সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬


মহিউদ্দিন আকবর: একজন মহৎ প্রাণ আধুনিক দরবেশকবি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুমন রায়হান
ছড়াকার ও গল্পকার।।

২০০৪ সালের শেষ দিকের কথা। ঢাকার প্রাণবন্ত সব সাহিত্য সভায় যাওয়া আসা শুরু করেছি মাত্র। অধিকাংশ সাহিত্য সভার প্রধান আলোচক হিসাবে থাকতেন হয়তো হাসান আলীম, নয়তো মহিউদ্দিন আকবর ভাই। আহা কী সমৃদ্ধ প্রাণবন্ত সাহিত্য সভাই না হত তখন। পাঁচ, ছয়, সাত টানা তিন বছর ঢাকার বিভিন্ন সাহিত্যসভায় অংশ নিয়েছি- লেখালেখির এক স্বপ্নময় আবেশে।আমার টেবিলের সামনে একটি সাহিত্য সভার তালিকা লাগানো ছিল। অধিকাংশ ছিল মাসিক। ম্যাজিক লণ্ঠন ছিল সাপ্তাহিক, শুক্রবারে। এখনও তাই আছে।

মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে কখন একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে- মনে নেই। একজন শিক্ষক, অভিভাবক ও বন্ধুর ভূমিকায় ছিলেন তিনি। সবাই মহি ভাই ডাকত। সাম্প্রতিক সময়ে তরুন লেখকগণ ডাকতেন দাদুমণি। আমি ডাকতাম মহিউদ্দিন ভাই।

২০০৮ থেকে তের- পাঁচ বছরের বিরহ। সাহিত্য অঙ্গনে আমার বিরতি। পড়াশোনা, চাকরী ও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারো সাথে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। একুশে বইমেলা-১৩ তে মেঘের মেয়ে বৃষ্টি প্রকাশিত হয়। যোগাযোগ শুরু হয় প্রিয় সব কবি সাহিত্যিকদের সাথে। জানুয়ারী - ১৪ তে একটুখানি খোঁচা পান্ডুলিপি নিয়ে কথা হয় কবি ও প্রকাশক মঈন মুরসালিন ভাইয়ের সাথে। পান্ডুলিপি পাঠিয়ে দেয়া হয় মহিউদ্দিন ভাইয়ের কাছে। তিনি চমৎকার ইলাশ্টেশন করেন। আমার ছড়ার ভূয়শী প্রশংসা করেন মঈন ভাইয়ের কাছে। আমি সব শুনে একটি মূল্যায়ন লেখি দিতে অনুরোধ করি ফ্লাপের জন্য। অনুরোধ রেখেছিলেন তিনি। মন্তব্য করেছিলেন- বিপদগামির চোখ রাঙানিকে তোয়াক্কা না করে, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর ইনসাফপূর্ণ চিত্রায়নে তিনি যে একটুও দিকভ্রান্ত হননি- তার ছড়ার বই একটুখানি খোঁচা তারই উজ্জ্বল প্রমাণ।

একদিন একটি উপহার (শার্ট) নিয়ে হাজির হলাম সেঞ্চুরী আর্কেড মঈন ভাইয়ের অফিসে। মঈন ভাই বললেন, উপহারটি আপনি নিজ হাতে দিলে তিনি আরো খুশি হবেন।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেখা। কথা হল অনেক বিষয় নিয়ে। তারপর থেকে সম্পর্কটি শ্রদ্ধা আর স্নেহ মিশ্রিত ভালবাসায় রুপ নেয়।আমার লেখা নিয়ে আলোচনা শুরু করতেন এভাবে- সুমন রায়হান আমার প্রিয়মুখ, ভাল মানুষ- তাকে আমি স্নেহ করি।

মহিউদ্দিন আকবর ভাই একজন সব্যসাচি লেখক। আধ্যাত্নিক ও ইসলামী চেতনার অন্যতম ধারক ও বাহক। মাঝে মাঝে তার আধ্যাত্নিক কবিতা পরিষদের জন্য কবিতা চাইতেন। সাহিত্যে নিবেদিত এমন মহৎপ্রাণ লেখক সংগঠক বাংলা সাহিত্যে বিরল। দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ তাকে ভালবাসতেন। এত বড় সব্যসাচি লেখক নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন ফকির, দুনিয়ার একজন মুসাফির হিসাবে। মহি ফকিরের সহি কথা শিরোনামে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেন নিয়মিত। তার অমায়িক মধুর বিনয়ী আচরণে মানুষ এতটাই মুগ্ধ হত যে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগত না।

দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকটি হয়েছিল আমাদের চোখের সামনে। কোরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি মাসিক সাহিত্য সভায়, ২০১৯ এ। ডা. মতিয়ার রহমান স্যার তার হাসপাতালেই প্রাথমিক ও জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়ে, পাঠিয়েছিলেন জাতীয় হার্ট ফাউন্ডশনে। বেঁচে ফিরে বার বার আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করতেন। বলতেন, আল্লাহ আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন।

আল্লাহ তার কল্যানকর কাজগুলো কবুল করুন। ভুল-ত্রুটি মাফ করে জান্নাতের মেহমান করুন। আমীন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ