শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা

শাইখুল কোরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন: আমার গবেষণা কর্মের পথপ্রদর্শক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাইয়েদ আহমাদ সাঈদ।।

১৯৭৪ এর জানুয়ারী। এক সকাল বেলা। সুর্য উঠছে উঠছে। ছিলাম ঘুমে। শীতকাল। আম্মু জাগিয়ে তুললেন। বললেন; ‘তোমার আব্বু ফজরের আগেই মাদরাসায় গিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠে তোমাকে মাদরাসায় যেতে বলেছেন।’ উঠলাম। হাত মুখ ধুলাম। ফজর নামায পড়লাম। আমার চেয়ে বয়সে দু’ বছরের বড় বোনসহ গেলাম। মাদরাসায় গিয়ে দেখি এক শুভ্র শ্মশ্রুধারী সুদর্শন ফর্সা এক বুজুর্গ শিশু শ্রেণীতে পড়াচ্ছেন। যাকে আগে কখনো দেখিনি। ভয় পেয়ে গেলাম। আব্বু আমাকে দেখে হাত ধরে নিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। আমার জন্য দোআ চাইলেন। তিনিও দোআ করলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

এর আগে আব্বাজান রহ. এর কাছে নুরানি কায়েদা পড়েছিলাম। যাতে ছিলো আলিফ, বা, তা, সা। তিনি পড়াচ্ছেন, আলিফ, মীম, তোয়া, জোয়া। কিছুটা অবাক হলাম। পড়াচ্ছেন ব্ল্যাক বোর্ডে। আব্বাজান রহ. আগে থেকেই চকশ্লেট প্রস্তুত রেখেছিলেন। আমাদের হাতেও চকশ্লেট দিলেন। শাইখ আমাদেরকেও লিখতে বললেন। আমরা অনেক বার তা লেখলাম। দেখালাম। তিনি বাহবা দিলেন। জাযাকাল্লাহ বলে আরো সুন্দর করে লিখতে অনুপ্রেরণা দিলেন।

সবক শেষে তাঁর পরিচয় আব্বাজান রহ.কে জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা ছিলো। ভয়ে তা পারলাম না। আব্বাজান রহ. ছিলেন আল্লাহওয়ালা বুজর্গ আলেম। মাদরাসার মুহতামিম। ছোট বড় সকলেই তাকে ভয় করতো। তাই সব সময় তাঁর ভয় অন্তরে বিদ্যমান থাকতো। এ কারণেই পরিচয় জানার সাহস আর হলো না।

সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সবক হতো। তারপর বাড়ি গিয়ে নাস্তা করা হতো। এভাবেই পার হলো দশ-বারো দিন। একদিন সবকে এসে শাইখকে দেখলাম না। অন্য আরেকজন পড়াচ্ছেন। অবুঝ বয়সেও শিক্ষক বাছাইয়ের বদ অভ্যাস ছিলো। যার তার কাছে পড়তে রাজি হতাম না। হযরতকে না দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। আব্বাজান রহ. কেও কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। ছোটদের অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যমই হলো কান্না। তাই কাঁদতে লাগলাম। আব্বাজান রহ. কান্নার কারণ বুঝতে পারলেন না। বুবুকে জিজ্ঞেস করলেন। বুবু বললো; ‘নতুন শিক্ষক হওয়াতে তার কাছে খারাপ লাগছে।’ আব্বাজান রহ. বললেন; ‘ঠিক আছে। হযরতকে পুনরায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।’

ছোট্ট মনে শাইখের পরিচয় জানার প্রচন্ড আগ্রহ ছিলো। ভেবেছিলাম আম্মাজান রহ.কে জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু কেন যে করা হলো না তা এখন আর মনে নেই। তারপরেও যেদিন তাঁকে দেখলাম না সেদিন আব্বাজান রহ.কে ‘তিনি কোথায়?’ বলে জিজ্ঞেস করলাম। ভাবলাম, ধমক খাবো। ধমক খেতে হলো না। তিনি হাসিমুখেই বললেন; ‘হযরত বাড়ি গিয়েছেন। তিন চার মাস পর আবার আসবেন।’ আব্বুর হাসিমুখ দেখে পরিচয় জিজ্ঞেস করতে সাহস হলো। বললেন; ‘তিনি ট্রেনিং হুজুর।’ তিনিই হলেন কুরআন শিক্ষা জগতে বিপ্লব সৃষ্টিকারী মহানায়ক, যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, শাইখুল কুরআন, আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন সাহেব রহ.।

আমার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় সরাসরি হযরতের বরকত নেওয়ার মাধ্যমেই। হযরত আমাদের মুজাহিদপুর মাদরাসায় রমযানে মুআল্লিম ট্রেনিংয়ের কাজ করতেন বিধায় ট্রেনিং হুজুর নামেই খ্যাত ছিলেন। আমরা হযরতকে ‘হুজুর’ বলেই সম্বোধন করতাম। আশির দশকের শুরুতে দেখলাম যে, আব্বাজান রহ. তাঁকে আগের মত ‘হুজুর’ না বলে ‘হযরত’ বলে সম্বোধন করছেন। পরবর্তীতে দেখলাম, সকলেই তাঁকে ‘হযরত’ বলে সম্বোধন করছেন।

প্রাথমিক স্তরে থাকতে আমরা হযরত রহ.কে মক্তবের একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক ব্যতীত অন্য কিছু মনে করতে পারতাম না। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামও তাঁকে এভাবেই মূল্যায়ন করতেন। আব্বাজান রহ. তাঁকে মূল্যায়ন করতেন একজন গবেষক, উদ্ভাবক, আবিস্কারক, উম্মতদরদী, আল্লাহওয়ালা, গভীর জ্ঞানের অধিকারী, নির্লোভ ও নির্মোহ মুহাক্কিক বুজুর্গ আলেম হিসেবেই। দেশের তারকাখ্যাত ওলামায়ে কেরামের চেয়েও তাঁকে গুরুত্ব দিতেন বেশী। মাদরাসার বিষয়ে তাঁর ইসলাহী মাশাইখদের রায়ের উপর হযরতের রায়কেই অগ্রাধিকার দিতেন তিনি। তিনি বলতেন; “তোমার ইলম নাফে’ হওয়ার অর্থ বুজুর্গ হিসেবে খ্যাতি লাভ নয়। এক দু’ হাজার ছাত্রকে বুখারী পড়ানো নয়। তোমার ইলম নাফে’ হওয়ার অর্থ হলো তোমার ইলমের উসীলায় মুসলিম উম্মাহর বড় কোন অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা হওয়া।” এ অর্থেই তিনি হযরতকে সবচেয়ে বেশী ইলমে নাফে’ এর অধিকারী মনে করতেন। মাধ্যমিক স্তর পার হওয়ার পর আব্বাজান রহ. অন্য সবার চেয়ে তাঁকে বেশী গুরুত্ব দেওয়ার কারণটি বুঝতে পারি। মকতবের শিক্ষক বা মকতব শিক্ষার সংস্কারক মনে করে আমরা কেউ হযরতের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। অথচ তিনি ছিলেন গভীর ইলমের অধিকারী এক অতল সমুদ্র। তাঁর ইলম, ফিকির ও তাজরেবাকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে যদি মূল্যায়ন করা যেতো এ জাতি অনেক বেশী উপকৃত হতো।

কুরআনপ্রেমিক এ মহা মনীষীর জন্ম বর্তমান চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত শাহারাস্তি উপজেলার দক্ষিণ সূচীপাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। ১৯০১ ইং সনে কোন এক শুক্রবার এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনদার পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবা মুনশী আব্দুল জলীল ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু, সজ্জন, সকলের আস্থাভাজন। তিনিও ছিলেন কুরআনপ্রেমিক। দু’ কন্যা সন্তান জম্মের আঠারো বছর পর বৃদ্ধ বয়সে পুত্র সন্তান বেলায়েতের জম্ম হয়। বাবা তার একমাত্র পুত্র সন্তানের জন্য উপহার হিসাবে রেখে যান কুরআনে কারীমের উর্দূ ভাষায় অনূদিত একটি কপি।

স্বাক্ষরতার হাতে খড়ি নেওয়া হয় প্রথমে আপন চাচার কাছে। তিনিই ছিলেন তাঁর পারিবারিক অভিভাবক। পরে চাচার সাথে ঢাকায় চলে আসেন। চাচার ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন। তাঁর কাছে সামান্য লেখাপড়াও করতেন। দু’ বছর পর এক খালাতো বোনের বাড়ীতে জায়গীর থেকে শিক্ষা জীবন শুরুর চেষ্টা করেন। কিন্তু আল্লাহ পাক তার খাস বান্দাকে হয়ত কারো করুনায় গড়ে তুলবেন না। এজন্য কোথাও কোন প্রকার শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেননি।

একদিন বড় বোন বাবার রেখে যাওয়া কুরআনের সেই কপি দেখিয়ে অশ্রুসজল নয়নে ছোট ভাই বেলায়েতকে বাবার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করে বললেন; ‘তিনি তোমার জন্য কুরআনের এই কপি সংগ্রহ করে রেখে গিয়েছেন। তোমাকে কুরআনে কারীমের শিক্ষা নিতেই হবে।’ কারো করুনার অপেক্ষা না করে সোজা ফরিদগঞ্জের বারোপাইকা মাদরাসায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সেখানেই প্রাইমারী স্তর সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী ইসলামিয়া মাদরাসায় মাধ্যমিক স্তর সমাপ্ত করেন। সর্বশেষ ঢাকার বড় কাটারা আশ্রাফুল উলুম হুসাইনিয়া মাদরাসায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। উন্নত আখলাক ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হওয়াতে ছাত্র জীবনেই শিক্ষকদের নজর কাড়েন। বড় কাটারায় মুজাহিদে আযম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, পীরজী হুজুর, মাওলানা সওয়াবুদ্দীন কাশ্মীরী রহ. এর মত জগত বিখ্যাত আসাতেজাগনের সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হন।

তরুন আলেমে দ্বীন মাওলানা বেলায়েত হুসাইন এর সুপ্ত প্রতিভা, তীক্ষè মেধা, উন্নত আখলাক, গম্ভীর ভাবাবেগ ও দীপ্তময় চেহারা দেখে আল্লামা শামসুল হক ফরীদপুরী রহ. তাঁকে গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত করেন। নিজ তত্বাবধানে রেখে বাস্তব আমলী তারবিয়াতের পর যখন তার মধ্যে পরিপূর্ণ যোগ্যতা অনুধাবন করেন তখন তাঁকে পাঠিয়ে দেন চাঁদপুর জাফরাবাদ হাফেজিয়া মাদরাসার ইহতিমামের দায়িত্বে। দায়িত্ব নেয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই মকতবের মত একটি মাদরাসাকে দাওরা পর্যন্ত উন্নীত করে সুখ্যাতি অর্জন করেন।

কয়েক বছর সেখানে মেহনত করার পর কিছুদিন নির্জন ও নিরিবিলি পরিবেশে থাকার জন্য টাঙ্গাঈল শহরে জমিদার বাড়ির জামে মসজিদে বছরখানেক ইমামতি করেন। তারপর তাঁর শাইখ হযরত হাফেজ্জী হুযূর রাহ. এর নির্দেশে তিনি ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় চলে আসেন। এখানেও তিনি তাঁর মিশন নিয়েই কাজ করবেন জেনে হযরত হাফেজ্জী হুযূর রাহ. মক্তব বিভাগের পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করেন। তখন তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে মক্তব বিভাগকে এত উজ্জ্বল করে তুলেন যে, ফরিদাবাদ মাদরাসা তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে কুরআন শিক্ষার বিরল এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করে।

পঁয়ষট্টি সালে হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ. ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে একটি নতুন জায়গা পেয়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মাদরাসার পুরো দায়িত্ব হযরতের উপর ন্যস্ত করে তিনি হজ্ব ও বাইতুল মুকাদ্দাস সফরে রওয়ানা হয়ে যান। হাফেজ্জী হুজুর রহ. তাঁকে যেখানে রেখে যান সেখানে সকাল বিকাল জোয়ার ভাটা হতো। ভাটার সময় ভিজে বালি মাটির উপর শক্ত বিছানা বিছিয়ে শিশুদেরকে কুরআনের তালীম দিতেন। তিন চার মাসের ভিতর সেখানে একটি টিনের ছাপড়া তুলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম চালিয়ে যান।

চার মাসের সফর শেষে হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ. যখন দেশে ফেরেন, মাদরাসার এই অগ্রগতি দেখে খুবই খুশি হন এবং আপন শাগরেদের জন্য অনেক দুআ করেন। ধীরে ধীরে এই মাদরাসা ‘মাদরাসায়ে নূরিয়া’ নামে অনেক বড় মাদরাসার আকার ধারণ করে। তখন আবশ্যকীয়ভাবেই শিক্ষক সহকর্মীদের সংখ্যা বাড়ে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে নিজের মিশন অনুযায়ী কাজ করা যেতো না। হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ. এর কাছে নূরিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। হাফেজ্জী হুজুর রহ. তাঁকে ছাড়তে রাজী হলেন না। একসময় মাদরাসার সমস্ত হিসাবপত্র বুঝিয়ে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ছুটিতে যাওয়ার মতো করে বিদায় নেন। নূরিয়াতে আর ফিরে আসলেন না। হাফেজ্জী হুজুর রহ. তাঁকে না পেয়ে ব্যাকুল হয়ে উঠেন। মুরীদের জন্য শাইখের এমন ব্যাকুল হওয়া ছিলো অভাবনীয় বিষয়। তাঁর ভাগিনা মুফতি জাফর আহমাদ সাহেবকে শাইখ নির্দেশ দিলেন তাঁকে খুঁজে বের করে আনতে।

খুঁজে পাওয়ার পর হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ. তাঁকে আবার নূরিয়া মাদরাসায় যোগদানের কথা বললে তিনি বিনয়ের সঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন স্থানে নূরানী প্রশিক্ষণের খেদমত করার বিষয়টি তুলে ধরেন। শাইখের অনুমতি ও আদেশ পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেহনত শুরু করেন। শুধু রমযান মাসে মুজাহিদপুর বা কামরাঙ্গীরচরে নূরানী মুআল্লিম প্রশিক্ষণের খেদমত করেন।

দরসিয়াতের তা’লীমেও হযরত ছিলেন একজন সফল শিক্ষক। হযরতের বিখ্যাত শাগরেদদের অন্যতম হলেন, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মুহাদ্দিস, গওহর ডাঙ্গা মাদ্রাসা গোপালগঞ্জ। মুফতি জাফর সাহেব, শাইখুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া মহামায়া মাদ্রাসা চাঁদপুর। মাওলানা রহমতুল্লাহ সাহেব রহ. শাইখুল হাদীস, জামেয়া নূরানিয়া তারাপাশা কিশোরগঞ্জ। এছাড়াও তাঁর হাতে গড়া আরো অনেক বড় বড় মুফতি ও মুহাদ্দিস রয়েছেন।

হযরত রহ. ছাত্র জীবনেই ছিলেন তাহাজ্জুদের পাবন্দ, তাঁর নামাজ ছিল খুশুখুজু ও একাগ্রতায় ভরপুর জীবন্ত নামায, যা ছিলো সাহাবায়ে কেরামের নামাযের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। নাওয়াফেল পড়তেন খুব বেশী। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতের ইহতিমাম করতেন তার চেয়েও বেশী। আযানের পর কাউকে কোন কাজে দেখলে রাগ করতেন। নামাযের প্রস্তুতি নিতে না দেখলে নিজে গিয়ে ধরে এনে জামাতে অংশগ্রহণ করাতেন। অনেক সময় মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত সময়টি নফলেই অতিবাহিত হতো। সময় সুযোগ হলেই নফলে দাঁড়িয়ে যেতেন।

এক সফরে আমরা দশ বারোজন যুবক হযরতের সাথে ছিলাম। রাত আড়াইটায় গন্তব্যস্থলে পৌঁছাই। সবাই যার যার বিছানায় চলে যায়। তিনি তখন নব্বইয়ের বেশী বয়সের বৃদ্ধ। আমরা বিশ ত্রিশ বছরের যুবকরা ক্লান্ত হলেও তিনি ক্লান্ত হলেন না। বিছানায় গেলেন না। নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। ফজরের আযান পর্যন্ত তাহাজ্জুদেই ব্যস্ত ছিলেন। আল্লাহ তাআলার দরবারে খুব কান্নাকাটি করতেন। তবে তাঁর কান্নায় অশ্রু ছিলো। আওয়াজ ছিলোনা। আবেগ অনুভূতি ছিলো। লোক দেখানো রিয়া ছিলোনা।

কুরআনও তেলাওয়াত করতেন খুব বেশী। তেলাওয়াতের সময় তাদাব্বুরও করতেন। মাখারিজ সিফাত আদায় করে তাজবীদের সাথে তেলাওয়াত করতেন। তাড়াহুড়া করতেন না। তেলাওয়াতের সময় কেউ তাঁর কাছে যাওয়াও পছন্দ করতেন না। মনে হয় যেনো প্রেমসুধা পান করে প্রিয়তমের আলিঙ্গনে আবদ্ধ আছেন।

তিনি ছিলেন প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে নববীর সত্যিকারের উত্তরসূরী। ‘ইলমেদ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয’ হাদিসটি তাঁকে চিন্তিত করে তুলেছিল। তিনি ভাবতেন মাদরাসায় যারা দ্বীন শিখতে আসে তাদের সংখ্যা নগন্য, আর যারা মাদরাসায় আসে না তাদের সংখ্যা অসংখ্য অগনিত। সমাজের এ বিশাল জনগোষ্ঠির কথা চিন্তা করে ব্যাথিত ও মর্মাহত হতেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ ও জরুরিয়াতেদ্বীন শিক্ষা করা ছাড়া পরকালে মুক্তির কোন পথ নেই। শতভাগ মুসলমানকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করতে দ্বীন শিক্ষার বিকল্প নেই। এগুলো ভেবে পেরেশান হয়ে পড়তেন।

শত ভাগ মুসলমানের সন্তানদেরকে নাজাতের ফিকির নিয়ে কওমী মাদরাসার তেরো বছরের সফল শিক্ষকতার জীবন ছেড়ে পবিত্র কুরআনের জন্য নিজকে উৎসর্গ করে উম্মতের দরদে দরদী হয়ে মুক্তির পথের সন্ধানে আগে বাড়তে থাকেন। এবার তিনি পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে আশার আলো খুঁজে পেলেন। “অবশ্যই আমি কুরআনকে অতি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহনের জন্য, অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?” এ আয়াত সামনে রেখে মহান রবেব দরবারে আকুতি পেশ করতে থাকেন।

‘হে আল্লাহ! আপনি দয়ার সাগর, করুনার আধার! আপনার কথা চির সত্য, কুরআন অতি সহজ। কিন্তু আমরা সহজ পথটি হারিয়ে ফেলেছি। যে সহজ পথের কথা আপনি বর্ণনা করেছেন সে সহজ পথটি দয়া করে আমাদেরকে দেখিয়ে দিন।’

অশ্রু বিসর্জনের মাধ্যমে ব্যথিত হৃদয়ে রব্বে কারীমের দরবারে নিবেদন পেশ করতে থাকেন। সহজ পথটি খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে নিরলস মেহনতের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন মুসলমানদের সন্তানদের দরদে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছোট শিশুর ন্যায় কাঁদতে থাকতেন। চলার পথে চিন্তার গভীরতায় গন্তব্য হারিয়ে ফেলতেন। রাত গভীর হলেই সিজদায় পড়ে অশ্রু ঝরিয়ে শ্মশ্রু ভিজিয়ে আপন সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে আত্মহারা হয়ে যেতেন। নিজ মিশনে সফলতা অর্জনের জন্যে মাওলার দরবারে আকুল আবেদন করে দোআ করতেন।

দীর্ঘ দিনের কাকুতি মিনতিপূর্ণ দোয়া ও অশ্রু বিসর্জনের ফলে তিনি রহমান রহীমের রহমতে পবিত্র কুরআন শিক্ষার সহজ পদ্ধতি লাভ করেন। যা বর্তমানে ‘নূরানী’ নামে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে মুসলমানদের জন্য জরুরীয়াতে দ্বীন শিক্ষার ও কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত শেখার এক অলৌকিক দুয়ার খুলে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আলহামদুলিল্লাহ, আজ বাংলাদেশের মুসলমানদের নিকট পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত সহজ ও সমাদৃত। নূরানী পদ্ধতিটি গ্রহনীয় ও নন্দিত।

যুগের চাহিদাকে সামনে রেখে জাগতিক শিক্ষার সমম্বয় সাধন করে নূরানী শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো প্রানবন্ত করেছেন। নূরানী মাদরাসার বরকতে হাজারো বেকার যুবকের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, নিরক্ষরতার অভিশাপ হতে জাতির মুক্তির পথ সূগম হয়েছে। কওমী মাদরাসাগুলো যখন ছাত্রের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তখন নূরানী মাদরসাগুলো কওমী মাদরাসায় ছাত্রের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। কওমী মাদরাসায় ছাত্রের অভাব তেমন আর হচ্ছে না।

অনেক বড় বড় ওলামায়ে কেরামও হযরত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের জীবন নূরানীর জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন আমার আব্বাজান হযরত মাওলানা শাহ আলী আফজাল মুজাহিদপুরী রহ.। মাওলানা শফিকুল্লাহ সাহেব চর জব্বার, নোয়াখালী। ক্বারী মোহাম্মদ উল্লাহ রহ. নোয়াখালী। হযরতের চাচাতো ভাই শাইখুল হাদীস মাওলানা রহমত উল্লাহ সাহেব রহ. চাঁদপুর। ক্বারী আব্দুস সোবহান সাহেব রহ. পটুয়াখালী। মাওলানা হুসাইন আহমদ সাহেব কুমিল্লা। নূরানী পদ্ধতির সম্প্রসারনের কাজে যুক্ত হয়েছেন আল্লামা আহমাদ শফী’ হাফিযাহুল্লাহ এর মত বরেন্য ব্যক্তিরাও। তিনি বর্তমানে নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রামের সম্মানিত চেয়ারম্যান। চট্টগ্রামের বড় বড় ওলামায়ে কেরামের বড় একটি অংশও এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন।

পারিবারিক জীবনে হযরত এক স্ত্রী, তিন মেয়ে ও ছয় পুত্র সন্তানের জনক। ছেলেরা সকলেই হাফেজ আলেম। বর্তমানে সবাই নূরানী পদ্ধতির প্রচার প্রসারে নিয়োজিত। হযরত কুরআনের এত বড় আশেক ছিলেন যে, একবার আমাকে বলেন; ‘আমার আহলিয়ার কুরআন তেলাওয়াত শুনেই আমি তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছি।’

বড় সাহেবজাদা হযরত মাওলানা মাসীহুল্লাহ মদীনা শরীফের প্রবাসী হলেও নূরানী বোর্ডের সকল কাজের নিয়মিত তদারকি করেন। খোঁজ খবর রাখেন। দ্বিতীয় সাহেবজাদা মাওলানা কালীমুল্লাহ জামিল হুসাইন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কাজ দেখাশুনা করেন। তৃতীয় সাহেবজাদা মাওলানা আহমাদুল্লাহ মাদানীর দায়িত্ব রয়েছে কাজলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ময়মনসিং বিভাগ। চতুর্থ সাহেবজাদা মাওলানা ফয়জুল্লাহর দায়িত্ব রয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় মুআল্লিমা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পঞ্চম সাহেবজাদা মাওলানা ইসমাঈল বেলায়েত হোসাইনের দায়িত্বে রয়েছে মোহাম্মদপুর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বৃহত্তর নোয়াখালী। ষষ্ট সাহেবজাদা হযরত মাওলানা ইসহাক মামুনের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় নুরানী মাদরাসা ও রংপুর বিভাগ। আলহামদুলিল্লাহ! সকলেই নূরানীর খেদমতকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে পৌঁছানোর জন্য অবিরাম মেহনত করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা সকলের মেহনত কবুল করুন। সকলকে সর্বোত্তম বিনিময় দান করুন।

হযরত আটাশে রমযানুল মুবারক ১৪৩৮ হিজরি মোতাবেক চব্বিশে জুন ২০১৭ ইংরেজি, রোজ শনিবার দুপুর ১২.২৫ মিনিটে ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ ২৮ নং প্রবাল হাউজিং এর তৃতীয় তলায় মাহবুবে হাকীকির আহবানে সাড়া দিয়ে তার সান্নিধ্যে চলে যান। রাতে এশাবাদ বাইতুল মোকাররমে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। দাফন করা হয় গ্রামের বাড়ির মাদরাসার পাশে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার হযরতের রেখে যাওয়া নূরানী সিলেবাসকে প্রাথমিক স্তরে জাতীয় সিলেবাস হিসাবে অনুসরন করলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত জাতি। সকল শিক্ষিত ব্যক্তিই হবে সৎ ও দ্বীনদার নাগরিক। দেশে বয়ে যাবে শান্তির সুবাতাস। মানুষ মৃত্যুর পর খোলা পাবে বেহেশতের দুয়ার। ইহকালে পেয়ে যাবে মুক্তির দ্বার। অবসান হবে ঘোর অমানিষার।

১৯৯৪ ইং সনে ‘নকশে হায়াত’ নাম দিয়ে হযরত রহ. এর জীবনী লিখেছিলাম। হযরতকে শুনানোর সুযোগও হয়েছিলো। যা বার্ষিক ‘নুরানী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো এবং হযরতের সাহেবজাদা মাওলানা ফয়জুল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে।

ছয় বছর বয়স থেকেই হযরতকে দেখতে থাকি। তেহাত্তরে হযরতকে যেমন দেখেছি বিরানব্বই এর শুরুলগ্নে হযরতের সোহবতে এসেও হযরতকে তেমন পেয়েছি। হযরত ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। অলসতা মোটেই পছন্দ করতেন না। সব সময় বলতেন; ‘ওলামায়ে কেরামের মধ্যে দু’টি দুর্বলতার কারণে তারা সফল হতে পারেন না। তা হলো অলসতা ও অহংকার। অন্য যত দুর্বলতা রয়েছে সকল দুর্বলতার মূল কারণও হলো এ দু’টি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সকল দুর্বলতা থেকে হেফাযত করুন।’

হযরতের সকল সাহেবজাদার সাথে রয়েছে আমার গভীর সম্পর্ক। বড় ভাই আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। মেজো ভাই মুজাহিদপুর মাদরাসার মসজিদে কয়েক রমযান তারাবী পড়ান। খাওয়া দাওয়া খেতেন হাজী ইউসুফ সাহেবের বাড়িতে। যা পরবর্তীতে আমার শ্বশুর বাড়ি হয়। আমার দাদী শ্বাশুড়ি তার অনেক খেদমত করতেন। সে কথা আমাকে দেখলে প্রায় উল্লেখ করেন। আহমাদ ভাই ও ফয়েজ ভাই মুজাহিদপুর মাদরাসায় পড়াশুনা করেছেন। সেই সুবাদে উভয়জন আমার সাথী ও বাল্যবন্ধু। ইসমাঈল সাহেব ও মামুন সাহেব মোহাম্মদপুরে আমার কাছে দরসিয়াত পড়েন। তাঁরা উভয়জন উস্তাদ হিসেবে আমাকে খুব মান্য করেন। তা ছাড়া হযরতের নাতি আতাউল্লাহ, হাবীবুল্লাহ, খলীলুল্লাহও আমার শাগরেদ।

হযরত ও হযরতের সাহেবজাদাদের যে গুনটি আমার কাছে আশ্চর্য লাগে তা হলো তাদের মনের উদারতা। সবারই মন অনেক বড়। কেউ কারো কাছে কিছু চায়না। সবাই দান করতে ও মেহমানদারী করতে ভালোবাসে। আমার উপর সব ভাইয়ের অনেক এহসান আছে। যা উল্লেখ না করলেই তারা খুশী হন।

স্বাধীনতার পর থেকে ২০১২ এর মার্চে আব্বাজান রহ. এর মৃত্যু পর্যন্ত হযরত মুজাহিদপুর মাদরাসার মজলিসের শূরার সভাপতি ছিলেন। তার দিক নির্দেশনাতেই মুজাহিদপুর মাদরাসা পরিচালিত হতো। যার কারনে বছরে দু’ চার বার কখনো আরো অধিকবার আমাদের বাসায় হযরতের আসা যাওয়া হতো। আম্মাজান রহ. হযরতের রুচি বুঝতেন। সে অনুযায়ী রান্নাবান্না করতেন। আমার আহলিয়াও তাঁর পছন্দসই খাবার প্রস্তত করে খাওয়াতো। হযরত আমাদের বাসার রান্নাবান্নারও প্রশংসা করতেন। তাঁর ও তাঁর পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক পারিবারিক সম্পর্কের মতই ছিলো। এখনো আছে। পারিবারিক বিষয়ে হযরতের আদেশ পালন করতে আব্বাজান রহ. ও আমরা কখনোই পিছপা হতাম না।

আব্বাজান রহ. এর মৃত্যুর পর হযরত আরো ছয় সাত বছর জীবিত ছিলেন। এ সময়েও পারিবারিক বিষয়ে আমি হযরতের সাথে পরামর্শ করে চলতাম। হযরত আমার খোঁজ খবর নিতেন। তাঁর সাথে বছরে দু’ চার বার সাক্ষাত না করলে রাগ করতেন। বলতেন; ‘মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে না চললে শয়তানের খপ্পরে পড়ার আশংকা থাকে। তাই পরামর্শ না করে কোন সিদ্ধান্ত নিবে না।’ আমিও হযরতের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতাম।

আমার যত আকাবির রয়েছেন তাদের মধ্যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশী ইহসান হযরতই করেছেন। ইলমী, ফিকরী ইহসান ছাড়াও আমার উপর হযরতের অনেক আর্থিক ইহসানও রয়েছে। এ সকল ইহসানের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের যোগ্যতাও আমার নেই। দোআ করি আল্লাহ তাআলা তাকে এ সকল কিছুর সর্বোত্তম বিনিময় দান করুন। আমাদেরকে তাঁর মিশনের কাজ এগিয়ে নিয়ে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানোর তাওফীক দান করুন।

দরসে নেযামীর উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে ‘মাদানী নেসাব’ নামে যে নেসাব ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে তার অনেকগুলো সূত্রও হযরতের আফকার থেকে নেওয়া। দরসিয়াতের সংস্কারকৃত আরেক নেসাব ‘সাকাফী নেসাব’ এর স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তিনিই। আমাকে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত নিজের দরবারে রেখে উক্ত নেসাব প্রণয়নের দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন। মুজাহিদপুর থাকতেও হযরত আমাকে ছাড়েননি। সেখানে গিয়েও আমার রাহনূমায়ী করতেন। মারকাযুস সাকাফার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এখানেও আসতেন। আমার কাজকর্ম দেখতেন। ভালো কিছু দেখলে আনন্দ প্রকাশ করতেন। দোআ করতেন। ভূলত্রুটি কিছু দেখলে সতর্ক করতেন। সংশোধন করে দিতেন। ভুলের মন্দ দিক থেকে যেনো মাহফুয থাকতে পারি তার জন্য দোআ করতেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ