শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পানি বিপর্যয় নিরসনে বৈশ্বিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার কোভিড-১৯ পরবর্তী টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় নিরসনে শক্তিশালী অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিষ্কার সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতি, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদির মতো রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের শান্তি ও বিকাশের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। পানি সংক্রান্ত ব্যাধি নিরসনে আমাদের আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টি করার একটি সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ৫ম জাতিসংঘ পানি এবং বিপর্যয় সম্পর্কিত বিশেষ থিম্যাটিক অধিবেশনে পূর্বে ধারণকৃত ভাষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিশ্ব এখন কোভিড-১৯ এর জন্য আমাদের সময়ে সবচেয়ে ব্যাপক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যা প্রচুর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিঘ্নের সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে আমাদের টেকসই উন্নয়নের গতি হ্রাস পেয়েছে।

পানি সংক্রান্ত বিপর্যয় সমাধানে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সম্পদকে সংগঠিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সরকার ও অংশীদারদের সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত পানি ও দুর্যোগ সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও নেতৃত্ব প্যানেল (এইচইএলপি) এই অধিবেশনটির আয়োজন করেছে।

এই বছরের অধিবেশনটি ‘আরও বেশি স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া’ শীর্ষক শিরোনামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাতে পানি এবং বিপর্যয় (এইচইএলপি) বিষয়ে হাঙ্গেরি, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, রিপাবলিক অব কোরিয়া, তাজিকিস্তান এর উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ এবং নেতৃবৃন্দ অংশ নিচ্ছেন এবং জাপানের ন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (জিআরআইপিএস) এ অনুষ্ঠানের সহ আয়োজক।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেচনার জন্য পাঁচটি প্রস্তাবও উত্থাপন করেন।

তিনি তার প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, বিশকে নিরাপদ পানির জন্য সমন্বিত, ফলদায়ক, মনোযোগী এবং অভিযোজিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং বিশেষ করে ভালো অনুশীলন, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় ও চতুর্থ প্রস্তাবে আরও বলেন যে, পানি ব্যবস্থাপনার ঐকতান থাকা উচিত, ওপরের ও নিম্ন অববাহিকার দেশগুলির মধ্যে পানি নীতি ও ব্যবহারের বিষয়ে সমঝোতা হওয়া উচিত এবং সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক, এসডিজি এবং প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে বিশ্বের মনোনিবেশ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির পানির বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে আর্থিক সংস্থান করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও যোগ করেন, ‘৪৮-দেশীয় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য জলবায়ুতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির স্বার্থকে সমুন্নত করা এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন অভিযোজন সমাধানের প্রচার করা।

‘আমরা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে জলবায়ু স্থিতিশীলতায় এবং সেখান থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধিতে রূপান্তরের জন্য কাজ করছি’, যোগ করেন তিনি।

তার দেশের পানি সম্পর্কিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিশদ বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,  বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক নিম্ন সমতল ভূমির একটি দেশ, তিনটি নদীর সঙ্গম তটে অবস্থিত- গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনার।

বর্তমানে, বাংলাদেশ দুই ধরনের পানি সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি যার একটি হচ্ছে উদ্বৃত্ত পানি এবং অপরটি পানির ঘাটতি, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষা মৌসুমে ৯০ শতাংশ পানি তার সীমান্তের ওপারের জলাবদ্ধতা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আর শুষ্ক মৌসুমে সারা দেশে খরা জাতীয় পরিস্থিতি বিরাজ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানীয় জলের ঘাটতি একটি উদীয়মান সমস্যা।

সাম্প্রতিক ঘুর্ণিঝড়গুলো দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের জলবায়ুগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে সুপার সাইক্লোন আম্ফান এবং মৌসুমী বন্যা, যাতে চলমান কোভিড-১৯ এর মধ্যেও দেশের ৬০ লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

একইভাবে গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ২৭টি উপজেলাকে ডুবিয়ে দিয়ে ফসল, মৎস এবং অবকাঠামোর ক্ষতি করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমনিতেও বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি কেননা বন্যা, জলোচ্ছ্বাস,ঘূর্ণিঝড় এবং নদীর ভাঙন এখন নিত্যকার ঘটনা।

এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এর অধীনে দুর্যোগ ২০১৯ সম্পর্কিত স্থায়ী আদেশসমূহকে ‘পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তদুপরি, সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশ ২০২১ থেকে ২০২৫ সময়ের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জাতীয় পরিকল্পনাটি সংশোধন করেছে, তিনি আরও যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত সর্বনিম্ন পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক দুর্যোগ প্রস্তুতি মডেল তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ‘নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ অর্জন’ এর ভিশন নিয়ে বাংলাদেশ ডেলটা পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছে এবং একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক প্রকল্পের জন্য ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছে।

তিনি আরও বলেন, তার সরকার দেশজুড়ে ভূমিহীন, গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত পরিবারের জন্য হাজার হাজার দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধ, ১২ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং ২ লক্ষ হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় বৃক্ষরোপণ করেছি। উপকূলীয় বেড়িবাঁধের প্রায় ৫,৭০০ কিলোমিটারের উচ্চতা বর্ধনের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব থেকে লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে উপকূলীয় অঞ্চলে বরাবর সুপার ডাইক নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে, বলেন তিনি।

উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনিকে তার সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩ কোটি গাছের চারা রোপণ করছেন।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ