শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আ.স.ম আল আমীন

আজকের দিনে সারা বিশ্বে ইসলাম বিদ্বেষীদের মূখে একই সূর মুসলিম সমাজে অমুসলিমদের অধিকার সুরক্ষিত নয়, অথচ ইসলাম সর্ব প্রথম পৃথিবীর বুকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন করেছে। প্রথমত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করার সুযোগ নাই।

ধর্মের ব্যাপারে যে কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগ ও জবরদস্তি ইসলামে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি নেই (সুরা বাকারা ২৫৬) একটি মুসলিমে দেশে শুধু অমুসলিমদের কে শান্তিতে বসবাস করতে বলে না বরং রাষ্ট্র তাদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ সমৃদ্ধি ও নিশ্চিত করে।

তাছাড়া ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যাদের সাথে কোন সংঘাত নেই, এবং মুসলিদের সাথে শান্তিতে বসবাস করে তাদের প্রতি ইসলাম ইনসাফ করার জন্য ও ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, আল্লাহ নিষেধ করেন না ঐলোকদের সাথে সদাচার ও ইনসাফ পূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সাথে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ লিপ্ত হয়নি এবং তোমাদের আবাস ভূমি থেকে তোমাদের বের করে দেইনি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। (সুরা আল- মুমতাহিনা, আয়াত ৮) আল্লাহ তায়া’লা ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধা দেখাতে নির্দেশ দিয়েছে।

আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন। তারা আল্লাহ তায়ালা বদলে যাদেরকে ডাকে, তাদেরকে তোমরা কখনো গালি দিওনা নইলে তারাও শত্রুতার কারনে না জেনে আল্লাহ তায়া’লা কেও গালি দিবে। আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দিবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে ( সুরা আল আনআয়াম, আয়াত, ১০৮)

ইসলামে রাষ্ট্রে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার

১-প্রানের নিরাপত্তা: অমুসলিম নাগরিকদের রক্তের মূল্য মুসলমানদের রক্তের মূল্যের সমান। কোন মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে, তাহলে একজন মুসলমান নাগরিক কে হত্যা করলো, যেমন তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো ঠিক তেমনি মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। রাসুল( সঃ) এর আমলে জনৈক মুসলমান অন্যন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি হত্যা করলে তিনি খুনি কে মৃত্যু দন্ড দেন। তিনি বলেন, যে নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে, তার রক্তের বদলা নেয়ার দায়িত্ব আমারই।

২-ফৌজদারি দন্ডবিধি: ফৌজদারি দন্ডবিধি মুসলিম অমুসলিম সকলের জন্য সমান, অপরাধের যে সাজা মুসলিমরা পাবে, সে সাজা অমুসলিমদের উপরও প্রয়োগ হবে। যেমন, কোন অমুসলিম নাগরিক যদি মুসলমানদের জিনিস চুরি করে, এবং কোন মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিকদের জিনিস চুরি করে, তাহলে উভয়ের উপর হাত কাটার বিধান প্রয়োগ হবে"( আল মাবসুত ৯ম খন্ড পৃ- ৫৭-৫৮)

৩-দেওয়ানি আইন: দেওয়ানি আইন ও উভয়ের সমান। তাদের সম্পত্তি আমাদের সম্পত্তির মতো, তাই তাদের সম্পদের হেফাজত করাও মুসলমানদের দায়িত্ব। ব্যবসায়িক যে সব পন্থা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ, তেমনি অমুসলিমদের জন্য ও তবে শুধুমাত্র শুকর বেচাকেনা, খাওয়া এবং মদ বানানো, পান ও বেচাকেনা করতে পারবে।

৪-সম্মানের হিফাজত: যেমন কোন মুসলিম কে নিয়ে ঠাট্টা গিবত মারপিট করা অবৈধ, তেমনি এসব কাজ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বেলায় ও অবৈধ।

৫-পারিবারিক বিষয়াদি: অমুসলিম নাগরিকদের পারিবারিক কর্মকাণ্ড নিজস্ব পারিবারিক আইন অনুযায়ী ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে তাদের উপর ইসলামী কানুন কার্যকর করা হবেনা। মুসলিমদের ঘরোয়া জীবনে যে সব জিনিস অবৈধ, তা যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় ও জাতীয় আইনে বৈধ হয়। তাহলে ইসলামি আদালত তাদের আইন অনুযায়ী ফয়সালা দিবে।

৬-ধর্মীয় অনুষ্ঠান: অমুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদযাপন করা সম্পর্কে ইসলামের বিধান এই যে, নিজেদের জনপদে স্বাধীনভাবে করতে পারবে তবে পরিপুর্ন ইসলামি জনপদ গুলোতে ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার স্বাধীনতা এবং বিধিনিষেধ প্রয়োগ করার এখতিয়ার রাখে।

৭-উপাসনালয়ের নিরাপত্তা: ইসলমী রাষ্ট্রের সরকার অমুসলিম নাগরিকদের উপাসনালয় গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এই উপসনালয়গুলো ভেঙে ফেলা সাধারণ পরিবেশে তো দূরের কথা যুদ্ধ অবস্থায় ও হামলা করা যাবেনা। শরিয়তে সুনির্দিষ্ট অধিকার ছাড়াও বর্তমান যুগে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরকে যে সব সাধারণ অধিকার দেয়া হয়েছে -

১- বাকস্বাধীনতা ও লেখালেখির স্বাধীনতা: অমুসলিম নাগরিকদেরকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দেশের কল্যানে কথা বলা ও লেখালেখির স্বাধীনতা ও নিজেদের ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা মুসলিমদের মত ভোগ করবে

২- শিক্ষা: ইসলামী রাষ্ট্র গোটা দেশের যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করবে তাদেরকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থাই গ্রহন করতে হবে। কিন্তু ইসলামের ধর্মীয় বই পড়তে বাধ্য করা যাবেনা। দেশের সাধারন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অথবা নিজেদের বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপন ধর্ম শিক্ষার আলাদা ব্যবস্থা করার পুর্ন স্বাধীনতা থাকবে। তাছাড়া চাকরি ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও পেশাতে অমুসলিমরা মুসলিমদের মত ভোগ করবে তবে চাকরির বিশেষ কিছু পদ ছাড়া সকল চাকরিতে তাদের প্রবেশাধিকার থাকবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ও পেশাতে পুর্ন স্বাধীনতা থাকবে, তবে মুসলমানদের উপর আরোপ করা হয়না এমন কোন বিধিনিষেধ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপরও আরোপ করা যাবেনা। একমাত্র ইসলামেই পারে অমুসলিমদের অধিকার দিতে, এই জন্য ইসলাম মানবতা শান্তি ও শ্রেষ্ঠতম ধর্ম।

লেখক: শিক্ষার্থী, মা'হাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহিল ইসলামী, কাজলা, যাত্রাবাড়ী

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ