আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আইনের মাধ্যমে যদি মুসলমানদের মদ খাওয়ার অনুমোদন দিয়ে থাকেন, তাহলে সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন মো. হারুনুর রশীদ। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
চিত্রনায়িকা পরী মণির ঘটনার সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু আজ পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় বলেন, কয়েক দিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। উত্তরা বোট ক্লাবে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই বোট ক্লাব কে করেছে? এই ক্লাবের সদস্য কারা হন? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হন? আমরা তো সারা জীবনে এত টাকা ইনকামও করি না।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাজধানীর গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ কয়েকটি ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। অথচ এসব ক্লাবে গ্যালন–গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এতো মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। এত টাকা কোথা থেকে আসে? গ্রামে কেউ মদ খেলে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে, কিন্তু এসব ক্লাবে মদ খাওয়ার পরও পুলিশ কোনো গ্রেপ্তার অভিযান চালায়নি।
চুন্নুর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ফ্লোর নিয়ে বলেন, এটা তো বোট ক্লাব হয়েছে, কিন্তু জিয়াউর রহমান তো স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। মদ-জুয়া বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জিয়াউর রহমান এ মদ-জুয়ার লাইসেন্স দিছে। তিনি ছেলেদের নিয়ে, মেয়েদের নিয়ে স্টিমার ক্লাব করে নৌযাত্রা করেছিলেন। যেটা ছিল হিজবুল বাহার, এটার নাম হয়তো সবাই জানেন। সুতরাং অপরাধ যেখান দিয়ে হয়েছে, সেখান থেকে তাদের আগে বিচার হওয়া উচিত। বিদেশিদের কথা বলে মদের অনুমোদন দেওয়া এবং ইসলামের কথা বলে যারা অপকর্ম করে, তারাই এ অপরাধ করেছিল। সুতরাং মাননীয় স্পিকার, আমার কথা হলো অপরাধীদের ধরতে হলে ওইখান দিয়েই ধরতে হবে। ওই খানে কারা অপরাধ করেছে? আমাদের সরকার সব সময় এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান করে।
এ সময় শেখ সেলিমের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ স্পিকারের কাছ থেকে ফ্লোর নিয়ে বলেন, বোটক্লাব ও মদ নিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আজকে আমাদের সমাজের বাস্তবচিত্র ও হাহাকার। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। অথচ মাননীয় সিনিয়র সদস্য (শেখ সেলিম) বিষয়টিকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে কোথায় গেলেন? তিনি ৪০ বছর আগে টেনে নিয়ে বললেন, ওই সময়ে মদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে জিয়াউর রহমান নিয়ন্ত্রিতভাবে মদের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। কেননা আমাদের দেশে ফরেইন লোকজনও থাকে। অন্যান্য ধর্ম যেমন হিন্দু, সাওঁতাল, ডোম এবং যারা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের কাজ করে তাদের মদ খেতে হয়। সুতরাং যাদের জন্য মদের প্রয়োজন হয়, তাদের আইনের বৈধতা দেওয়ার জন্যই জিয়াউর রহমান আইন করেছিলেন। কোনো মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।
হারুনুর রশীদ বলেন, আমি বলব, রাজধানীর গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকায় যেসব হোটেল, পার্টি, ক্লাব স্থাপিত হয়েছে; এসব এলাকায় মদ, জুয়া, সিসা বিক্রি করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডে কোনো মন্ত্রী-এমপি জড়িত নন, বরং এসব জায়গা থেকে থানার সরকারি কর্মকর্তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন।
‘সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, তিনি কোনো দলের নন, তিনি রাষ্ট্রের। তিনি যেন এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। অপ্রয়োজনীয়ভাবে ৪০ বছর আগের কথা বলে এসব জিনিষকে ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব জিনিস অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি।’ যোগ করেন হারুনুর রশীদ।
এনটি