকি, বিগো লাইভসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিয়াজোঁ অফিস স্থাপনের জন্য দফায় দফায় অনুরোধ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং একই সঙ্গ রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। তবে এরই মধ্যে নানা অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুরোধে লাইকি কর্তৃপক্ষ ৪৩ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে ফেসবুক এবং গুগল এনবিআরে নিবন্ধন নিয়েছে এটা দেশের জন্য একটা বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। আশা করছি শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশেও লিয়াজোঁ অফিস খুলবে। তখন সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরাসরি তাদের সহায়তা নেওয়া যাবে।

দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোতেও তারা আসবে। অন্যদিকে অতীতের চেয়ে দেশে সাইবার অপরাধ বেড়েছে। ২০১৮ সালের আইনের কারণে এখন সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কেউ পার পাচ্ছে না। কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বিদেশে অবস্থানকারীদের নিয়ে।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান প্রযুক্তি দেশের থানা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এ বিষয়টি আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবকে কয়েক দফা বলেছি। বলেছি প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সাপোর্ট দেওয়া হবে।

সিআইডি সূত্র জানায়, বিটিআরসির মাধ্যমে ফেসবুকের ৪০ শতাংশ পোস্ট ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মুছে দেওয়া সম্ভব হয়। এর বাইরে অ্যাকাউন্ট বন্ধসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করার বিষয়ে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট অপারেটরের মাধ্যমে সফল হয়। ৪৩ হাজার লাইকি বন্ধ করা হয়েছে। বিগো লাইভের ওপর কাজ হচ্ছে।

দেশে বর্তমানে বিগো লাইভের ১০ লাখের ওপর অ্যাকাউন্ট। ৬০ হাজারের মতো হোস্ট আছে। বিগো লাইভের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অসংখ্য অভিযোগ আসার কারণে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

র‌্যাবের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ২৩৫টি মামলার বিপরীতে ২৪৩টি অভিযানে ৪১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৩টি মামলার বিপরীতে ২৫টি অভিযানে ১৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ২০১৮ সাল থেকে বাড়তে থাকে সাইবার অপরাধের ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা।

এদিকে, সিআইডির সিপিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক কামরুল আহসান বলেন, অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কুৎসা রটনা করে গুজব ছড়ায়। আর গুজব নিয়ে স্ট্যাটাস কিংবা ইউটিউবে কোনো কনটেন্ট দিলে অনেক ভিউয়ার হয়। লাইক এবং কমেন্ট পড়ে। আবার সরকারবিরোধী একটি চক্র বিদেশে অবস্থান করে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তবে যারা ওইসব স্ট্যাটাস শেয়ার করেন, লাইক দেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। গুজব সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ অপরাধ করে পার পাচ্ছে না। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আমাদের সাইবার পেট্রলিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। কোরিয়ান সরকারের সহায়তায় শিগগিরই চট্টগ্রামে একটি সাইবার ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা স্থান নির্বাচন করেছি।

গত ২৭ জুন মো. জামাল উদ্দীন হাবিবী (মো. আখতারুজ্জামান) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ‘‘Inna-Lillah Mufti Sakhawat Hussain Razi Hafi, Not found in any prison! Where is the end of this oppression’’ এই পোস্ট করেন।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সহায়তায় (সিপিআই) পরদিনই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা গুজব ছড়ানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি কুড়িগ্রাম জেলার সদস্যরা। জামাল (২১) নাগেশ্বরী থানার পশ্চিম তেলিয়ানীর পাড় গ্রামের ইনজিল হকের ছেলে।

২৭ জুন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটে Abdullah Molla আইডি থেকে একই ধরনের স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। পরে সিপিআইর সহায়তায় আবদুল্লাহ মোল্লাকে মাগুরা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা এর আগেও হয়েছে। আর যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে লক্ষ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক হায়দার আলী খান বলেন, সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে ২৪ ঘণ্টাই সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আমাদের নজরদারি থাকে। এ জন্য কেউ অপরাধ করে পার পাচ্ছে না। সাইবার অপরাধের ওপর নিয়মিতভাবেই পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মকর্তা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে পোস্টিং হলেও তাদের থেকে আরও বেশি উপকৃত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিট এবং ভুক্তভোগীরা।

গুজব বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা: গত বছরের মার্চে গুজব বন্ধে হাই কোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, পুলিশের প্রত্যেক সার্কেল অফিসার (এএসপি) তার অধীনের প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে ছয় মাসে অন্তত একবার গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনি প্রবণতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে মিটিং করবেন।

গুজব এবং গণপিটুনির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সামাজিক মাধ্যমে যে কোনো ধরনের অডিও, ভিডিও, খুদে বার্তা যা গুজব সৃষ্টি বা গণপিটুনিতে মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বন্ধের ব্যবস্থা নেবে। যারা এসব কাজে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।

যখনই গণপিটুনির ঘটনা ঘটবে, কোনো রকম দেরি না করে তখনই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রাথমিক তদন্ত এফআইআর নিতে বাধ্য এবং তা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে অবহিত করবেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ