মুফতি আব্দুর রহিম: হাদীসের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা করার পর আজ আমরা করব রাবী বা হাদীস বর্ণনাকারী নিয়ে আলোচনা। রাবী সাধারণত দশটি কারণে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন।
১. الكذب فى الحديث النبوي অর্থাৎ নবী করীম সা. এর নামে জাল হাদীস বর্ণনা করা। এমন বর্ণনাকারীর হাদীসকে الحديث الموضوع বলে।
২. التهمة بالكذب অর্থাৎ মানুষের সাথে মিথ্যা কথা বলা বা একক রাবীর বর্ণিত হাদীস শরীয়তের প্রসিদ্ধ নিতিমালা বা প্রসিদ্ধ কোন আমল বা কিয়াসের খেলাফ হওয়া। এ জাতিয় বর্ণনাকারীর হাদীসকে হাদীসে الحديث المتروك বলে।
৩. فحش الغلط অর্থাৎ রাবীর রেওয়ায়েতে প্রচুর ভুল হওয়া।
৪. كثرة الغفلة অর্থাৎ রাবীর উদাসীনতা বেশি হওয়া।
৫. الفسق অর্থাৎ রাবী কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া বা সগীরা গুনাহ্তে বারংবার লিপ্ত হওয়া। এ তিন প্রকারের বর্ণকারীর হাদীসকে الحديث المنكر বলে।
৬. الوهم অর্থাৎ রাাবী সংশয় ও দোদুল্যমানতার সাথে হাদীস বর্ণনা করা। এ জাতিয় বর্ণকারীর হাদীসকে الحديث المعلَّل বলে।
৭. مخالفة الثقاة অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য রাবীর বিরোধিতা করা। এই বিরোধিতা কয়েকভাবে হয়।
ক. সনদের ধারাবাহিকতায় (আগ-পিছের) পরিবর্তন সাধনের কারণে বিরোধিতা। এজাতিয় বর্ণনাকরীর হাদীসকে الحديث المدرج বলে। হাদীসে مدرج দুই প্রকার :
১. مدرج الإسناد : সনদের বর্ণনায় (কম বা বেশি করে) পরিবর্তন করার কারণে যে হাদীসের রাবী নির্ভরযোগ্য রাবীগণের বিরোধিতা করেন, সেই হাদীসকে مدرج الإسناد বলে।
২. مدرج المتن : যে হাদীসের মতনের মাঝে রাসূলুল্লাহ সা. ব্যতীত অন্যের কালাম বৃদ্ধি করে নির্ভরযোগ্য রাবীগণের বিরোধিতা করা হয়, তাকে مدرج المتن বলে।
খ. নির্ভরযোগ্য রাবীদের বিরোধিত যদি নামের মাঝে আগ-পিছ করার দিক দিয়ে হয়, তবে তাকে المقلوب বলে।
গ. যদি বিরোধিতা সনদের মাঝে রাবী বৃদ্ধি পাবার কারণে হয়, তবে তাকে المزيد في متصل السند বলে।
ঘ. যদি এক রাবীর স্থলে অন্য রাবীর নাম আসার করণে বিরোধিতা হয় এবং একটির উপর অন্যটিকে প্রাধান্য দেয়ার কোন কারণ বিদ্যমান না থাকে তবে তাকে المضطرب বলে।
ঙ. যদি লেখার ধরণ ঠিক রেখে এক বা একাধিক অক্ষর পরিবর্তনের কারণে বিরোধিতা হয়; তবে নুকতার দিক দিয়ে এ পরিবর্তন হলে তাকে المصحَّف বলে। আর আকৃতির দিক দিয়ে পরিবর্তন হলে তাকে المحرَّف বলে।
৮. الجهالة অর্থাৎ রাবীর সত্ত্ব বা অবস্থা অজানা হওয়া। এ জাতীয় রাবীর বর্ণনাকে الحديث المبهم বলে। রাবী তিন কারণে অপরিচিত হয়ে থাকে।
১. রাবী নাম, কুনিয়্যাত, উপাদি, গুণ, পেশা, দক্ষতা ও বংশ ইত্যাদি বিভিন্ন গুণের অধিকারী। তিনি হয়ত কোন এক দিক দিয়ে পরিচিত। কিন্তু কোথাও কারণ বশত তাকে এমন পরিচয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে তিনি পরিচিত নন। ফলে ধারণা করা হতে পারে তিনি ভিন্ন ব্যক্তি।
২. রাবী খুব স্বল্প সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেন। যেমন শুধু একটি; ফলে তার নিকট থেকে তেমন বেশি কেউ হাদীস শিক্ষা করেনি।
৩. রাবী হতে বর্ণনাকারী সংখ্যা মাত্র একজন। আবার সেই এক ব্যক্তিও সংক্ষেপের জন্য তার শায়েখের নাম উল্লেখ করেন না। ফলে তিনি অপরিচিত থেকে যান।
৯. البدعة অর্থাৎ রাবী বিদায়াতী হওয়া।
১০. سوء الحفظ অর্থাৎ রাবীর স্মরণশক্তি এত দুর্বল হওয়া যে, তার ভুলের চেয়ে সঠিকের সংখ্যা কম। এমনটি রাবীর সাধারণ অবস্থা হলে তার বর্ণিত হাদীসকে الشاذ বলে। আর যদি তার এমন অবস্থা বাধ্যর্ক্য, দৃষ্টিশক্তি রহিত হওয়া, খাতাপত্র পুড়ে যাওয়া কিংবা অন্য কোন ভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে আপতিত হয়, তবে তাকে المختلط বলে।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমদ মাদরাসা মানিকনগর, ঢাকা।